Thank you for trying Sticky AMP!!

৪২ হাজার শিক্ষার্থীর ডিভাইস নেই

  • দেশে মোট সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬টি

  • তথ্য চাওয়া হয়েছে ৩৯টির, যেগুলোর মোট শিক্ষার্থী ৩,০৩,৯৮৬

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮,৫৫৬ শিক্ষার্থীর তালিকা দিয়েছে। যাঁদের প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই।

দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ হাজার ৯৯৭ জন শিক্ষার্থী অসচ্ছল, যাঁদের অনলাইনে ক্লাস করার মতো প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই কিংবা ইন্টারনেট খরচ চালানোর মতো সুযোগ নেই। যার গড় হার প্রায় ১৪ শতাংশ। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন ক্লাস পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের এই তালিকা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। করোনাকালে অনলাইনে ক্লাসের জন্য যাঁদের প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই, তাঁদের বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করেছে ইউজিসি। এর আগে ইউজিসির এক জরিপে দেখা গিয়েছিল, গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনলাইনে ক্লাস করার মতো ডিভাইস নেই।

অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইউজিসির সদস্য দিল আফরোজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের তথ্যগুলো এখন যাচাই করা হচ্ছে, সেগুলো তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। যাতে এসব শিক্ষার্থীকে ডিভাইস কিনতে বিনা সুদে ঋণ দেওয়া যায়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট খরচ সহজলভ্য করতেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি আছে। অনিশ্চিত এই পরিস্থিতিতে গত ২৫ জুন ইউজিসির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এক সভায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর জুলাই থেকে দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু ক্লাস শুরুর পর শিক্ষকেরা দেখতে পান, বিভাগভেদে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন না।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য বলছে, ডিভাইস ও ইন্টারনেট খরচের সমস্যার কারণেই মূলত শিক্ষার্থীদের বড় অংশ ক্লাসে যোগ দিচ্ছেন না। অনেকের অনাগ্রহও আছে। পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা অনেক শিক্ষার্থী ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যার কারণে ঠিকমতো ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। এ ছাড়া অনলাইনে কেবল ক্লাস হচ্ছে, পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেশনজট হচ্ছেই।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য বলছে, ডিভাইস ও ইন্টারনেট খরচের সমস্যার কারণেই মূলত শিক্ষার্থীদের বড় অংশ ক্লাসে যোগ দিচ্ছেন না। অনেকের অনাগ্রহও আছে। পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা অনেক শিক্ষার্থী ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যার কারণে ঠিকমতো ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না।

এমন পরিস্থিতিতে যেসব শিক্ষার্থীর ডিভাইস ও ইন্টারনেট খরচের সামর্থ্য নেই, তাঁদের তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় ইউজিসি। এ জন্য যেসব শিক্ষার্থীর ডিভাইস কেনার আর্থিক সক্ষমতা নেই, সেসব শিক্ষার্থীর নির্ভুল তালিকা গত ২৫ আগস্টের মধ্যে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলেছিল ইউজিসি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই তালিকা দেয়। প্রথমে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তাতে গড়ে প্রায় ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর এই সুবিধা নেই বলে তথ্য এসেছিল। পরে অতি প্রয়োজন বিবেচনায় এই হার ১৫ শতাংশের মধ্যে করে তালিকাটি সংশোধন করে দিতে বলে ইউজিসি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সংশোধিত তালিকা পাঠায়।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ১৫ শতাংশ বা তার বেশি অসচ্ছল শিক্ষার্থীর তালিকা দিয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয় ১০টি। এগুলোর রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনায় অবস্থিত শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এ ছাড়া ১০ শতাংশের বেশি এবং ১৫ শতাংশের কম অসচ্ছল শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় আছে ২০টি। আর ১০ শতাংশের কম অসচ্ছল শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া হয়েছে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালক মো. ইলিয়াছ হোসেন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৪৩ হাজার। এর মধ্যে আট হাজার ৫৫৬ জনের তালিকা দিয়েছেন তাঁরা। যাঁদের ওই সুবিধা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র রবিউল হাসানের অনলাইনে ক্লাস করার মতো স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ কম্পিউটার নেই। সামর্থ্যও নেই। তিনি বললেন, এ জন্য শুরুর দিকে অন্যের মোবাইলে অনলাইনে ক্লাস করলেও পরে আর নিয়মিত করতে পারেননি।

বর্তমানে সারা দেশে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ইউজিসির একজন কর্মকর্তা জানান, এগুলোর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য তাঁদের উদ্দেশ্য অনুযায়ী প্রয়োজন নেই। বাকি ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয় অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের তালিকা দিয়েছে। সচ্ছল ও অসচ্ছল মিলিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী তিন লাখ তিন হাজার ৯৮৬ জন।

অনলাইন ক্লাস কার্যকর করতে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে ক্লাস করার মতো যেসব শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই, তাঁদের সেটি দেওয়া উচিত। এ জন্য সুদমুক্ত ঋণের পাশাপাশি যাঁদের পরিবারের আয় একেবারেই কম, তাঁদের প্রণোদনা দেওয়া উচিত। শিক্ষকদেরও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।

অনলাইনে ক্লাস করার মতো যেসব শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই, তাঁদের সেটি দেওয়া উচিত।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান