
৮ মে। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের ‘হল অব ফেম’-এ ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা ছয়টা ছুঁতেই আলো জ্বলে উঠল মঞ্চে। ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য-সুন্দর’—রবীন্দ্রসংগীতের এই সুরমূর্ছনায় ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৪’-এর সূচনায় মঞ্চে সে মুহূর্তে সত্যি যেন ডাকল আলোর বান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মজয়ন্তীর দিনে ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’-এর প্রায় পুরোটাজুড়েই ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’র মাধ্যমে শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠান। গেয়েছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, পাপিয়া সরোয়ার, তপন মাহমুদ, খায়রুল আনাম শাকিল, সাদি মহম্মদ, লিলি ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, কিরণচন্দ্র রায়, চন্দনা মজুমদার, বুলবুল ইসলাম, অদিতি মহসিন ও শারমীন সাথী ইসলাম। আর এ গানের সঙ্গে শর্মিলী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নাচ পরিবেশন করলেন নৃত্যনন্দনের সদস্যরা।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হকের সূচনা বক্তব্যের পর মঞ্চে এলেন সম্পাদক মতিউর রহমান। বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথ সর্বদাই আমাদের সহায়। আমাদের পত্রিকার প্রথম আলো নামটিও রবীন্দ্রনাথ থেকে নেওয়া। তিনি লিখেছিলেন, “প্রথম আলোর চরণধ্বনি উঠল বেজে যেই”। আমরা আজকের এই পুরো আয়োজন উৎসর্গ করছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে।’
মতিউর রহমানের পরে মঞ্চে এসে স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বললেন, ‘সবকিছুর শুরুতে থাকে স্বপ্ন ও পরিশ্রম।’ এই কথার পর তাঁর বক্তব্যে ফুটে উঠল বিনোদনজগতের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, ‘বিনোদনজগতের কথা শুনলে মনে হয়, ঝকমকে সুন্দর জীবন। অথচ শিল্পীরা অবর্ণনীয় পরিশ্রম করে, নিজের ব্যক্তিগত অনেক দুঃখ-কষ্টকে একপাশে সরিয়ে রেখে সবাইকে বিনোদিত করেন। ‘মেরিল-প্রথম আলো’র এ কার্যক্রম সারা বছর করতে চাই আমরা। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মশালা করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
তবে ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’-এর এবারের আয়োজন শুধু কি ছিল বক্তৃতাময়? এ অনুষ্ঠানের কি কোনো উপস্থাপক ছিল না? হ্যাঁ পাঠক, অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে প্রশ্নটি আপনার মতো জেগেছিল আমাদের মনেও। কেননা, অনুষ্ঠানমঞ্চের বড় পর্দায় প্রচারিত হলো বিশেষ বুলেটিন, ‘মেরিল-প্রথম আলো’র উপস্থাপক নিখোঁজ! কিন্তু না, এর মধ্যেই দেখি, বিশেষ ‘ড্রাম সার্ভিস’-এ চেপে মঞ্চে মূর্তিমান অভিনেতা সাজু খাদেম। বললেন, ‘আমি এবার এই অনুষ্ঠানের নবনির্বাচিত উপস্থাপক।’ তাঁর কথা শুনে আমাদের মনে পড়ল, ‘মেরিল-প্রথম আলো’র গেল বছরের অনুষ্ঠানেও সাজু ছিলেন মঞ্চে।
উপস্থাপক তো মিলল। কী হবে এরপর? তো, এরপর যে ঘটনা ঘটেছিল, তাতে নিশ্চিতই চমকে উঠবেন আপনি। মঞ্চে দেখা গেল অভিনয়শিল্পী মোশাররফ করিম ও নুসরাত ইমরোজ তিশাকে। এই যুগলকে দেখে ভাবছি যখন, সাজপোশাকে এঁদের শেষের কবিতার অমিত-লাবণ্যের মতো মনে হচ্ছে কেন? তখনই সাজু খাদেমকে মঞ্চ থেকে হটিয়ে মোশাররফ আর তিশা বললেন, তাঁরাই এ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। তাহলে সাজু খাদেম নিশ্চয় ‘অনাহূত’ ও ‘অনুপ্রবেশকারী’?
ঘটনা হলো মোশাররফ করিম+তিশা+সাজু খাদেম=এই তিন উপস্থাপকের সম্মিলিত নাটকীয়তায় সৃষ্টি হয়েছে যে রসায়ন, তাতেই বর্ণিল ও ঝাঁ-চকচকে রূপ পেয়েছে ‘মেরিল-প্রথম আলো’র এবারের আয়োজন। পুরস্কার বিতরণের ফাঁকে ছিল মন হরণ করা নানা পরিবেশনা। যেমন ছুঁয়ে দিলে মন ছবির জনপ্রিয় দুটি গানের সঙ্গে আরিফিন শুভ-মম ও তাহসান-মেহজাবিন জুটির নাচ। রাজ্জাক-কবরী, জাফর ইকবাল-ববিতা ও সালমান শাহ-মৌসুমী অভিনীত তিনটি জনপ্রিয় গান মঞ্চে নতুন করে ফিরিয়ে আনলেন ইমন-নিপুন, সাইমন-পিয়া ও মিলন-মাহি—এই তিন জুটি; হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় ধারাবাহিক কোথাও কেউ নেই-এর বাকের ভাই, মুনা, বদি ও মজনুকে এই সময়ের বাস্তবতায় উপস্থাপন করলেন ইন্তেখাব দিনার, চাঁদনী, শামীম জামান ও জয়রাজ; মঞ্চকেই যেন স্টেডিয়াম বানিয়ে দর্শককে বিনোদন জোগালেন বাংলাওয়াশের দুই সারথি বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও বোলার তাসকিন আহমেদ। এ ছাড়া ছিল জেমসের গান। একটি অনুষ্ঠান জমে উঠতে, জমকালো হতে আর কী লাগে?
তারকা শিল্পীদের হরেক পরিবেশনা ও পুরস্কার বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে মোশাররফ ও তিশার সঙ্গে মুহূর্তে মুহূর্তেই সাজু তৈরি করছেন অপূর্ব নাট্যরঙ্গ। সেসব দেখে ক্রমাগত আমরা হাসছি, আমোদে উচ্ছ্বসিত হচ্ছি। কিন্তু রবিঠাকুর, তিনি তো আছেনই আমাদের সঙ্গে। তাই তো অনুষ্ঠান শেষও হলো সামিনা হোসেন প্রেমা, নাদিয়া, নিসা আর প্রেমার নাচের দল ভাবনার নাচের মাধ্যমে। না বললেও চলে এই নাচের সহায় সেই রবীন্দ্রনাথেরই ‘বিশ্ববীণা রবে’ গানটি।