
>জ্যাকিপুত্র হিসেবে নয়, নিজের পরিচয়ে বলিউডে রাজত্ব করতে চান টাইগার শ্রফ। তবে এ ক্ষেত্রে আজ তিনি অনেকটাই সফল। বলিউডের অ্যাকশন এবং নাচের হিরো হিসেবে টাইগার এ মুহূর্তে একটু এগিয়ে আছেন। হামেশাই রুদ্ধশ্বাস অ্যাকশন দৃশ্যে দেখা যায় এই তরুণ অভিনেতাকে। বাগির পর বাগি ২তে দেখা যাবে টাইগারের আরও চমক। আহমেদ খান পরিচালিত এই ছবিতে তাঁর নায়িকা দিশা পাটানি। আগামীকাল ৩০ মার্চ মুক্তি পাচ্ছে বাগি ২। প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার অফিসে টাইগার শ্রফের মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। পর্দার বাইরে শান্ত, নরমসরম এক অন্য টাইগার। আলাপে উঠে এল তাঁর পরিবার, ক্যারিয়ার এবং বিশেষ বান্ধবীর কথা।
প্রশ্ন: ‘বাগি’ বক্স অফিসে বেশ ভালোই সাড়া ফেলেছিল। এরপর ‘বাগি ২’ আসছে। নিজেই নিজের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। কেমন লাগছে?
টাইগার শ্রফ: সত্যি নিজের কাছে নিজেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছি। আর একটু চাপেই আছি বলতে পারেন। বাগি হিট ছবি ছিল। বাগী ২ ঘিরে মানুষের মনে আরও প্রত্যাশা তৈরি হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই বাগী ২-তে আরও চমক আনতে হয়েছে। আরও জবরদস্ত অ্যাকশন নিয়ে এসেছি এই ছবিতে। অ্যাকশন দৃশ্যগুলো আউটডোরে বেশি শুট করেছি। ভারী অস্ত্র নিয়ে ও হেলিকপ্টারে অ্যাকশন দৃশ্য শুটিং করেছি। দুটো ছবির গল্প সম্পূর্ণ আলাদা। এক অন্য বাগী ২ আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
প্রশ্ন: ‘বাগি ২ ’-এর রনি একজন আর্মি অফিসার। এর জন্য কতটা প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?
টাইগার শ্রফ: রনি হয়ে উঠতে আমাকে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়েছে। আর এটা আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। দুই হাতে দুই রকম অস্ত্র নিয়ে ফাইট করেছি। পাঁচ-ছয় কিলোর ভারী অস্ত্র নিয়ে ফাইট করা বেশ কষ্টকর ছিল।
প্রশ্ন: এর জন্য কি আপনাকে আলাদা ডায়েট ফলো করতে হয়েছে?
টাইগার শ্রফ: বাগি-তে আমাকে পেশিবহুল দেখানো হয়েছে। এ জন্য আমাকে একটু ওজন বাড়াতে হয়েছিল।
প্রশ্ন: সারাক্ষণ কড়া ডায়েটের মধ্যে থাকেন। কখনো নিয়ম ভাঙতে ইচ্ছে করে না?
টাইগার শ্রফ: ভাঙি তো। প্রতি রোববার নিয়ম ভেঙে সবকিছু খাই। রোববার বড়া পাও থেকে আইসক্রিম—কোনো কিছু বাদ দিই না।
প্রশ্ন: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানান ভয়ংকর অ্যাকশন দৃশ্য করেন। নিশ্চয়, বাবা-মা দুশ্চিন্তায় থাকেন আপনাকে নিয়ে?
