Thank you for trying Sticky AMP!!

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তিতে সামিয়া রহমানসহ ঢাবির তিন শিক্ষকের পদাবনতি

সামিয়া রহমান ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান

একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান এবং অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের পদাবনতি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি পিএইচডি গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ওমর ফারুককেও একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের নিয়মিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। সিন্ডিকেটের দুজন সদস্য প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


ওই দুজন সিন্ডিকেট সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদাবনতি দিয়েছে সিন্ডিকেট। আগামী দুই বছরের মধ্যে তিনি পদোন্নতির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান এখন শিক্ষা ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে আছেন। ছুটি শেষে ফেরার পর তিনি পদোন্নতি পেয়ে যেতেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিভাগে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে আরও দুই বছর প্রভাষক পদে চাকরি করতে হবে। নিজের পিএইচডি গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ওমর ফারুককে পদাবনতি দিয়ে প্রভাষক করা হয়েছে। তাঁর নকল পিএইচডির অনুমোদনও বাতিল করে দিয়েছে সিন্ডিকেট।

সিন্ডিকেটের ওই সদস্যরা আরও জানান, সামিয়া ও মারজানের শাস্তি নির্ধারণে গঠিত ট্রাইব্যুনাল দুজনের একটি করে ইনক্রিমেন্ট বাতিলের শাস্তি প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিন্ডিকেট সেই প্রস্তাব নাকচ করে দুজনকে পদাবনতি দিয়েছে। তবে ওমর ফারুকের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের প্রস্তাবই বহাল রাখা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ওমর ফারুককে চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ করলেও সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের সিদ্ধান্তে ফারুককে পদাবনতি দেওয়া হয়।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: আ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শীর্ষক আট পৃষ্ঠার একটি নিবন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিজস্ব জার্নাল সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউয়ে প্রকাশিত হয়। তখন অভিযোগ ওঠে, ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে পাঁচ পৃষ্ঠার মতো হুবহু নকল করেছেন তাঁরা৷ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানায় ওই গ্রন্থের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস৷ নিবন্ধটিতে ফুকো ছাড়াও ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন চিন্তক এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতা হুবহু কপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

অভিযোগটি তদন্তে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে একটি কমিটি করে সিন্ডিকেট৷ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, সামিয়া-মারজানের চৌর্যবৃত্তির অভিযোগটির সত্যতা মিলেছে। তবে কমিটি কোনো শাস্তির সুপারিশ করেনি। সামিয়া-মারজানের শাস্তি নির্ধারণের জন্য গত বছরের অক্টোবরের সিন্ডিকেট সভায় আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল ইনক্রিমেন্ট কাটার মতো ‘লঘু শাস্তির’ সুপারিশ করলেও সিন্ডিকেট তা নাকচ করে দিয়েছে।

সামিয়া-মারজানের গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি নিয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম। তিনি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, অভিযোগ ওঠা নিবন্ধটিসহ সামিয়া-মারজানের যৌথভাবে লেখা মোট ছয়টি নিবন্ধ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিটি নিবন্ধে ৬০-৮০ শতাংশ করে চৌর্যবৃত্তি করা হয়েছে।

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

এদিকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ২০১৮ সালে সিন্ডিকেটের এক সভা থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ওমর ফারুকের ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু তখন তাঁকে একাডেমিক কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। তাঁর শাস্তি নির্ধারণের জন্য গত বছরের অক্টোবরের সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী ও সিন্ডিকেট সদস্য এ এফ এম মেজবাহ উদ্দিনকে চেয়ারম্যান করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল তাঁকে পদাবনতি দিয়ে প্রভাষক করে দেওয়ার সুপারিশ করে৷ সেই সুপারিশই সিন্ডিকেট বহাল রেখেছে।