
‘ডন কো পাকাড়না মুশকিল হি নেহি, না মুনকিন হ্যায়’—বলিউডি ছবি দেখেন, কিন্তু এই সংলাপ শোনেননি, এমন মানুষ বোধ হয় একটাও নেই। প্রায় ইতিহাস হয়ে যাওয়া এই এক সংলাপ মেরে হিরোগিরি থেকে ‘ডন’ সেজেই বাজিমাত করেছিলেন বিগ বি। বলিউড হিরোদের ভিলেন বনে যাওয়ার ট্রেন্ডটা চালু হয় সম্ভবত সেই সময় থেকেই। প্রায় তিন যুগ পর সেই ডন-এর রিমেক দিয়েই শাহরুখ খানও বলিউডের এই প্রজন্মকে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, ডিয়ার হিরোজ, হিরোগিরি দেখিয়ে ভিলেন ঠেঙিয়ে সরষেখেতে দুহাত বাড়িয়ে গানের তালে নাচানাচির দিন শেষ, ছবির ‘ভিলেন’ হয়েও কিন্তু ‘হিরো’ হওয়া যায়! তবে বিটাউনের পরিচিত নায়কদের এই ভিলেনরূপের জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে যে সিরিজটা, সেটা ‘ধুম’-ই। ভাবুন তো, ২০০৪ সালের আগে জন এব্রাহামকে নিয়ে বলার মতো কিছু ছিল? সেই বছরই ধুম যখন মুক্তি পেল, দর্শকমনে জনের প্রভাব এতই পড়েছিল যে মুম্বাই শহরে রাতারাতি বাইক চুরির সংখ্যা বেড়ে যায়। ‘ধুম’-এর প্রথম ছবিতে জনের চরিত্র ছিল একজন বাইক চোর।
এরপর ২০০৬ সালেও ঘটল একই ঘটনা! ধুমের সিক্যুয়াল ধুম টুতে হূতিকের মতো স্টাইলিশ ভিলেনকে পেয়ে তাঁর চুরিবিদ্যার সুকৌশল নাকি কুকৌশলগুলোই গোগ্রাসে গিলে ফেলল দর্শকেরা। আর এবার? দেড় বছর আগেই শুরু হয়েছে ধুমের তৃতীয় ছবির শুটিং। সেই থেকেই এবারের ভিলেনকে নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই ধুমপ্রেমীদের। আর সেটা যে কতটা সত্যি তা ধুম থ্রির চোখ ধাঁধানো ট্রেইলার মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। মাত্র তিন দিনেই ৪২ লাখ বার দেখা হয় এই ট্রেইলার! কারণ একটাই। হিরো হয়েও মিস্টার পারফেকশনিস্টের প্রথমবারের মতো ভিলেনরূপে আত্মপ্রকাশ।
আমির খান তাঁর কাজের মহিমায় নিজেকে এমন অবস্থানে নিয়ে গেছেন যে আমির খান নামটাই এখন বলিউড ছবির সবচেয়ে বড় ব্যানার। ১৯৭৩ সালে ইয়াদো কি রাত ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়জীবন শুরু করা এই অভিনেতার ঝুলিতে কয়টি ছবি ব্যবসাসফল হয়েছে সেটা খুঁজে বের করার চেয়ে, কয়টি ছবি ব্যবসা সফল হয়নি তা খুঁজে বের করলেই বরং সময় বাঁচবে।
আমির খানের ছবি মানেই ব্যবসাসফল হবেই হবে। তাই তো আমিরের বিপরীতে অভিনয় করার জন্য বলিউডের প্রত্যেক অভিনেত্রী প্রায় মুখিয়েই থাকেন। এই তো সেদিন অনিল কাপুরের মেয়ে সোনম কাপুর আক্ষেপ করেছেন, আমির খানের সঙ্গে অভিনয় না করলে তাঁর অভিনয়জীবন নাকি অপূর্ণ থাকবে। জুহি চাওলার কেয়ামত সে কেয়ামত তাক থেকে মাধুরীর দিল, কারিশমার রাজা হিন্দুস্তানি অথবা রানীর গোলাম কিংবা অসিনের গজনীর মতো বলিউডের বেশ কিছু অভিনেত্রীর ক্যারিয়ারের প্রথম টার্নিং ছবিই আমির খানের হাত ধরে। ৪৮ বছর বয়সী এই তারকা এখনো যেমন গজনী ছবির সঞ্জয় সিংহানিয়ার মতো রাশভারী চরিত্রে মানিয়ে যান, তেমনি মানিয়ে যান থ্রি ইডিয়টস ছবির প্রথম বর্ষের ছাত্র ‘রাঞ্জো’ চরিত্রেও। আর এবার তো খলনায়ক চরিত্রেই নিজেকে উপস্থাপন করে তাক লাগিয়ে দিলেন।
আমির-ক্যাটরিনা জুটির ধুম থ্রি প্রথম দিনেই বলিউডের আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। মুক্তির প্রথম দিনেই ভারতে আয় করেছে ৩৬ কোটি রুপিরও বেশি; যা ছাড়িয়ে গেছে বছরের অন্য ব্লকবাস্টার হিট ছবি চেন্নাই এক্সপ্রেস আর কৃষ থ্রিররেকর্ডকে। শুধু ভারতেই নয়, বিদেশেও বলিউড ছবির সব রেকর্ড ভেঙেছে ধুম থ্রি। প্রথম দিনেই আন্তর্জাতিক বক্স অফিসের টপচার্টে পাঁচ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে ছবিটি। ভারতে একযোগে প্রায় চার হাজার ৫০০ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ধুম থ্রি, যা বলিউডের ইতিহাসে নতুন এক রেকর্ড। শুধু তা-ই নয়, মাত্র তিন দিনেই ধুম থ্রি ঢুকে পড়েছে ১০০ কোটির ক্লাবেও। যেভাবে আমিরের এই ধুম বক্স অফিসে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাতে বছরের বাকি কয়েক দিনেই হয়তো বলিউড ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবির রেকর্ডটিও নিজেদের করে নেবে ধুম থ্রি। বলিউডের জন্য এ বছরের শেষটা যে ধুমধাড়াক্কাপূর্ণভাবেই শেষ হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ধুম থ্রির পোস্টারে কী লেখা ছিল পড়েননি? ‘দিস ইয়ার উইল এন্ড উইথ অ্যা ধুম’।
সাজিদুল হক
জিনিউজ, ইন্ডিয়া টাইমস, বলিউড হাঙ্গামা, ওয়ান ইন্ডিয়া, উইকিপিডিয়া অবলম্বনে