
শ্রাবণের ধারা ধুয়ে দিয়ে গেছে সব। এখনো শুকায়নি ভেজা পাতা, পথঘাট। বৃষ্টিধোয়া স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় গতকাল বসে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের আসর ‘কী হাওয়ায় মাতালো’।
জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আসরটির আয়োজনে ছিল রবিরশ্মি। আসরটি গানের, তবে ছিল কিছু কথাও। সংগঠনটির পরিচালক ও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মহাদেব ঘোষ বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান নিয়ে এই আয়োজন। এই সংগঠনের নামকরণ করেছিলেন কলিম শরাফী। তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা। এই দলের সদস্যরা খুব নিবেদিত। এঁরা সবাই কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত। তবুও রথীন্দ্রনাথের গান গাইতে পেরে সবাই খুশি। এটা কম পাওয়া নয়।’
এরপর শুরু হয় রবীন্দ্রনাথের গান। ‘বিশ্ববীণারবে বিশ্বজন মোহিছে’ সম্মেলক গান দিয়ে শুরু হয়। গাওয়া হয় ‘ওই কি এলে’, ‘বুঝি এল, বুঝি এল ওরে প্রাণ’, ‘উতল ধারা বাদল ঝরে’, ‘পুব হাওয়াতে দেয় দোলা’, ‘এসো নীপবনে’, ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে’, ‘নীল অঞ্জন ঘন পুঞ্জছায়ায়’,‘আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে’, ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’, ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’, ‘আমি তখন ছিলেম’, ‘আষাঢ় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো’, ‘যায় দিন শ্রাবণ দিন যায়’ গানগুলো।
গান করেন মহাদেব ঘোষ, সিলভিয়া সমদ্দার, উত্তম কুমার শর্মা, ফারহিন ইসলাম, দীপ্তি চৌধুরী, মাহদী সাবিয়ার রহমান, রাজিব ফেরদৌস, বিষ্ণুপদ দাস, শারমিন আক্তার প্রমুখ।
হরবোলার আবৃত্তি-সন্ধ্যা
ছোট পরিসরে আয়োজন। বাইরে বৃষ্টি, ভেতরে কবিতা। দর্শকও বাড়ল ধীরে ধীরে। জমে উঠল হরবোলার বর্ষার কবিতা নিয়ে ‘বর্ষাযাপনের কবিতা’ শীর্ষক আয়োজনটি।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে হরবোলার সাতজন বাচিক শিল্পীর কণ্ঠে উঠে আসে খ্যাতিমান সব কবির ১৬টি কবিতা। আবৃত্তি করেন মজুমদার বিপ্লব, জোবায়দা লাবণী, সাবহা ফেরদৌসী, অফি খান, রাজিয়া কবির, আতিয়া ফারজানা জেসিকা ও বৃষ্টি কবীর।
এই আয়োজনে বিদ্যাপতির ‘পদাবলি’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’, ‘বাঁশি’, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘উৎসবের দিনে আমি রবীন্দ্রনথের কবিতা পড়ি না’, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘যখন বৃষ্টি নামল’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রূপালী মানবী’, আবুল হাসানের ‘বৃষ্টিচিহ্নিত ভালোবাসা’, নির্মলেন্দু গুণের ‘নেই কেন সেই পাখি’, মহাদেব সাহার ‘বৃষ্টি নামুক’, শুভা দাশগুপ্তের ‘মেঘ বলল, যাবি’, সুনেত্রা ঘটকের ‘রচনার রবীন্দ্রনাথ’ ইত্যাদি কবিতা আবৃত্তি করা হয়।
টাঙ্গাইলে চর্যাসহজিয়া গানের দলের সংগীত আয়োজন
‘কায়া তরুবর পঞ্চবি ডাল, চঞ্চল চীএ পইঠো কাল’ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কাব্যসংকলন চর্যাপদের প্রথম কবিতা বা পদ এটি। গতকাল মঙ্গলবার নওগাঁ সার্কিট হাউস মিলনায়তনে যখন এটি লোকগানের সুরে গাওয়া হলো, তখন সমবেত সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনলেন। বেশির ভাগ শ্রোতার কাছে নতুন অভিজ্ঞতা ছিল আয়োজনটি।
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র নিদর্শন চর্যাপদ। প্রাচীন এই নিদর্শন শুধু কবিতা বা পদে সীমাবদ্ধ না রেখে সেগুলোকে সংগীত হিসেবে পরিচিত করানোর তাগিদ থেকে এবং চর্যাপদ প্রকাশের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘চর্যাসহজিয়া’ নামের একটি গানের দল বিশেষ অভিযাত্রা শুরু করেছে। পাঁচ দিনব্যাপী এই অভিযাত্রা শুরু হয়েছে গত সোমবার নওগাঁর সোমপুর বিহারে আলোচনা সভা, চর্যাগান ও চর্যানৃত্যের মধ্য দিয়ে। গতকাল সকালে নওগাঁ সার্কিট হাউস মিলনায়তনে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দলটি। পরে দলটির শিল্পীরা উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের সামনে চর্যাগান পরিবেশন করেন।
পাঁচ দিনব্যাপী এই অভিযাত্রায় নওগাঁ সরকারি কলেজ, ধামইরহাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন, নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন এবং জয়পুরহাট শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও চর্যা গান-নৃত্য পরিবেশন করবে সংগঠনটি।
চর্যাসহজিয়া নামের গানের এই সংগঠনটির কর্ণধার হলেন টাঙ্গাইল সা’দত কলেজের উপাধ্যক্ষ ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আলীম মাহমুদ। চর্যাপদ যে সাহিত্য আঙ্গিকে মূলতই গান এবং সেই গানের পরিসরে পরিচিতি দিতে চর্যাপদের পদগুলোতে সুর দিয়ে সেগুলোকে গানে রূপান্তর করতে দুই যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন তিনি।