Thank you for trying Sticky AMP!!

সংসারের কারণে সিনেমা ছাড়লাম, সংসারটাই টিকল না: রথি

কানিজ রাবেয়া রথি। ছবি: সংগৃহীত

শুরুটা নব্বইয়ের দশকে, ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হয়ে। তার আগে সুভাস দত্তের ‘আগমন’ ছবিতে অভিনয় করেন। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় ‘অবুঝ দুটি মন’। এই ছবিই রথিকে বাংলাদেশের আনাচকানাচে পরিচিতি এনে দেয়। চলচ্চিত্রজগতে তিনি চাঁদনী নামে পরিচিত ছিলেন। এই ছবি মুক্তির পর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আর দেখা মেলেনি কোনো সিনেমায়। ২৭ বছর আগে সিনেমায় অভিনয় ছাড়লেও পরবর্তী সময়ে নাটক, টেলিছবি ও বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন। নয় বছর ধরে সেখানেও নেই। কোথায় আছেন সেই রথি?

দুই সন্তান আবরার আলভী দানিশ ও জান্নাতুল ফেরদৌসকে নিয়ে ঢাকার উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে থাকেন কানিজ রাবেয়া রথি। ছেলে বড়, পড়াশোনা শেষে ভিডিও মেকিংয়ের কাজ করছেন, মেয়ে মাইলস্টোন স্কুল থেকে এবার এসএসসি পাস করেছে। করোনার এই সময় বাড়িতেই থাকেন। বাড়ির উল্টো পাশে উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতাল। হাসপাতালের দিকে তাকালেই প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত রোগী দেখতে পান।

‘অবুঝ দুটি মন’ ছবিতে অভিনয় করে সাড়া ফেলেছিল রথি। ছবি: সংগৃহীত

রথি বললেন, ‘বাসার উল্টো দিকে হাসপাতাল হওয়ায় প্রতিদিনই দেখি, মরদেহ বের হচ্ছে, মানুষের কান্নাকাটি, আহাজারি। কান্নার শব্দ আমার বারান্দা পর্যন্ত আসে। এসব শুনে প্রায় রাতে ঘুমাতে পারি না। করোনা রোগীর স্বজনদের আহাজারিতে আমারও খুব কান্না পায়, খারাপ লাগে।’

কেমন আছেন জানতে চাইলে বললেন, ‘(হাসি) সন্তানদের নিয়ে ভালোই আছি। আমার ছেলে ফ্রিল্যান্স ভিডিও মেকিংয়ের কাজ করে। ইউএনএ-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়েও কিছু কাজ করেছে। মেয়ে তো এবার এসএসসি পাস করল।’

মা রথির সেলফিতে ছেলে আবরার আলভী দানিশ ও মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত

অভিনয়জগতের সঙ্গে রথি নেই নয় বছরের বেশি সময়। তবে ফেসবুকে তাঁর দেখা মেলে। কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে মডেলিং ও সিনেমায় কাজ করার সময়কার কিছু স্থিরচিত্র আপলোড করছেন। প্রসঙ্গটি মনে করিয়ে দিতেই রথি বললেন, ‘লকডাউনের এই সময়টায় কাজকর্ম সেরে হাতে সময় থাকে। ওই সময়ের কথা মনে পড়ে। ছবিগুলো পোস্ট করি, অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করি।’

‘আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী’ নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যান্ড তারকা জেমসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় রথির। ‘অবুঝ দুটি মন’ মুক্তির বছর দুয়েক আগে, ১৯৯১ সালের ১৭ নভেম্বর তাঁরা বিয়ে করেন। ইস্কাটনে কিছুদিন থাকার পর, বড় ছেলে দানিশের জন্মের পর, ১৯৯৫ সালে উত্তরায় বসবাস শুরু করেন।

‘অবুঝ দুটি মন’ সে সময়ের বেশ আলোচিত সিনেমা। যত দূর জানি, আপনাকে নিয়ে অনেক পরিচালক ছবি বানাতে চেয়েছিলেন। তারপরও করেননি? নিজেকে একদম আড়াল করে নিয়েছিলেন। কী সেই কারণ ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে রথি বলেন, ‘পুরোপুরি নায়িকা হিসেবে যাত্রা বিয়ের পর। জেমস সরাসরি জানিয়ে দেয়, কোনোভাবেই সিনেমায় অভিনয় করা যাবে না। আমিও ভাবলাম, সংসারে অশান্তি করে সিনেমায় অভিনয় করার কোনো অর্থ হয় না। সংসারটাই করি। জেমস চাইল, আমি যেন মাঝপথে শুটিং বন্ধ করে দিই। এ নিয়ে সংসারে খুব অশান্তি শুরু হলো। এসব নিয়ে প্রায় দিনই শুটিংয়ে যেতে হতো। কোনোভাবেই পারছিলাম না।’

