সংস্কৃতি সংবাদ

'মঞ্চে ফিরলে সেলিমের নাটক করব'

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে গতকাল আলী যাকেরের হাতে সেলিম আল দীন পদক তুলে দেন তাঁরই নাট্য সতীর্থ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর l ছবি: প্রথম আলো
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে গতকাল আলী যাকেরের হাতে সেলিম আল দীন পদক তুলে দেন তাঁরই নাট্য সতীর্থ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর l ছবি: প্রথম আলো

মঞ্চে উপস্থিত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের একসময়ের তুখোড় দুই অভিনেতা। আলী যাকের ও আসাদুজ্জামান নূর। তবে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কোনো অভিনয় নয়, দেওয়া হয় অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা। মঞ্চের ‘গ্যালিলিও’ আলী যাকেরকে সেলিম আল দীন পদক তুলে দেন তাঁরই নাট্য সতীর্থ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

ছয় দিনব্যাপী সেলিম আল দীন উৎসবের দ্বিতীয় দিনে এ পদক দেওয়া হয়েছিল। সেদিন অসুস্থতার কারণে সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি আলী যাকের। তাঁর হয়ে পদক কেউ গ্রহণ করেননি। কেননা পদকটি নিজ হাতেই নিতে চেয়েছিলেন তিনি। পদক পেয়ে কি আপ্লুত যাকের? বললেন, ‘আজকে শিমূল (শিমূল ইউসুফ) প্রথমে এসে চোখে জল এনে দিল। তারপর কিছু অতীতের কথা তুলে নূর (আসাদুজ্জামান নূর) আবারও সজল করে তুলল।’

অনুভূতি বলতে গিয়ে যেন চলে গেলেন সেই অতীতে। বললেন তখনকার নাটকজীবনের স্মৃতি। বললেন, ‘কত কথা মনে এসে যায়। কত গল্প। তখন সবকিছুতেই আনন্দ খুঁজে পেতাম। নিবেদিতপ্রাণ, মেধা, পরিশ্রম দিয়ে কাজ করেছি, এগুলো অর্থহীন কথাবার্তা। সেটি একটা আনন্দের সময় গেছে আমাদের। পেশার জন্য দিনটাকে খরচ করে সন্ধ্যা বেলায় মিলিত হওয়া ছিল অবধারিত। সেই সময় আমাদের যাঁরা দেখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান পুরুষ সেলিম আল দীন। আজকে যদি এমন হতো সেলিম বেঁচে আছেন, তাঁর হাত থেকে আমি আজকে এই পদকটি নিচ্ছি—এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কিছু হতে পারে না। সেলিম, আপনি যেখানে থাকুন না কেন, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা, আপনার লেখার প্রতি ঈর্ষা। আপনি জানুন আপনার একজন ভক্ত এ মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন। একটাই দুঃখ, সেলিম আমাকে কোনো দিন বলেননি তাঁর একটা নাটক করেন। যদি মঞ্চে ফিরি, তবে কোনো একদিন সেলিমের নাটক করব।’

১৯৪৪ সালে চট্টগ্রামে জন্ম হয় আলী যাকেরের। ১৯৭২ সালে আরণ্যক নাট্যদলের কবর নাটক দিয়ে অভিনয়যাত্রা শুরু। একই বছর যোগ দেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে। অভিনয় করেন দেওয়ান গাজীর কিসসা, নূরলদীনের সারাজীবন, গ্যালিলিও ইত্যাদি নাটকে। সৈয়দ শামসুল হকের সৃষ্টি চরিত্র নূরলদীনের চরিত্রে অভিনয় করে জায়গা করে নিয়েছেন দর্শক হৃদয়ে। তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনাও দিয়েছেন। টিভি নাটকে অভিনয় করে আছেন উজ্জ্বল হয়ে।

আলী যাকেরকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। সভাপতি ছিলেন উৎসবের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। পদক প্রদান অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চায়িত হলো মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক নীলাখ্যান। কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ গল্প অবলম্বনে রচনা করেছেন আনন জামান, নির্দেশনা দিয়েছেন ইউসুফ হাসান।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে গতকাল ছিল এ আয়োজন। অসুস্থ শরীর নিয়ে মঞ্চে হয়ে উঠলেন উজ্জ্বল। হাতে থাকা লাঠিটি হয়ে উঠল তরবারি। উচ্চারণ করলেন ম্যাকবেথ নাটকের সংলাপ। আমাদেরও মনে যেন বেজে চলল আলী যাকেরকে নিয়ে শিমূল ইউসুফের পাঠ করা প্রশংসাভাষ্য, ‘তুমি উদ্‌যাপিত হবে ভাবীকালে, শিল্পের লড়াইয়ে আসা নতুন কারিগর খুঁজবে প্রেরণা, তোমার নান্দনিক দেহ আর কণ্ঠের ভাষ্যে।’