Thank you for trying Sticky AMP!!

ভ্যাকসিনে কি করোনাভাইরাস দূর হবে?

ভ্যাকসিন

করোনাভাইরাসের টিকা (ভ্যাকসিন) দু–এক মাসের মধ্যেই  চলে আসবে। এটা এক বড় সুসংবাদ। কেন? কারণ, টিকা নেওয়ার পর একজন ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে এবং এরপর ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে। অবশ্য একবার বা তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার টিকা নেওয়ার পর রোগপ্রতিরোধ কত দিন কার্যকর থাকবে, সেটা হিসাবে রাখতে হবে। এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বিজ্ঞানীরা বলতে পারছেন না। তবে সাধারণভাবে বলা হয়, দুই কোর্স টিকায় কয়েক মাস তো বটেই, এমনকি কয়েক বছরও চলতে পারে। যদি এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হনও, তার তীব্রতা কম হবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

আমাদের দেশে কবে টিকা আসবে এবং কীভাবে ঝুঁকিগ্রস্ত মানুষেরা পর্যাপ্ত টিকা পাবেন, সেটা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি । হয়তো দ্রুততম সময়েই আসবে। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেও কিছু টিকা আমদানি করা হবে। ফলে কিছুটা আশাবাদী হওয়া যায়। কিন্তু টিকা সঠিক কোল্ড চেইনে রাখা হচ্ছে কি না বা নকল টিকা আসছে কি না, সেসবও কঠোর তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে।

সাধারণত একটি দেশ বা অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ৭০–৮০ শতাংশ টিকা নিলে বা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলে ওই অঞ্চলে সেই ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগ সীমিত হয়ে আসে বলে ধরে নেওয়া হয়। কারণ, একজন করোনায় আক্রান্ত হলেও তার চারপাশে অন্তত চারজন করোনা প্রতিরোধী থাকবেন। ফলে ওই আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য কারও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক কমে যাবে। একসময় আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আরও কমে যাবে।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে পর্যাপ্ত টিকা নিশ্চিত হলেই বিশ্ব করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে বেশ কয়েক বছর লাগবে, সীমিত এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে হয়তো চলতেই থাকবে। অবশ্য সেটা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে না। তাই টিকা শেষ অধ্যায় নয়। বলা যায়, করোনার শেষ অধ্যায়ের শুরু।

করোনাভাইসের টিকা নেওয়ার পরও বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত আমাদের মাস্ক ব্যবহার, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোওয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালিতে কিছু স্থায়ী ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এর আগে সার্স ও অন্য কিছু মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগের কারণে জাপানসহ বেশ কিছু দেশে আমরা দেখেছি, রোগের প্রকোপ না থাকলেও ঘরের বাইরে চলাফেরায় মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন, হ্যান্ডশেক এড়িয়ে চলেন। তখন আমরা এর কারণ বুঝতাম না, এখন বুঝতে পারি কেন তাঁরা এত সতর্কভাবে চলাফেরা করতেন। আমাদেরও সেই চর্চা রাখতে হবে।

অ্যান্টিজেন টেস্ট কী?

করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য আমাদের দেশে এত দিন শুধু পিসিআর টেস্টই অনুমোদিত ছিল। এখন অ্যান্টিজেন টেস্ট পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। পিসিআর টেস্টের জন্য নাকের বা গলার একেবারে গভীরে একটি নমনীয় কাঠি ঢুকিয়ে সোয়াব বা শ্লেষ্মার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তারপর সেই সোয়াবে উপস্থিত কোনো ভাইরাসের কয়েক লাখ অনুলিপি তৈরি করে তার জেনেটিক উপাদান পরীক্ষা করা হয়। এরপর নিশ্চিত হওয়া যায় সেটা করোনাভাইরাস কি না। এই পরীক্ষায় বেশ সময় লাগে। বিকল্প হিসাবে অ্যান্টিজেন টেস্ট করা যায়। করোনাভাইরাস প্রোটিনের খণ্ড খণ্ড টুকরা বা অ্যান্টিজেন আছে কি না, সেটা পরীক্ষা করা হয়। এটা পাঁচ মিনিটেই করা যায়। এই পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক হয়। তবে অনেক সময় ভুলও হতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হলে অ্যান্টিজেন টেস্টে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়।

অ্যান্টিবডি টেস্ট কী?

অ্যান্টিবডি হলো দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা থেকে নিঃসৃত একধরনের প্রোটিন, যা শরীরে অনুপ্রবেশকারী বিশেষ ধরনের কোনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অনিষ্টকারী কোনো কিছুকে চিহ্নিত করতে পারে এবং দ্রুত তার চারপাশে বাধার দেয়াল তৈরি করে। ফলে সেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া আর বংশ বিস্তার করতে পারে না। বিলুপ্ত হয়। তাই শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষা করে বলা যায় কেউ নির্দিষ্ট কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত কি না। কিন্তু সমস্যা হলো, আক্রান্ত হওয়ার পর রক্তে অ্যান্টিবডির আবির্ভাব ঘটতে সপ্তাহখানেক সময় লাগে। এই সময়ের আগে ভাইরাসের উপস্থিতি অ্যান্টিবডি টেস্টে ধরা পড়ে না। কিন্তু কেউ যদি আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অ্যান্টিবডি টেস্টে সেটা জানা যায়।

আব্দুল কাইয়ুম: মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
quayum.abdul@prothomalo.com