দিব্যা ভারতী এখনো সাজিদের পরিবারের একজন

আজও সাজিদের পরিবারের একজন হয়েই যেন আছেন দিব্যা ভারতী। ছবি: ফেসবুক থেকে
আজও সাজিদের পরিবারের একজন হয়েই যেন আছেন দিব্যা ভারতী। ছবি: ফেসবুক থেকে

বয়স তখন উনিশ। ক্যারিয়ারের চাকা সবে ঘুরতে শুরু করেছে। ছেলেদের মানিব্যাগে, আয়নার পেছনে, সেলুনে কিংবা মেলায় অথবা ভিসিআরের ক্যাসেট কভারে থাকত তাঁর লাস্যময়ী ছবি। বলিউডে দৌড়ে চলার সময় কেবল শুরু। আর তখনই দমকা হাওয়ায় কোথায় উড়ে গেলেন যেন ক্ষণজন্মা অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী।

এই অল্প সময়েই কি মাতিয়ে যাননি ভক্তদের হৃদয়। না হলে জন্মদিন কিংবা মৃত্যুদিন, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ভরে উঠবে কেন দিব্যার ছবি দিয়ে! স্বামী সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা দিব্যার ব্যবহৃত জিনিস কেন রাখবেন আগলে, আলগোছে।

দিব্যা মারা যান ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল। ২৭ বছর কেটে গেছে। অথচ আজও সাজিদের পরিবারের একজন হয়েই যেন আছেন দিব্যা। দিব্যার শেষ ব্যবহৃত পারফিউম, তার চুলের যত্ন–আত্তির দ্রব্যসামগ্রী এখনো যত্ন করে রেখেছেন সাজিদ। আর এই খবর জানালেন সাজিদেরই পরের স্ত্রী ওয়ার্দা নাদিয়াদওয়ালা।

দিব্যার মৃত্যুতে ভক্তদের হৃদয় চূর্ণ হয়ে যায়। তাই সাজিদের সঙ্গে আর কাউকেই মানতে নারাজ এই ভক্তকুল। আর তাই ট্রলের শিকার হন ওয়ার্দা। কিন্তু ওয়ার্দা নিজেও যে দিব্যার ভক্ত! দিব্যার জয়গা কখনোই নিতে চাননি তিনি। দিব্যা তাঁর কাছেও পরম সম্মানের। তাঁর পরিবারের একজন। এমনটাই জানালেন সম্প্রতি। ভক্তদের অযথা ট্রল না করার আহ্বান জানালেন।

ওয়ার্দা ভারতীয় গণমাধ্যমকে বললেন, ‘দিব্যা আমাদের জীবনের একটি অংশ। সাজিদ এখনো ভোলেনি তাকে।’

শুধু কি তা–ই, ওয়ার্দার সঙ্গে সাজিদের প্রথম সাক্ষাতের বিষয়টিও কাকতালীয়ভাবে দিব্যাকে কেন্দ্র করে। ওয়ার্দা বলন, ‘হ্যাঁ, বিস্ময়করভাবে এটাই সত্য যে আমাদের দুজনের প্রথম দেখা হওয়ার তিনিই ছিলেন মাধ্যম। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সাজিদের একটি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েই পরিচয় হয়েছিল। অবশ্য সাজিদ, দিব্যার বাবা, আমার শ্বশুর আমাকে বলতেন, আমি নাকি দেখতে একেবারেই দিব্যার মতো, একই ব্যবহার, একই আচরণ।’

এমনকি দিব্যার বাবা ওয়ার্দাকে ডাকতেন মেয়ে হিসেবেই। ওয়ার্দা বলেন, ‘তাঁর জায়গায় নিজেকে দেখার কোনো অধিকার আমার নেই। আমি আমার নিজের জায়গা তৈরি করেছি। তাঁর স্মৃতি সব সময়ই অসম্ভব সুন্দর। সুতরাং আমাকে নিয়ে ট্রল করা বন্ধ করুন দয়া করে। দিব্যা আমাদের জীবনেরই অংশ।’

দিব্যা কতখানি সাজিদের পরিবারে স্থান করে নিয়েছেন, তারও উদাহরণ দিলেন ওয়ার্দা। তাঁর কথা, ‘আমার ছেলেমেয়েরা যখন তাঁর ছবি দেখে, তাঁরা বলে আমাদের বড় মা।’

বলিউডের ক্ষণজন্মা অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী। ছবি: ফেসবুক থেকে

দিব্যার জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। তাঁর বাবা ওমপ্রকাশ ভারতী ছিলেন জীবনবিমাকর্মী। মা মিতা ভারতী গৃহিণী। ছোট ভাই কুনাল ও সৎবোন পুনমের সঙ্গে মুম্বাইয়ে বেড়ে ওঠা দিব্যার।

১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া দিব্যা ভারতীর প্রথম ছবি ‘বব্বিলি রাজা’ এখন অবধি সফলতম তেলেগু ছবির মধ্যে অন্যতম। প্রথম দুই বছর তেলেগু ও তামিল ছবিতে অভিনয়ের পর হিন্দি ছবির জগতে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯১ সাল থেকে। ১৯৯২ সালটি ছিল হিন্দি ছবিতে দিব্যা ভারতীর বছর। ওই একটি বছরে দিব্যা অভিনীত ১২টি ছবি মুক্তি পায়।

১৯৯২ সালেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার। ভারসোভার তুলসী অ্যাপার্টমেন্টে নাদিয়াদওয়ালাদের ফ্ল্যাটেই গোপনে বিয়ে করেন দুজনে। বিয়ের বিষয়টি একেবারেই গোপন রাখা হয়।

১০ মে দিব্যা-সাজিদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীর এক মাস আগেই দুর্ঘটনায় মারা যান দিব্যা ভারতী। দিব্যার আকস্মিক মৃত্যু ঘটে ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায়। বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটের জানালা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন দিব্যা। নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।