
গরু নিয়ে এক অসাধারণ ঘটনা ঘটল একবার মিশা সওদাগরের জীবনে। ঈদ উপলক্ষে সেটাই তিনি জানাচ্ছেন ‘আনন্দ’-এর পাঠকদের
পাঁচ-ছয় বছর আগের কথা। কোরবানির ঈদের আগের দিন হাটে গিয়েছিলাম গরু কিনতে। শীতের দিন ছিল, তাই ঝামেলা এড়াতে মুখটা মাফলার দিয়ে অনেকটা ঢেকে হাটে ঢুকলাম। অনেকগুলো গরু দেখার পরও পছন্দ হচ্ছিল না। মানুষজনের ভিড়ে ঘামতে শুরু করে দিয়েছি। হঠাৎ খেয়াল হলো, আমার মুখ থেকে মাফলার খুলে গেছে। নতুন করে বাঁধার আর সুযোগ পেলাম না তখন। এর মধ্যেই চারদিকে ‘মিশা ভাই, মিশা ভাই’ বলে চিৎকার শুরু হয়ে গেছে। কিছু বুঝে উঠতে না-উঠতেই চারদিক থেকে লোকজন আমাকে ঘিরে ফেলল। নিজেকে তখন বাজারে থাকা অন্য গরুগুলোর মতোই মনে হচ্ছিল। শেষে মেলা কমিটির সৌজন্যে রক্ষা পেলাম। একটা গরু কিনে বাসায় ফিরলাম। ঝামেলা থেকে সাময়িকভাবে নিজেকে মুক্ত মনে হলো তখন, কিন্তু কে জানত আমার জন্য আরও বড় চমক অপেক্ষা করছে?
আমি সে সময় যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকি, সেখানে তখন মোট বাহাত্তরটা পরিবার থাকত। তাই, গাড়ির গ্যারেজে রাখা সব গরু সহজে চেনার জন্য ফ্ল্যাট নম্বরটা একটা কাগজে লিখে গরুর গলায় বেঁধে দেওয়া হয়। আমার ফ্ল্যাট নাম্বার ছিল ৭এক্স৩, আর আমার গরুর গলায়ও ওই নম্বর লেখা কাগজটা ঝুলিয়ে নিচে বেঁধে রাখা হলো। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে যখন গরু জবাই করতে গেলাম, তখনই ঘটল ঘটনাটা। কোরবানি দিতে গিয়ে দেখি, আমার গরুটা সেখানে নেই। আশপাশে সব গরুর মধ্যে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হলো। কিন্তু পাওয়া গেল না। অন্য সবাই সে মুহূর্তে একে একে তাদের গরু কোরবানি দিয়ে ফেলল। বেলা ১১টা বেজে গেছে তখন। আমি আমার ফ্ল্যাটের তত্ত্বাবধায়কদের সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বললাম। দেখা গেল, সবাই গরু কোরবানি দেওয়ার পর একটা বড়সড় গরু সেখানে রয়ে গেছে। কিন্তু ওটা আমার ছিল না। মজার ব্যাপার হলো, সেই গরুর কোনো দাবিদারও ছিল না। কিন্তু সবাই বলতে লাগল, ওটাই আমার গরু। আমি বললাম, আমার গরুটা ছোট। এটা আমার না, তার পরও কেউ মানতে চাইছিল না। কেউ একজন বলল, ভাই, ওটা আপনারই গরু, রাতে এনেছেন তাই খুব একটা খেয়াল করেননি। গরুটার যখন কোনো দাবিদার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন সবাই আমাকে ওইটাই কোরবানি দিতে বলল। হুজুরকে জিজ্ঞাসা করলাম, সেটা উচিত হবে কি না। হুজুর সম্মতি দিলে আমি সেটাই কোরবানি দিলাম। ওই দিকে বিকেলে কোরবানির মাংস নিয়ে পড়লাম আরেক বিপদে। বাসার ফ্রিজ ভর্তি হয়ে গেল মাংসে। সবার ভাগ সবাইকে দেওয়ার পরও মাংসে মাংসে বাসা ভরপুর।
সন্ধ্যা নাগাদ শুনতে পেলাম, আমাদের এক ফ্ল্যাট ওপরের নাইন এক্স থ্রি থেকে একটু কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। অনেক বড় গরু কোরবানি দেওয়ার পরও তাদের মাংস কম হওয়াটাই আলোচনার বিষয়বস্তু। কসাইকে দিয়ে গরু কেনানো আর জবাই করানোকেই মাংস কম হওয়ার জন্য দায়ী করলেন তাঁদের কেউ কেউ। অনেক পরে একদিন জানতে পারলাম আসল ঘটনাটি, কেউ একজন গরুর সঙ্গে ফ্ল্যাট নাম্বার লিখতে গিয়ে নাইনের সঙ্গে সেভেনের গোলমাল পাকিয়ে ফেলেছে। আর তাতেই বেধেছে এই বিপত্তি।