Thank you for trying Sticky AMP!!

নিজের চিত্রকর্ম নিয়ে কথা বলছেন নিসার হোসেন

চিত্রক পুরোনো ঠিকানায় ফিরছে নিসারের ‘ষাট বছরের খতিয়ান’ দিয়ে

ষাট ছুঁই ছুঁই নিসার হোসেন। কলাতত্ত্ব ও লোকশিল্পে তাঁর ঈর্ষণীয় বিচরণ। বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সাংস্কৃতিক মহলে রয়েছে তাঁর বিশেষ পরিচিতি। নিয়মিত আঁকলেও তাঁর ছবি নিয়ে নিয়মিত প্রদর্শনী হয় না। তিনি মনে করেন, তাঁর ছবিগুলো খুব একটা দৃষ্টিনন্দন নয়। বরং সেগুলোর বিষয়বস্তু পীড়াদায়ক। তবে এখনকার মানুষদের সেই ছবিগুলো দেখানো দরকার বলে মনে করছেন শিল্পী নিজেই। ছবিতে যে কথা তিনি বলেন, তা মানুষের সঙ্গে বিনিময় করা দরকার। কেননা, সেসব বলার এখনই সময়, এ একরকম প্রতিবাদও। সেই ভাবনা থেকেই নিসার হোসেনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনী ‘ষাট বছরের খতিয়ান’।
রাজধানীর শিল্পরসিকদের পছন্দের এক প্রদর্শনালয় গ্যালারি চিত্র। ২০০০ সালে ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের ২১/এ ঠিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রদর্শনালয়টি। ভবনটি পুনর্নির্মাণের জন্য ভাঙা হয়। চিত্রক ঠিকানা পরিবর্তন করে। দীর্ঘ ১০ বছর সেখানে কাটিয়ে চিত্রক ফিরে গেছে তার পুরোনো ঠিকানা, ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে, নবনির্মিত ভবনে, আরও বিস্তৃত পরিসরে। আধুনিক আয়োজন-বিন্যাসে গ্যালারিটির নবযাত্রা হচ্ছে শিল্পী নিসারের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী দিয়ে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন ভবনে গ্যালারির যাত্রা ও প্রদর্শনীর বিস্তারিত তুলে ধরেন আয়োজকেরা।

এ সময় শিল্পী নিসার হোসেন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান, শিল্পসমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ আজিজুল হক প্রমুখ।

কলাতত্ত্ব ও লোকশিল্পে নিসার হোসেনর ঈর্ষণীয় বিচরণ

নিজের শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে নিসার হোসেন বলেন, একসময় সরাসরি রাজনীতি করতাম। সে কারণে নানা বিষয় আমাকে তাড়িত করে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা থেকে শুরু করে ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ কিংবা রাজনৈতিক অনাচার আমাকে যন্ত্রণা দেয়। ক্যানভাসে ছবি আঁকার মাধ্যমে আমি সেই যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে বেড়াই। জমে থাকা ভেতরের ঘৃণাকে উগরে দিই ছবিতে। তাই আমার আঁকা ছবি দেয়ালের শোভা বর্ধনের পরিবর্তে মেলে ধরে বিকারগ্রস্ত সময়কে। সমাজে ঘটে যাওয়া যেসব কুৎসিত বিষয়কে আমরা দেখাতে চাই না, সেটাকেই আমি ক্যানভাসে উপস্থাপন করি। প্রকৃত বাস্তবতাকে দাঁড় করাতে দর্শকের সামনে।
সংবাদ সম্মেলনে চিত্রসমালোচক মঈনুদ্দিন খালিদ বলেন, নিসার হোসেনের এই ছবিগুলো হয়তো সাধারণ শিল্প-সংগ্রাহকদের টানবে না। কারণ, তিনি ছবি বিক্রির জন্য ছবি আঁকেননি।

শুদ্ধ সমাজের প্রত্যাশায় সৌন্দর্যের পরিবর্তে ছড়িয়ে দিয়েছেন নিষ্ঠুরতাকে। ক্যানভাসে ধারণ করেছেন সময়ের দাবদাহকে। নিরপেক্ষ বিবেকবোধের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করেছেন দুঃসময়ের। সেই সঙ্গে উন্মোচিত করেছেন মৌলবাদের বীভৎস চেহারাকে। চিত্রকর্ম সৃজনের মাধ্যমে আপন ক্রোধের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আর ক্রোধের প্রকাশ ঘটানো এই চিত্রকর্মগুলোই একসময় কালজয়ী হবে।

মৃত্তিকাসংলগ্ন এই শিল্পী লোকজ অনুষঙ্গকে সঙ্গী করে সৃজন করেছেন আপন চিত্রকর্ম

নিসার হোসেনের চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, অবয়ব রূপায়ণের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততার পরিবর্তে তিনি বেছে নিয়েছেন ভাঙচুরকে। মৃত্তিকাসংলগ্ন এই শিল্পী লোকজ অনুষঙ্গকে সঙ্গী করে সৃজন করেছেন আপন চিত্রকর্ম। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান ও গ্যালারি চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান।
ষাট বছরের খতিয়ান নিসার হোসেনের তৃতীয় একক প্রদর্শনী। সেখানে থাকবে বিভিন্ন সময়ে আঁকা তাঁর শতাধিক শিল্পকর্ম। বিকেল পাঁচটায় প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী। উদ্বোধন করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি থাকবেন সাংসদ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিন ও শিল্পানুরাগী কাজী আনিসুল মুকিত। মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী ঘুরে আসা যাবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।