
দেশের মেধা, মনন, সৃজনশীলতার প্রতীক বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৪৮তম বার্ষিক সভা আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে একাডেমির প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রয়াত গুণীজনের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক ও রাজনৈতিক চিন্তক আবুল কাসেম ফজুলল হক।
মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। একাডেমির সচিব সেলিম রেজা ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট অবহিত করেন। এরপর সদস্যরা প্রতিবেদন ও বাজেটের ওপর আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তরে অংশ নেন।
আলোচনা পর্বের পরে বাংলা একাডেমি পরিচালিত আটটি পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ বছর একটি যৌথ পুরস্কারসহ মোট ৯ জন এ পুরস্কার পেয়েছেন। ১৮ ডিসেম্বর এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ও মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন।
সভাপতির বক্তব্যে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বাংলা একাডেমি এ বছর ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠার সাত দশক পূর্ণ করেছে। সত্তর বছরের পথপরিক্রমায় একাডেমি অসাধারণ সব গবেষণকর্ম সম্পন্ন করেছে। সেই সঙ্গে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চাঞ্চল্যকে ধারণ করে ভবিষ্যতের স্বদেশকল্পনা নির্মাণ করেছে। একাডেমিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের রয়েছে বিপুল আশা। তবে আমাদের সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সবার মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলা একাডেমিকে অধিকতর জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, দেশের বিদ্যমান বাস্তবতা মাথায় রেখে সীমিত সাধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার কাজ করছে বাংলা একাডেমি। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক গবেষণা প্রকল্প ও বৃত্তির মাধ্যমে সারা দেশের সাম্প্রতিক গবেষণা-মেধাকে মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একাডেমিতে লেখকদের জন্য স্বতন্ত্র কর্নার প্রতিষ্ঠা, গ্রন্থাগারের ডিজিটাইজেশনসহ অবকাঠামো ও প্রকাশনাগত ক্ষেত্রে বিপুল গুণগত পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। সবার প্রচেষ্টায় বাংলা একাডেমি সত্যিকার অর্থেই জাতির মননের প্রতীক-প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পুরস্কার ও ফেলোশিপ
আজ বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের সভায় একাডেমি পরিচালিত ৮টি সাহিত্য পুরস্কার ও ৭টি ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে।
এ বছর অনূর্ধ্ব ৪৯ বছর বয়সী লেখকদের বিভাগে রাবেয়া খাতুন কথাসাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন আনিসুর রহমান। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সিসিফাস শ্রম’-এর জন্য তিনি এক লাখ টাকা অর্থমূল্যের এই পুরস্কার পেয়েছেন। যৌথভাবে এ পুরস্কারের আরেকজন বিজয়ী হলেন কথাসাহিত্যিক সুব্রত বড়ুয়া।
এ ছাড়া বাংলা একাডেমি পরিচালিত অন্য পুরস্কারগুলোর মধ্যে ভাষাভিত্তিক গবেষণার মূল্যায়নের জন্য সাহিত্যিক মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক মনসুর মুসা। প্রকৃতি ও বিজ্ঞানচর্চায় সামগ্রিক অবদানের জন্য মেহের কবীর বিজ্ঞান সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন খসরু চৌধুরী। মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার পেয়েছেন কবি সানাউল হক খান।
বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবন ও সাহিত্যবিষয়ক গবেষণার জন্য সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন হাফিজ রশিদ খান।
অভিনয়, নাট্যনির্দেশনা ও সংগঠক হিসেবে সামগ্রিক অবদানের জন্য অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার পেয়েছেন অভিনেতা ও নির্দেশক তারিক আনাম খান।
অনুবাদ সাহিত্যে আবু রুশ্দ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন শিবব্রত বর্মন। হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার পেয়েছেন সফিক ইসলাম।
এ ছাড়া সভায় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। ফেলোশিপপ্রাপ্তরা হচ্ছেন—লিপ গাইন (সাংবাদিকতা), মাহবুব উল্লাহ (অর্থনীতি), সমর মজুমদার (শিল্পকলা), পারভীন হাসান (ইতিহাস) মেরিনা তাবাসসুম (শিল্পকলা), মতেন্দ্র মানখিন (সাহিত্য) এবং বিজন কুমার শীল (বিজ্ঞান)।