‘অবুঝ দুটি মন’ ছবিটি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও হয়েছিল। সেখানেও ছিলেন না রথি। বললেন, ‘আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি। কোনোমতে ছবির ডাবিং শেষ করে বাসায় ঢুকে গেছি। এরপর আমি আর কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখিনি। চলচ্চিত্রের কেউ আমার কোনো খোঁজ পায়নি। কিন্তু যেই আমি সংসারের কারণে সিনেমা ছাড়লাম, ২০০৩ সালে সংসারটাও ভেঙে যায়। জেমস বেনজীরকে বিয়ে করে। আমাকে এক কাপড়ে উত্তরার বাসা থেকে বাবার বাড়িতে চলে যেতে হয়।’

সন্তানেরা বড় হওয়ার পর আবার অভিনয়ের ফেরেন রথি। ছবি: সংগৃহীত

সংসার ভেঙে যাওয়ার পর দুই সন্তানকে নিজের কাছে রেখে বড় করতে লাগলেন। বাবার ভূমিকা কেমন ছিল? রথি দাবি করেন, ‘একদম ছিল না। হঠাৎ হঠাৎ মন চাইলে ফোন করত, এরপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। অনেক আগে হাই–হ্যালো হতো, এখন তো তাও নেই। ঈদের মতো উৎসবে যেমন খবর নিত না, তেমনি ছেলেমেয়েদের জন্মদিন শুভেচ্ছা পর্যন্ত জানাত না। অথচ আমি শুনেছি, ও সব জায়গায় বলে বেড়ায় সন্তানদের সবকিছু চালায়। এই করোনায় সন্তানদের একটিবার খোঁজ নেয়নি। মেয়েটা কিছুদিন আগে এসএসসি পাস করেছে, ফলাফল বাবাকে হোয়াটসঅ্যাপে জানায়, এসএমএস দেখেছে, কিন্তু কোনো উত্তর দেয়নি। একটা উইশ পর্যন্ত করেনি,’ বললেন রথি।

অনেক বছর হয়ে গেল চলচ্চিত্রজগৎ ছেড়েছেন। আফসোস হয় না? রথি বললেন, ‘ওই মানুষটাকে বিয়ে করাটাই ছিল আমার জীবনের ভুল সিদ্ধান্ত। ভুল মানুষকে পছন্দ করেছিলাম বলে আমার সন্তানদের এভাবে বাঁচতে হচ্ছে। একটা সুন্দর সংসারের আশায় সম্ভাবনাময় চলচ্চিত্রজগৎও ছেড়ে দিতে পিছপা হইনি। অথচ সেই মানুষটা আমাকে না জানিয়েই ২০০২ সালে আরেকটা বিয়ে করে। আমি এত বছর দুই সন্তান নিয়ে কষ্ট করেছি। জীবনের ওপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। একবারের জন্যও কোনো দিন ওকে ফোন করে বলিনি, ছেলেমেয়ের এটা-ওটা দরকার। আমার পরিবারই আমার পাশে ছিল, তারা যদি পাশে না থাকত, আমাকে রাস্তায় নামতে হতো।’

তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট রথি। গ্রামের বাড়ি যশোরে হলেও বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা করেছেন ঢাকায়। মা ছাড়া বাবা ও মায়ের পরিবারের আর কেউই বিনোদন অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। মা পাকিস্তান রেডিও ও টেলিভিশনে গান গাইতেন।

নিজের মতো করে সন্তানদের নিয়ে আছেন রথি। ছবি: সংগৃহীত

রথির প্রথম ছবি ‘আগমন’ ছিল বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ববিতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ববিতা মুভিজের। রথি বললেন, ‘প্রথম ছবিতে যখন অভিনয় করি, তখন আমি স্কুলে পড়ি। “অবুঝ দুটি মন” ছবিতে নায়িকা, এরপরই নায়িকাজীবনের শেষ।’

সন্তানেরা বড় হওয়ার পর আবার অভিনয়ের ফেরেন রথি। তা ছিল ছোট পর্দায়। নাটক, টেলিছবি ও বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন। ২০১১ সালে মোস্তফা কামাল রাজের ‘চাঁদের নিজের কোনো আলো নেই’ ধারাবাহিকের পর আর তাঁকে দেখা যায়নি অভিনয়ে।

২০১০ সালের শেষ দিকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বিপু নামের এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন রথি। কিন্তু সেই বিয়েও টেকেনি। প্রসঙ্গটি তুলতেই রথি বললেন, ‘আমার আসলে কপালটাই খারাপ। এখন আর ওসব নিয়ে ভাবি না। নিজের মতো করে সন্তানদের নিয়ে থাকছি।’