Thank you for trying Sticky AMP!!

নুহাশের সঙ্গে এক সন্ধ্যায়

নুহাশ হুমায়ুন। ছবি: আনন্দ

বসার ঘরে বসতে না বসতেই নুহাশ চলে এল। তাঁর খানিক পরে চা, সমুচা আর মিষ্টি। আমরা বসে আছি নির্মাতা নুহাশের সামনে। নির্মাতাই বটে। গেল ঈদে ‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’ সিরিজে হোটেল আলবাট্রস শিরোনামের নাটকটি যাঁরা দেখেছেন তাঁরা দর্শক কোটায় ‘ভালো নির্মাতা’ হিসেবে সার্টিফিকেট দিয়েছেন নুহাশকে। এই সার্টিফিকেট আরও শক্তিশালী হয়েছে বাবা হুমায়ূন আহমেদের কারণে।

ব্যক্তিগত গল্প, নিজের চিন্তাভাবনা আর সামনের পরিকল্পনা নিয়ে কদিন আগে এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় বসা হলো নুহাশের মুখোমুখি। কে যেন বলেছিল, নুহাশ কম কথা বলেন। আর মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে নুহাশ বাড়িময় সুখবর দিয়ে বেড়ান। আমরা এসেছি নুহাশের নতুন কাজের খবর, যাকে সুখবরই বলা যায়। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকের ছেলে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবার মতো হাত পাকাচ্ছেন নির্মাণেও। সেসব নিয়েই আলাপ হলো বেশি।

শুরুতেই জানতে চাইলাম আপনার মধ্যে অনেকেই আপনার বাবার ছায়া দেখেন। আপনার কী মনে হয়?

নুহাশ বললেন, ‘আমার কাছ থেকে বাবার মতো কাজ বা তাঁর মতো নির্মাণ আশা করা ঠিক না। কেন ঠিক না পরে বলছি। শুধু এতটুকু অনুরোধ, বাবার সঙ্গে আমার কাজ মেলাবেন না।’

না মিলিয়েই আমরা কথা শুরু করি। নুহাশ শুরুতেই এ দেশের দর্শকদের নিয়ে বললেন, ‘আমাদের দেশের দর্শক অনেক সচেতন। তাঁরা অনেক বিষয়েই খেয়াল রাখেন। চাইলেও গতানুগতিক কিছু তাঁরা নেবেন না। তাই গল্প বলার সময় আমি খেয়াল রাখি, এমন কিছু দর্শকের সামনে দিতে হবে, যেটা সহজ না কিন্তু সবাই বুঝবে, সবাইকে ভাবাবে।’

গেল বছর হিরো আলমকে নিয়ে একটা তথ্যচিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নুহাশ। জানতে চাইলাম সেই প্রসঙ্গে। বললেন, ‘আমি একটা ফিকশন বানানোর জন্য একবার তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। ১০ মিনিট আলাপ হয়েছিল। কথা বলে মনে হয়েছে তাঁর জীবনটা খুব ইন্টারেস্টিং। একটা স্ট্রাগল আছে। সবাই যখন তাঁকে নিয়ে ফান করছে আমার তখন মনে হলো তাঁর যুদ্ধটা সবাইকে দেখাই। কাহিনিটা দেখাই। হিরো আলম আমাকে একটা কথা বলেছিলেন, “দেখেন আমি হঠাৎ করে ফেমাস হয়ে গেলাম। সবাই আমাকে চেনে। কিন্তু আমি জানি এটা বেশি দিন টিকবে না। কিন্তু যত দিন আছি ভালো কাজ করতে চাই।” হিরো আলম কিন্তু সত্যি সত্যি গ্রামে অনেক কিছু করেন। আমি তাঁর কথাটা নিজের সঙ্গে কানেক্ট করলাম। হঠাৎ করে আমি যদি জনপ্রিয় হয়ে যাই বা সব মানুষ আমাকে চিনে ফেলে তাহলে এই খ্যাতি দিয়ে আমি কী করব? ভালো কিছু, না খারাপ কিছু, নাকি নিজের মতো থাকব? মানুষ আসলে ফেমাস (জনপ্রিয়) কেন হয় বা হতে চায়। এই চিন্তা থেকেই হিরো আলমকে নিয়ে কাজটা করেছি। তবে পরিচালনা নয়, আমি চিত্রনাট্য ও নির্মাণের সময় থেকেছিলাম। বগুড়া ঘুরে বেড়িয়েছি। ওখানকার মিষ্টি দারুণ মজার।’