টাইগার শ্রফ: অ্যাকশন দৃশ্যের আগে আমাদের ওয়ার্কশপ হয়। আমরা প্রচুর মহড়া করি। এ ছাড়া সেটে সাবধানতার অনেক ব্যবস্থা থাকে। তাই অতটা ঝুঁকি থাকে না। আর এসব দৃশ্য শুট হওয়ার আগে মাম্মাকে এবং ড্যাডিকে কিছু বলি না। সত্যি আমি যখন মারামারির শুটিং করি, ওনারা আমায় নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় থাকেন।
প্রশ্ন: এ প্রজন্মের অভিনেতারা নিজেদের এক ঘরানায় বেঁধে রাখছেন না। কিন্তু আপনার গায়ে অ্যাকশন হিরোর তকমা লেগে গেছে। এই তকমা ঝেড়ে ফেলতে চান না?
টাইগার শ্রফ: এই তকমা লাগলে ক্ষতি কী (সহাস্যে)। রুজিরুটি তো চলছে। তবে এরপর করণ জোহরের স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার ২তেআমাকে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের ছবিতে দেখতে পাবেন। তারপর অবশ্য সব অ্যাকশনধর্মী ছবিতে কাজ করব। যশরাজের ছবিসহ বাগি থ্রি, র্যাম্বো-তেও কাজ করব। আসলে আমার কাছে সব অ্যাকশনধর্মী ছবির প্রস্তাব বেশি আসে। আমি বলিউডে নিজের অন্য একটা ইমেজ বানাতে চাই।
প্রশ্ন: যশরাজ ব্যানারের ছবিতে আপনি এবং হৃতিক রোশন একসঙ্গে কাজ করবেন বলে শুনেছি। হৃতিককে নাকি আপনি নিজের গুরু মানেন। নিশ্চয় খুবই খুশি?
টাইগার শ্রফ: আমি এখন থেকেই উত্তেজিত। খুব ভয়ও পাচ্ছি। হৃতিক স্যারের মতো ট্যালেন্টেড অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার কথা ভাবতে পারছি না। তবে আরও বেশি করে পরিশ্রম করব। দর্শকের জন্য ভালো ভিজ্যুয়াল ট্রিট হবে হৃতিক স্যার এবং আমাকে এক ফ্রেমে দেখা। সব থেকে বড় কথা, ওনার মতো তারকার সঙ্গে কাজ করতে করতে অনেক কিছু শিখতে পারব। হৃতিক স্যার একটা দৃশ্য কীভাবে কল্পনা করেন, কীভাবে প্রস্তুতি নেন, নাচের দৃশ্যের আগে কীভাবে নিজেকে তৈরি করেন, তা আমি শিখতে চাই। আসলে ওনার থেকে শেখার শেষ নেই।
প্রশ্ন: অ্যাকশনের ক্ষেত্রে আপনি আপনার গুরুর থেকে একটু বেশি এগিয়ে আছেন বলে মনে হয়?
টাইগার শ্রফ: এগিয়ে আছি বলা ভুল হবে। আমার এবং হৃতিক স্যারের অ্যাকশন স্টাইল আলাদা বলতে পারেন। তাই এ ক্ষেত্রে তুলনা করা ভুল হবে।
প্রশ্ন: ‘বাগি ২’ ছবিটা আপনার কাছে আরও বিশেষ বলে মনে হয়। কারণ, এই ছবিতে আপনাকে আপনার বিশেষ বান্ধবী মানে দিশার সঙ্গে রোমান্স করতে দেখা যাবে...
টাইগার শ্রফ: (লাজুক হেসে) তা বলতে পারেন। দিশা আমার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আসলে পর্দার বাইরে আমাদের মধ্যে একটা কেমিস্ট্রি আছে, তাই পর্দাতে আরও সহজভাবে তা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি আমরা। কোনো আবেগঘন দৃশ্যে আমরা কাজ করেছি অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
প্রশ্ন: দিশা আপনার চুলের স্টাইলের ভক্ত। আপনি দিশার কিসের ভক্ত?
টাইগার শ্রফ: (জোরে হেসে) আমি দিশার হাসি খুব পছন্দ করি। ওর হাসির আমি বড় ভক্ত।
প্রশ্ন: ‘গুজব’ শব্দটি বলিউড নায়ক-নায়িকাদের ছায়ার মতো অনুসরণ করে। আপনার বাবার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তখন কীভাবে নিতেন এসব?
