খেলা নিয়ে ছবি

হলিউড, বলিউড, টালিউড—খেলা নিয়ে মনে রাখার মতো চলচ্চিত্র বড় কম হয়নি। সেসব চলচ্চিত্রের ভাষা ভিন্ন। দেশ, সংস্কৃতি, সময় আর মানুষেরা ভিন্ন। ভিন্ন নেশা-ধরানো খেলাধুলাও। কিন্তু চলচ্চিত্রগুলোয় খেলা নিয়ে আবেগ ও অনুপ্রেরণার স্পন্দনটি এক। অভিন্ন। টি-টোয়েন্টির এই মৌসুমে সেই অভিন্ন সুরকে ধরার একটা চেষ্টা করা যাক। তবে, ক্রিকেট নয়, অন্য খেলা নিয়ে তৈরি ভালো কয়েকটি চলচ্চিত্র নিয়েই আমরা কথা বলব। যেকোনো ডিভিডির দোকান থেকে সংগ্রহ করে ছবিগুলো দেখে নিতে পারেন আপনিও

কোনি (১৯৮৬)
কোনি (১৯৮৬)

কোনি (১৯৮৬)
কদিন আগেই পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। কিন্তু খেলায় মেয়েদের বড় অর্জন আলোচনার বাইরেই থাকে। কোনির মতো বাংলাদেশের মেয়েরাও নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে প্রতিভায় মুগ্ধ করছে সবাইকে।

কলকাতার সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতিশ, তাঁকে সবাই খীদ্্্দা নামেই ডাকে। ঘটনাচক্রে তার সঙ্গে দেখা হয় কোনির। মা আর ভাইয়ের সঙ্গে বস্তিতে থাকে কোনি। খীদ্দা তাকে বিনা খরচে সাঁতার শেখানো শুরু করেন। প্রতিভাবান কোনি দ্রুতই কলকাতার নামকরা সাঁতারুদের মধ্যে নিজের জায়গা করে নেয়। কিন্তু ভাইয়ের মৃত্যুর পর অভাবে পড়ে দোকানে কাজ নেয় কোনি। খীদ্দা তাকে আবার সাঁতারে ফিরিয়ে আনেন। ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কোনি ছবিটি পরিচালনা করেছেন সরজ দে, কাহিনি লিখেছেন মতি নন্দী।

মিলিয়ন ডলার বেবি (২০০৪)

মিলিয়ন ডলার বেবি (২০০৪)
খেলোয়াড়ের স্পৃহাকে যে বয়সের গণ্ডিতে বাঁধা যায় না তারই রূপায়ণ মিলিয়ন ডলার বেবি ছবিটি। ফ্রাঙ্কি ডান, এক নিঃসঙ্গ বক্সিং কোচ। তার ‘হিট পিট’ বক্সিং ক্লাবের ম্যানেজার স্ক্রাপ। খেলতে গিয়ে এক চোখ হারান স্ক্রাপ। সে জন্য নিজেকে দোষী ভাবেন ফ্রাঙ্কি। আট বছর একসঙ্গে কাজ করার পর শিষ্য উইলি ফ্রাঙ্কিকে ছেড়ে চলে যায়। এ সময় ফ্রাঙ্কির কাছে বক্সিং শিখতে আসে ম্যাগি। একে তো মেয়ে, তার আবার ৩১ বছর বয়স। ম্যাগিকে তাই বক্সিং প্রশিক্ষণ দিতে অস্বীকৃতি জানান ফ্রাঙ্কি। কিন্তু স্ক্রাপের আগ্রহের কাছে হার মানেন তিনি। ম্যাগি হয়ে ওঠে ফ্র্যাঙ্কির শিষ্য। পরিবারের অনাদরে বেড়ে ওঠা ম্যাগিকে পিতৃস্নেহ দেন ফ্র্যাঙ্কি। বক্সিং রিংয়ে এক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ম্যাগি শয্যাশায়ী হয়ে যায়। সেরা চলচ্চিত্রের অস্কার জয়ী ছবিটির পরিচালক ক্লিন্ট ইস্টউড।

দ্য গ্রেটেস্ট গেম এভার প্লেড (২০০৫)

