অধ্যায় ২
হাসেম খান একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তিনি কর্মীদের দক্ষতানুযায়ী মূল্যায়ন করেন না। ফলে তাদের মধ্যে নিয়ম পালনের আগ্রহ কম এবং প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালনে অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে স্বত্বাধিকারী উত্তরণ চান। এ জন্য তিনি কর্মীদের একত্র করে লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ভাবছেন।
প্রশ্ন
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?
খ. হেনরি ফেয়লকে আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক কেন বলা হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. কোন নীতির অবর্তমানে হাসেম খানসাহেবের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখা দিচ্ছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনে হাসেম খানকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে? মতামত দাও।
উত্তর
ক. ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গতানুগাতিকতা পরিহার করে বিজ্ঞান বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণের আলোকে সংঘবদ্ধ জ্ঞানের প্রয়োগকেই বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা বলে।
খ. তুরস্কে জন্মগ্রহণকারী ও ফ্রান্সের অধিবাসী খনি প্রকৌশলী হেনরি ফেয়ল আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হিসেবে ইতিহাস-খ্যাত। তিনি ব্যবস্থাপনাকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কাজসংবলিত এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, সর্বজনীনভাবে প্রয়োগযোগ্য ও পাঠযোগ্য শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। জ্ঞানের একটা আলাদা ও পূর্ণাঙ্গ শাখা হিসেবে উপস্থাপন ও প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা রাখায় হেনরি ফেয়লকে আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয়ে থাকে।
গ. শৃঙ্খলার নীতির অবর্তমানে হাসেম খানের প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখা দিচ্ছে।
যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য স্থানে এবং সঠিক বস্তুকে সঠিক স্থানে স্থাপনের নীতিকেই শৃঙ্খলার নীতি বলা হয়। শৃঙ্খলা নীতির মূল বক্তব্য হলো, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা লাভ করবে। এর ফলে সব মানবীয় উপাদান সুশৃঙ্খলভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে সমর্থ হয়।
উদ্দীপকে হাসেম খান কর্মীদের দক্ষতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করেন না। ফলে কর্মীদের মধ্যে নিয়ম পালনে আগ্রহ কম এবং প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালনে অনীহা সৃষ্টি হয়। তিনি কর্মীদের দক্ষতা অনুযায়ী মূল্যায়ন না করার ফলে শৃঙ্খলার নীতি ভঙ্গ করেছেন। শৃঙ্খলার নীতির ফলে কর্মীদের দক্ষতা, যোগ্যতা বা মেধা ইত্যাদি মূল্যায়ন করা হয়। তাই বলা যায়, শৃঙ্খলার নীতির অবর্তমানে কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব পালনে অনীহা সৃষ্টি হয়।
ঘ. প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনে হাসেম খানকে ‘একতাই বল’ নীতি অনুসরণ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সব ব্যক্তি, বিভাগ ও উপবিভাগকে সর্বাবস্থায় ঐক্যবদ্ধ থেকে পারস্পরিক সহযোগিতায় কর্মকাণ্ড পরিচালনার নীতিকেই একতাই বল নীতি বলে। প্রতিষ্ঠানে প্রতিটা বিভাগ ও উপবিভাগের অধীন ব্যক্তিবর্গ যদি বিভাগীয় লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্ব-স্ব ক্ষেত্রে পরস্পর ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে সহজেই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।
উদ্দীপকে হাসেম খান কর্মীদের একত্র করে লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যাতে করে প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরস্পর ঐক্যবদ্ধ থাকলে এবং একতালে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে সহজেই প্রতিষ্ঠান মূল লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। একতাই বল নীতির ফলে সব ব্যক্তি, বিভাগ ও উপবিভাগ পারস্পরিক সহযোগিতায় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। একটি প্রবাদ আছে,‘একতাই বল’, অর্থাৎ একতা থাকলে যেকোনো কঠিন কাজ সহজেই সমাধান করা যায়।
তাই বলা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনের জন্য হাসেম খানকে একতাই বল নীতি অনুসরণ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।