টাইগার শ্রফ: হা, হা, হা (জোরে হেসে) এসবে কেউ কান দেয় নাকি। বাবার নামে গুজব শুনে আপসেট হতাম। ভাবতাম, বাবা মাকে চিট করছে। বাবার সঙ্গে মাধুরীর নামে গুজব ছড়িয়েছিল। আমি বলেছিলাম, ‘বাবা বিবাহিত। বাড়িতে স্ত্রী আছে। এরপর কী করে পরকীয়া করে।’ এখন বুঝি এসব শুধু গুজবই।
প্রশ্ন: আপনার বিশেষ বান্ধবীকে নিয়ে আপনার নামেও নানান গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। নিজের ক্ষেত্রে কী বলবেন?
টাইগার শ্রফ: বললাম না, এসব আমি পাত্তা দিই না। আমি জানি, প্রচারের আলোয় থাকলে এসব রটে। আমি খুব একটা পত্রিকা পড়ি না। তাই এসব কিছু জানতেও পারি না।
প্রশ্ন: বাবার ছায়া থেকে বের হতে চেয়েছিলেন, না বাবার ছায়া অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন?
টাইগার শ্রফ: আমি সব সময় বাবার ছায়া থেকে বের হতে চেয়েছিলাম। আমি কখনোই চাইনি আমার পেছনে বাবার কোনো ট্যাগ থাকুক। সবাই আমায় শুধু জ্যাকি শ্রফের ছেলে হিসেবে যেন না চেনে। আমি যেন টাইগার শ্রফ হয়ে নিজের পরিচয় তৈরি করতে পারি। আমি কোনোভাবেই বাবার ছায়াপথে হাঁটতে চাই না।
প্রশ্ন: শুনেছি, আপনি খেলোয়াড় হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অভিনেতা হলেন। কোথাও মনে হয় না বাবার ছায়াপথই অনুসরণ করেছেন?
টাইগার শ্রফ: একদম ঠিকই শুনেছেন। আমি খেলোয়াড় হতেই চেয়েছিলাম। তবে বাবার পথ অনুসরণ করে অভিনয়ে আসিনি। আমি খেলাধুলা প্রচণ্ড ভালোবাসি। বিশেষ করে ফুটবলের বড় ভক্ত। আর ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন ভারতীয় ফুটবলের সে রকম ভবিষ্যৎ ছিল না। তাই খেলাটা ছেড়ে দিতে হল। বাস্কেটবলও ভালো খেলতাম।
প্রশ্ন: আপনার মধ্যে তো বাঙালি রক্ত বইছে। আপনার ‘নানা’ বাঙালি। বাঙালি সংস্কৃতির কতটা প্রভাব আপনার মধ্যে পড়েছে?
টাইগার শ্রফ: নানার সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। আর আমার সেভাবে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় হয়নি।
প্রশ্ন: পর্দার টাইগারের সঙ্গে পর্দার বাইরের টাইগারের কোনো মিল নেই। এই শান্ত, লাজুক টাইগার পর্দাতে একদম বিপরীত। এটা কী করে সম্ভব?
টাইগার শ্রফ: (সশব্দে হেসে) আমি আমার মায়ের মতো একটু শান্ত প্রকৃতির। আবার বাবা খুবই আমুদে, হইহুল্লোড়ে মানুষ। আমি ভালোবাসি নিজের জগতে বসবাস করতে। নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে। অন্যের সঙ্গে খুব একটা কথা বলি না। এ জন্য আমাকে অনেকে অসামাজিক ভাবে। তবে অ্যাকশন এবং নাচ—দুটোই আমার প্যাশন। এই দুটো ক্ষেত্রে আমি অন্য টাইগার হয়ে যাই। তাই আমাকে পর্দাতে অন্য রকম দেখেন আপনারা।