নিজের নির্মাণের বেলায় শুরুতে তিনি খেয়াল রাখেন চরিত্রের সঙ্গে অভিনেতার সংযোগ। নুহাশের ভাষায়, ‘এমন হয়, ঠিকঠাক অভিনেতা না পেলে একজনের জন্য পুরো প্রোডাকশন ঝুলে যেতে পারে। আবার একজন শক্তিমান অভিনেতা থাকলে সবার মধ্যে ভালো করার একটা তাড়না থাকে। যেমন আমার হোটেল আলবাট্রস-এ যখন সবাই শুনেছে নূর ভাই (আসাদুজ্জামান নূর) আছেন, তখন সবাই নিজেদের সেরাটুকু ঢেলে দিয়ে কাজ করেছেন।’

নাটক দিয়ে টিভিতে নিজের কাজের জানান দিলেও নুহাশের মূল লক্ষ্য চলচ্চিত্র। মাঝেমধ্যেই ক্যামেরা হাতে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে নেমে পড়েন। খুব তাড়াতাড়ি মাঠে নামবেন পূর্ণদৈর্ঘ্য বানাতে। প্রশ্ন করি, নাটক বানাবেন না? ‘হাতে বানানোর মতো সময় থাকলে বানাব। আসলে নাটক বানাতে গেলে অনেক মানুষ যুক্ত হন, তাতে নিজের মতো করে গল্প বলার সুযোগটা থাকে না। নাটকের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। নিজের মতো করে গল্প বলার স্বাধীনতা পেলে নাটক বানাব না, চলচ্চিত্রই নির্মাণ করব।’

নির্মাণের ব্যাপারটা ছোটবেলা থেকেই রক্তে মিশে আছে। নুহাশ জানালেন, মা গুলতেকিন আহমেদ ছোটবেলা থেকেই খুব উৎসাহ দিতেন। এখনো দেন। ঈদে ছেলের কাজ একসঙ্গে বসে দেখবেন বলে দ্রুত দেশের বাইরে থেকে চলে এসেছিলেন। ছোটবেলায় ক্যামেরাও কিনে দিয়েছিলেন একটা। আর বাবার সঙ্গে বসে সিনেমা দেখার স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বল করছে।

সিনেমা বানালে কেমন সিনেমা বানাবেন বা কী ধরনের গল্প বলবেন নুহাশ? বাবার মতো করেই, নাকি অন্য কিছু? ‘আগেই বলেছি, আমার সঙ্গে বাবার কাজ মেলাবেন না। আর আমার কাজ নিয়ে এখনই কথা বলার সময় আসেনি। মাত্র তো শুরু করলাম। সব কাজই যে ভালো হবে, এমন কোনো কথা নেই। বাবা যে কাজটি সুন্দর করে করেছেন, সেটি হলো তাঁর সময়ের গল্পটা বলেছেন। এ কারণে তাঁর প্রজন্মের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ ঘটেছে। বাবা কিন্তু অন্য কারও গল্প বলেননি বা কাউকে অনুকরণ করেননি। আমার যা করা উচিত তা হলো, আমার সময়ের গল্প বলা। আমিও অন্য কারও গল্প বা কাউকে অনুকরণ করতে চাই না। ক্যামেরায় আমি আমার সময়ের গল্পটাই বলতে চাই।’

কথা চলতে থাকে আমাদের। এই সময়ের পড়াশোনা, রাত করে নুহাশের লেখালেখি, এক চিত্রনাট্য বারবার করে ঠিকঠাক করা—সবই উঠে আসে আমাদের আড্ডায়। ততক্ষণে গরম চা ঠান্ডা হয়ে যায়। কথা বলতে বলতে বেখেয়ালে সোফা থেকে মেঝেতে গিয়ে বসেন নুহাশ। রাতও বাড়তে থাকে। বিদায় নিতে হয়। দরজা অবধি এগিয়ে দিয়ে নুহাশ বলেন, ‘আমার সব ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। এবার যেমন থ্রিলার নিয়ে কাজ করলাম। সামনে হয়তো কমেডি করব। কখনো হরর। দেখি না। কোনটা কেমন হয়!’

‘হরর’ বলতে না–বলতেই মনে হলো এই বুঝি বিদ্যুৎ চলে যাবে। না, তা হলো না। নুহাশ হাসিমুখে িবদায় িদলেন আমাদের।