
প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা যারা ২০২৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে, তাদের পরীক্ষা পূর্ণ সিলেবাসে হবে। তাই তোমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ, যত আগে থেকে তোমরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবে, তত তাড়াতাড়ি সিলেবাসটি শেষ করতে পারবে। রিভিশন দেওয়ারও সময় পাবে বেশি। এতে তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়বে, পরীক্ষাও ভালো হবে। পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষাটি শিক্ষার্থীদের জন্য বোঝা নয়; বরং ভবিষ্যৎ জীবনের সফলতার সোপান হয়ে উঠবে।
১. জেনে নাও পরীক্ষার ধরন
এরই মধ্যে তোমরা জেনে গেছ, তোমাদের পরীক্ষার ধরন পূর্ণ সিলেবাসে, পূর্ণ সময়ে ও পূর্ণ নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য পূর্ণ সময় তিন ঘণ্টা এবং প্রতিটি বিষয়ের পূর্ণ নম্বরেই মূল্যায়ন হবে।
এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতির সুযোগ। যারা ২০২৪ সালে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছ, তাদের এখন থেকেই পূর্ণ সিলেবাসে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা উচিত। এতে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
২. সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন
সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বাদ পড়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তুর পূর্ণ ধারণা পায় না। পূর্ণ সিলেবাস পড়লে তারা প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত হয়। পূর্ণ সিলেবাস মানে হলো পুরো বই পড়তে হবে এবং প্রতিটি অধ্যায়ের ওপর ভিত্তি করে প্রশ্ন আসতে পারে। যখন পুরো বই থেকে প্রশ্ন আসে, তখন শুধু মুখস্থবিদ্যা দিয়ে পাস করা সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীদের বোঝাপড়া ও বিশ্লেষণক্ষমতা কাজে লাগাতে হয়।
৩. কেমনভাবে তৈরি হবে শিক্ষার্থীরা
পরীক্ষা কি শুধু দেওয়ার জন্য দেওয়া? নিশ্চয়ই তা নয়। পরীক্ষা দিতে হবে খুব ভালোভাবে। সে জন্য ভালো প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। পাঠ্যবইয়ের পুরো পাঠ বুঝে পড়তে হবে। ২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় সফল হতে চাইলে এখন থেকেই পরিকল্পিত প্রস্তুতি শুরু করা জরুরি। যেহেতু পরীক্ষা হবে পূর্ণ সিলেবাসে, পূর্ণ সময় ও পূর্ণ নম্বরে, তাই সময় ব্যবস্থাপনা, অধ্যয়নকৌশল ও মানসিক প্রস্তুতি—সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি বিষয়ের সম্পূর্ণ সিলেবাস সংগ্রহ করো। অধ্যায়ভিত্তিক ‘বিষয় তালিকা’ তৈরি করো, কোন অধ্যায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা চিহ্নিত করো, গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দাগিয়ে বা আন্ডারলাইন করে রাখতে পারো। এতে খুব তাড়াতাড়ি গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো চোখে পড়বে। আর পরে পরীক্ষার আগে রিভিশন দিতে গেলেও সহজ হবে। সময়মতো রিভিশন করো, যেন চাপ না পড়ে।
৪. শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ
বিশাল সিলেবাস শেষ করার জন্য শিক্ষার্থীদের সারা দিন অনেক সময় পড়াশোনা করতে হবে। এতে তারা মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আত্মবিশ্বাস হারায়। শিক্ষকের অভাব ও অনিয়মিত ক্লাস, ভালো শিক্ষক, কোচিং ও ইন্টারনেট–সুবিধায় গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। ফলে গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণ সিলেবাস আরও কঠিন। শিক্ষার্থীরা গাইড বই ও কোচিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এতে তাদের সৃজনশীলতা কমে যায়।
৫. কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি
সময়মতো ক্লাস শুরু ও শেষ করা, দক্ষ শিক্ষক ছাড়া পূর্ণ সিলেবাস পড়ানো সম্ভব নয়। অনলাইন ক্লাস, ভিডিও লেকচার ও প্রশ্নব্যাংক শিক্ষার্থীদের জন্য সহজলভ্য করা। পরীক্ষার ধরন পরিবর্তন, মানসিক স্বাস্থ্যসহায়তা, শিক্ষার্থীদের চাপ কমাতে কাউন্সেলিং ও প্রেরণাদায়ী কার্যক্রম চালু করা দরকার।
৬. রুটিন মেনে পড়াশোনা
একজন শিক্ষার্থীর জীবনে উন্নতি করতে হলে ‘পড়ার মধ্যে শৃঙ্খলা’ বড় ভূমিকা রাখে। সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্য দিয়ে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। সময়ের ব্যবধানে, একই বিষয় বারবার পড়ো। জটিল বিষয়গুলো চিত্র আকারে সাজাও, যাতে সহজে বোঝা যায় এবং মনে থাকে। নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করো। সাপ্তাহিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে অধ্যায় শেষ করো। প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক দিন শুধু রিভিশন ও বিগত বছরের প্রশ্ন অনুশীলন করো। এ জন্য দরকার একটি লিখিত পড়ার তালিকা, যাকে আমরা বলি ‘পড়ার রুটিন’। এতে থাকবে কোন সময়ে কোন বিষয় পড়া হবে তার স্পষ্ট বিবরণ। এর ফলে পড়ার কোনো বিষয় বাদ যাবে না। সামগ্রিক প্রস্তুতি নিতে হবে।
৭. রাখতে হবে স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল
পরীক্ষায় সফল হতে চাও, তাহলে শুধু পড়াশোনা নয়, স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শরীর ও মন ভালো না থাকলে কোনো প্রস্তুতিই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সুস্থ থাকলেই আমরা কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে পারি। নিয়মিত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা, পর্যাপ্ত পানি পান, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি ঠিকমতো না হলে শরীর ভালো না থাকলে পড়াশোনা কম হয়? ঘুম কম হলে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও মানসিক স্থিতি কমে যায়, এ জন্য আমাদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে। অতিরিক্ত চা, কফি বা ফাস্ট ফুড এড়িয়ে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করা দরকার। সুষম খাবার রোগ প্রতিরোধে বেশ সহায়ক। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সময়সীমা নির্ধারণ করে নাও। সব সময় সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে। আর শরীর সুস্থ থাকলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহও বেড়ে যায়।
লেখক: মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সহকারী অধ্যাপক, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, ঢাকা