রাজধানীর তোপখানা রোডে মেহেরবা প্লাজায় অবস্থিত শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউটে সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। ১ ডিসেম্বর
রাজধানীর তোপখানা রোডে মেহেরবা প্লাজায় অবস্থিত শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউটে সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। ১ ডিসেম্বর

সাত কলেজের সমস্যা নিয়ে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির হুমকি শিক্ষকদের

ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে একীভূত করে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘শাটডাউন’সহ কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর সর্বস্তরে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তোপখানা রোডে মেহেরবা প্লাজায় অবস্থিত শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউটে সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। লিখিত বক্তব্য পড়েন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া অধ্যাদেশে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হলেও এসব কলেজে কর্মরত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকেরা প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। চূড়ান্ত অধ্যাদেশ, পাঠ্যসূচি ও প্রশাসনিক কাঠামো নির্ধারিত না হওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী—উভয়েই বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছেন। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল বা কাঠামোর ফলে নানাবিদ সংকট তৈরি হবে বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।

এসব নিয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিনে আগামীকাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে গণজমায়েত, ৩ ডিসেম্বর সারা দেশের সব সরকারি কলেজে মানববন্ধন, ৪ ডিসেম্বর পরীক্ষা বন্ধসহ সাত কলেজে কর্মবিরতি এবং ৬ ডিসেম্বর শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশ করা হবে।

এ ছাড়া বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের মতামত ও দাবি উপেক্ষা করে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে দেশের সব সরকারি কলেজ ও দপ্তরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি (টোটাল শাটডাউন) শুরু করা হবে বলে আজকরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

আগে থেকেই ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজে সংকট বিরাজ করছে। ২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই এগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। সরকারি এই কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এর মধ্যে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়; বাকি পাঁচটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর—তিন স্তরেই পাঠদান হয়। এগুলোতে শিক্ষার্থী দেড় লাখের মতো। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন ১১ হাজারের মতো। সাত কলেজে মোট শিক্ষক হাজারের বেশি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত হওয়ার আগেই অধিভুক্তি বাতিল হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় কার্যক্রম চলছে।

সম্প্রতি সাত কলেজকে একীভূত করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সরকারি পরিকল্পনা আলোচনায় আসে। কিন্তু এর কাঠামো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। সংকট কাটার পরিবর্তে নতুন জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনও চলছে। সংকটের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা পড়েছেন তীব্র সেশনজটে।