
চীনা রীতিতে ২০১৫ সাল ছিল ভেড়ার বছর। আর ২০১৬ হবে বানরের! ভাবতেই পারেন এখানে হঠাৎ এ প্রসঙ্গ কেন এল? কথা তো হওয়ার কথা বলিউড নিয়ে। ঠিক আছে, তাহলে বলিউড নিয়েই কথা হোক। চীনা রীতিতে বছরটি ভেড়ার ছিল, সেই প্রভাব হয়তো বলিউডেও কিছুটা পড়েছে। একেবারে ভেড়ার গা যেমন শ্বেত পশমে ঢাকা থাকে, বলিউডের বেলাতেও যেন এ বছরটা তেমনভাবেই ব্যর্থতার আস্তরে ঢাকা ছিল। অনেক ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়েও বলিউড ২০১৪ সাল থেকে এ বছর পিছিয়ে ছিল অনেক। ‘খান’দের কাঁধে ভর করেও পুরোনো বছরের মাইলফলক পেরোতে পারেননি কেউ। তাই এবার চোখ রাখা ২০১৬ সালের দিকে। রাত পেরোলেই উঠবে নতুন বছরের প্রথম সূর্য, সেই সঙ্গে হয়তো উদয় হবে বলিউডের নতুন সম্ভাবনার দিকও। তাই আজ একটু বলিউডের অতীত-ভবিষ্যৎকে এক রেখায় মিলিয়ে দেখা যাক।
১০০ কোটির ব্যর্থতা
একটা সময় বলিউডে ছবির সাফল্য হিসাব করা হতো এর প্রদর্শনের সময় দিয়ে। সিলভার জুবলি, গোল্ডেন জুবলির তকমা ছবির গায়ে লেগে গেলেই তা হয়ে যেত ‘হিট’। কালে কালে সে ধারা বদলে এখন ‘১০০ কোটি’, ‘২০০ কোটি’র ক্লাবের চল এসেছে। তাই সেই হিসাব এ বছর কষতে বসে মন ভেঙেছে অনেক বলিউড বণিকের। কারণ ২০১৪ সালের তুলনায় এ বছর ‘১০০ কোটির ক্লাব’-এ ছবির সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। ২০১৪ সালে যেখানে ১০টি ছবি ছাড়িয়েছিল ১০০ কোটি মাইলফলক, সেখানে ২০১৫ সালে ১০০ কোটি রুপির বেশি আয় করা ছবির সংখ্যা মাত্র ছয়টি।
নারীর জয়জয়কার
এ বছরও বলিউডের ‘খান’, ‘কাপুর’ আর ‘কুমার’দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বলিউডে বিচরণ করেছেন অভিনেত্রীরা। এনএইচটেন, পিকু, তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস, মার্গারিটা উইথ এ স্ট্র দেখে নিলেই এর প্রমাণ মিলবে।
অর্ধশতকের বছর
২০১৫ সালের শুরু থেকেই বলিউডে যেন লেগেছিল ‘অর্ধশতক’ উদ্যাপনের আনন্দ। বলিউডের তিন মহারথী ‘খান’-আমির, শাহরুখ, সালমান এ বছর পার করেছেন ৫০-এর কোটা। তাই শুরু থেকেই এ নিয়ে বলিউড ভক্তদের আগ্রহের কমতি ছিল না। হালেই সালমানের ৫০তম জন্মদিনের কেক কাটার মধ্য দিয়ে এ আলোচনার শেষ হলো এ বছরের মতো।
গ্ল্যামারে পড়েছে ঢল
দুষ্ট মেয়েরা এ বছর বলিউডে খুব কমই পাত্তা পেয়েছেন। কারিনা কাপুর ব্রাদার্স ছবিতে স্বল্প পোশাকে ‘মেরি’ হয়ে এসেছেন ঠিকই। কিন্তু স্বল্প পোশাক এ বছর খুব একটা দর্শক টানেনি ভারতের প্রেক্ষাগৃহগুলোয়। ব্রাদার্স ছবির বক্স অফিসের আয় কিংবা সানি লিওনের কুছ কুছ লোচা হ্যায়-এর ব্যর্থতা কিন্তু তা-ই বলে। অন্যদিকে একেবারে পাশের বাড়ির মেয়ের সাজে পর্দায় হাজির হওয়া ‘পিকু’ অথবা ‘মাস্তানি’ নামের দীপিকা কিংবা ‘তনু’ নামে কঙ্গনায় মুগ্ধ হয়েছেন দর্শকেরা। তাই এ বছর আর মাইক্রোমিনি নয়, বক্স অফিস জয় করেছে ফতুয়া, শাড়ি আর আনারকলি।
যত সব বিতর্ক
ছবি দিয়ে না হলেও কর্ম আর বক্তব্য দিয়ে অনেক তারকাই হয়েছেন খবরের শিরোনাম। সবশেষ মনে পড়ে আমির খানের কথা। ‘অসহিষ্ণুতা’ তর্কে বেচারার তো প্রায় দেশছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তা ছাড়া ভারতের সেন্সর বোর্ডের চুমু বিতর্ক, বজরঙ্গি ভাইজান-এর ওপর নকল করার অভিযোগ, করণ–অর্জুন–রণবীর সিংয়ের ‘এআইবি রোস্ট’ তর্কসহ বছরজুড়ে আরও অনেক বিতর্কেই উত্তপ্ত ছিল বলিউড।
বিষয়ভিত্তিক ছবিতে মাত বলিউড
বলিউডের মসলা কিংবা ফর্মুলা ছবি নয়। এ বছর ছিল বিষয়ভিত্তিক ছবির দখলে। ছবিকে হিট করার জন্য সুইজারল্যান্ডে কোনো খেতে গিয়ে নাচতে হয়নি নায়ক-নায়িকাকে, কিংবা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে মন্দিরে গিয়ে কাঁদতেও হয়নি নায়ককে। আবার নায়িকার সম্ভ্রম বাঁচাতে খলনায়কের আস্তানায় দেয়াল ভেঙে নায়কের আবির্ভাব ঘটাতে হয়নি পরিচালকদের। ছবি হিট করার জন্য এ বছর গল্পই ছিল যথেষ্ট। তা না হলে শুধু ‘কোষ্ঠকাঠিন্য’র ওপর ভর করেই একটি ছবি কেমন হিট হয়ে গেল, তাই না!
আইএএনএস, দ্য হিন্দু, মিড-ডে ও বলিউড হাঙ্গামা অবলম্বনে