
আই অ্যাম অনলি ওয়ান, মাই নেম ইজ খান’—অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র মাই নেম ইজ খান চলচ্চিত্রে শাকিব খানের সংলাপ। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করার মন্ত্র। এই চলচ্চিত্রের দুই বিপরীত শক্তি প্রবীর মিত্র ও নূতন। প্রবীর মিত্র শাকিব খানের বিত্তশালী দাদা। নায়িকা অপু বিশ্বাসের মা নূতন। অপর অপশক্তি জেলবন্দী মিশা সওদাগর। ত্রিকোণ শক্তি, দ্বন্দ্বের মাঝেই শাকিব খান-অপু বিশ্বাসের প্রেম অভিসার। শাকিব খানকে ফাঁকি দিতে শ্রমিক, কখনো গ্যাস স্টেশনে গ্যাস বিক্রেতা—নানারূপে অপু বিশ্বাসের পর্দায় উপস্থিতি। ধনীবিদ্বেষী শাকিব খানকে পেতে কোটিপতির-কন্যা অপু বিশ্বাসের প্রাণান্ত চেষ্টা। ঘটনাপ্রবাহে প্রবীর মিত্রের পুরোনো গৃহকর্মীর কাছে শাকিব খান জানতে পারে, তার পিতা-মাতার খুনি তার প্রিয় দাদা। তার জন্ম জঙ্গল জঞ্জালে। যে দাদুকে আদর্শ ভেবে বড় হয়েছে শাকিব, সেই তিনিই (প্রবীর মিত্র) আসলে নিষ্ঠুর এক সোলায়মান খাঁ। নিজের জীবনটাকে পরখের জায়গা থেকে দেখে ফেলে শাকিব খান। দাদা প্রবীর মিত্রের বিশাল আয়োজন। আজ তার নাতি শাকিব খানের জন্মদিন। শাকিব খানের আগমন। স্পর্ধা ও সাহসে দাদার সম্পর্ক অস্বীকার করা। সবকিছু ত্যাগ করে বাবা ও মায়ের ছবি নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাওয়া। টান টান গল্প। জমজমাট নাট্যরস। এ পর্যন্ত ছিল মাই নেম ইজ খান চলচ্চিত্রের অপ্রত্যাশিত চমক। যথারীতি গল্প গতিতে বাণিজ্য চলচ্চিত্রের সমীকরণে তপ্ত, তাৎক্ষণিক চোখ ধাঁধানো, মনমাতানো নৃত্যগীতের পরিবেশনার মধ্যেই যুক্ত হয় প্রবীর মিত্র ও নূতনের হিংসা, জখম ও শৃঙ্খলাভঙ্গের আনন্দ উল্লাস।মাই নেম ইজ খান চলচ্চিত্রের অন্য চরিত্রগুলোর নিশ্চিন্ত জীবন যাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ইচ্ছামতো মারপিট, ধ্বংস, হত্যা, রক্তপাত, অগ্নিসংযোগ ঘটায়। করে নায়িকা ছিনতাই। হেলিকপ্টারে খলনায়কের আগমন—সবটাই যেন ধ্বংসযজ্ঞের পৃথিবী। অথবা ফ্র্যাগমেন্ট অব এন্টারটেইনিং রিয়ালিটি। আইন কোথায়? পুলিশ-প্রশাসন কোথায়? ঢাকা নগরের কোন এলাকায় হেলিকপ্টার, বোমা-বারুদ ফাটিয়ে মহা প্রতিশোধ অথবা প্রেমযুদ্ধ হচ্ছে? এত প্রশ্নের উত্তর দর্শক না খুঁজে পরম তৃপ্তিতে মাই নেম ইজ খান চলচ্চিত্রটি উপভোগ করল। সংগ্রাম শেষে শাকিব-অপু বিশ্বাসের স্বপ্নপূরণে তৃপ্ত মনে প্রেক্ষাগৃহে থেকে বের হলো।
অদ্ভুত শোনালেও বলতে হয়, আলোছায়ায় শব্দদৃশ্যের রহস্যময় ভুবন তৈরি করে দর্শকদের মনের অতল বাসনা পূরণে সম্পূর্ণ সফল বদিউল আলম খোকন।
এই ছিলমাই নেম ইজ খান চলচ্চিত্রের দুয়ে দুয়ে চার হওয়ার গল্প রসদ। চলচ্চিত্র ভাবুকেরা আজও বলে যাচ্ছেন, চলচ্চিত্র হলো বাস্তবতার পুনর্নির্মাণ। কোন বাস্তব চোখে দেখা। না, পরিচালকের চোখে দেখা পর্দায় প্রতিফলিত বাস্তব ভিন্ন সুরে বাঁধা। যে বাস্তবকে দেখতে দর্শকদের সকল পার্শ্বিক বাস্তবতা থেকে দূরে থাকতে হয়। আড়াই ঘণ্টা অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে পরিচালক-সৃষ্ট বাস্তবতাকে মেনে নিতে হয়। এত সব মেনে নিতেও দর্শক হোঁচট খায়। আচ্ছা, শাকিব খানকে খুশি করতে অপু বিশ্বাস গণশিক্ষা, সেবাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে অর্থের উৎস কোথায়? বিদেশের মনোরম লোকেশনে গানের দৃশ্যের পরই ঢাকায় চিত্রায়িত দৃশ্য দেখতে হোঁচট খেতে হয় কেন? ভারী ভারী উপমাযুক্ত সংলাপ ব্যাকরণসিদ্ধ নয়, তবু দর্শক হাততালি দেয় কেন?
এত সব প্রশ্নের উত্তর জমা থাকল। কারণ, দর্শক নৃত্য ও গীতের সুসম দৃশ্যমান জগৎকে দেখতে পেয়েছে শুদ্ধরূপ সৌন্দর্যভাবে। ক্যামেরার ব্যবহার, সম্পাদনার গতিতে যা ছিল প্রাণবন্ত। শব্দ, সংলাপ, সংগীত চলচ্চিত্রের ব্যঞ্জনা প্রকাশ করে।
গল্পের গতিকে ধাবিত রাখে। চরিত্রে ভাব, ভবিষ্যৎ বক্তব্যকে উদ্ভাসিত করে। সব শব্দের মাঝেও নিঃশব্দ একটি চলচ্চিত্র ভাষা। যে ভাষায় হাজারো কথা বলা যায়। এই নিঃশব্দের প্রয়োগ চলচ্চিত্রে সম্পূর্ণই অনুপস্থিত। যে পরিচালক চলচ্চিত্রের মধ্যে শিল্পরসের সন্ধান করেন, তিনিই শত শব্দের মধ্যে নিঃশব্দ খুঁজে ফেরেন।