দ্য গ্রেটেস্ট গেম এভার প্লেড (২০০৫)
প্রতিভাকে কখনো বিত্তের বেড়াজালে আটকানো যায় না, বাংলাদেশের গলফার সিদ্দিকুর তার প্রমাণ। এমনই এক কাহিনি নিয়ে বিল প্যাক্সটন তৈরি করেন দ্য গ্রেটেস্ট গেম এভার প্লেড ছবিটি। গরিবের ছেলে ওইমেট গলফের জন্য পাগল। সে সময় গলফ শুধু উচ্চবিত্তরাই খেলত। ওইমেট গলফ খেলোয়াড়দের ব্যাগ বহনকারীর (ক্যাডি) কাজ নেয় ‘কান্ট্রি ক্লাবে’। ধীরে ধীরে গলফ শিখে জিতে যায় স্কুল বালকদের প্রতিযোগিতাও। কিন্তু এক প্রতিযোগিতায় হেরে খেলা ছেড়ে মন দেয় কাজে। একপর্যায়ে প্রতিভা দেখে আমেরিকার গলফ সংঘের প্রধান ওইমেটকে ‘ইউএস ওপেন’-এ খেলতে ডাকে। আহ্বানে সাড়া দেয় ওইমেট। তবে, গরিব বলে তাকে সহ্য করতে হয় নানা অপমান। অবশেষে, ১৯১৩ সালে প্রথম অপেশাদার হিসেবে ইউএস ওপেন জিতে ইতিহাস গড়েন তিনি।

চাক দে ইন্ডিয়া (২০০৭)

চাক দে ইন্ডিয়া (২০০৭)
ভারতীয় হকি দলের অধিনায়ক কবীর খান। পাকিস্তানের কাছে হেরে যাওয়ায় তিরস্কারের মুখে তাকে ছাড়তে হয় ভিটেবাড়িও। সাত বছর পর ভারতীয় মহিলা হকি দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। বিশ্বকাপের জন্য সারা দেশ থেকে বাছাই করা হলো ১৬ জনকে। শুরু হয় প্রশিক্ষণ। কিন্তু এ কী! একটি দলকে নয়, বরং বিচ্ছিন্ন ১৬ জন খেলোয়াড়কে খেলা শেখাচ্ছেন তিনি। যাদের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও মতভেদ। যাদের কাছে দলের নয়, নিজের স্বার্থটাই বড়। সেই আলাদা ১৬ জনকে একটি দলে পরিণত করলেন কবীর খান। তাদের মধ্যে জাগালেন দলীয় চেতনা ও দেশপ্রেম। অবশেষে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিশ্বকাপ জিতল তারা।

চাক দে ইন্ডিয়া ছবিটিতে কবীর খানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বলিউড তারকা শাহরুখ খান। কাহিনি লিখেছেন জয়দীপ সাহনী ও পরিচালনা করেছেন সীমিত আমিন।

ভাগ মিলখা ভাগ (২০১৩)

ভাগ মিলখা ভাগ (২০১৩)
সফলতা ও ব্যর্থতার সমন্বয়েই গড়ে ওঠে জীবন। ব্যর্থতায় হাল না ছেড়ে কঠোর অনুশলীনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ভাগ মিলখা ভাগ।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পরিবার হারান মিলখা সিং। পাকিস্তান ছেড়ে আসেন ভারতে। টাকার অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে থাকেন। জড়িয়ে যান ছোটখাটো অপরাধে। কিন্তু পুলিশের চাকরি পেয়ে জীবনের মোড় ঘুরে যায় মিলখা সিংয়ের। সুযোগ আসে দৌড়বিদ হওয়ার। ১৯৫৬ সালে মেলবার্ন অলিম্পিকে জয় পেতে ব্যর্থ হন । আবারও শুরু করেন কঠোর অনুশীলন। অবশেষে ১৯৫৮-এর এশিয়ান গেমসে জয়লাভ করেন মিলখা। তাঁর বিজয়রথের ঝলক দেখিয়ে শেষ হয় ছবিটি।

‘উড়ন্ত শিখ’ নামে পরিচিত মিলখা সিংয়ের জীবনী নিয়ে তৈরি ছবিটি পরিচালনা করেছেন ওম প্রকাশ মেহরা। ছবিতে মিলখা সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন ফারহান আখতার।

আরিফা আলম