Thank you for trying Sticky AMP!!

পাপারাজ্জিদের নিয়ে আতঙ্ক বলিউডে

পাপারাজ্জিদের ক্যামেরায় সারা আলী খান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

খুব সরলীকরণ করে বলা যায়, পাপারাজ্জি সম্পর্কে মানুষের যতটা না ইতিবাচক ধারণা, তার চেয়ে বেশি নেতিবাচক। তারকাদের কাছে পাপারাজ্জি এক আতঙ্কের নাম। তাঁদের অত্যাচারে ‘গোপনীয়তা’ শব্দটাকে রীতমতো বিসর্জন দিতে হয়েছে। বলিউড তারকা আর পাপারাজ্জিদের সম্পর্ক তাই অম্ল-মধুর। তবে সময়ের সঙ্গে তারকাজগতে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে পাপারাজ্জির। এখন তো তাঁদের আদর করে রীতিমতো ‘প্যাপ’ বলে ডাকা হচ্ছে! আর পাপারাজ্জিদের তোলা ছবি দেখে বলা হচ্ছে, ওহ, আ’ম প্যাপড।

পাপারাজ্জি কী, কেন?
পাপারাজ্জি বা পাপারাৎসি কিন্তু বহুবচন। শব্দটি এসেছে ইতালীয় শব্দ পাপারাজ্জো থেকে। যাঁরা তারকাদের না জানিয়ে গোপনে তাঁদের ছবি তোলেন। তারকারা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের ছবি তোলার জন্য নিশ্চয়ই আলোকচিত্রীদের ডাকবেন না। কিন্তু ক্যামেরার বাইরের সেই জীবন তো আরও বেশি করে জানতে চায় আমজনতা। এই সমস্যার সমাধানের নাম পাপারাজ্জি। তাঁরা সাধারণত স্বাধীন। এসব ছবি তাঁরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও মিডিয়া হাউসের কাছে বিক্রি করে।
‘সে রকম’ ছবি তুলতে পারলে একটি ছবি বিক্রি করেই কয়েক বছর নিশ্চিন্তে পায়ের ওপর পা তুলে কাটিয়ে দেওয়া যায়। যেমন প্রিন্সেস ডায়ানার বিভিন্ন ছবি অত্যন্ত উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়েছে। উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়েছে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের কোলে আরাধ্যর প্রথম ছবি, শাহরুখ খানের ছোট ছেলে আব্রাম, রণবীর কাপুর ও ক্যাটরিনা কাইফের অবকাশ যাপনের ছবি বা ‘সঞ্জু’ ছবিতে রণবীর কাপুরের ফার্স্ট লুকও। এই যে এয়ারপোর্ট লুক, জিম লুক—এগুলো কিন্তু পাপারাজ্জিদের সৃষ্টি। পাপারাজ্জিদের ছবি নির্ভর খবরগুলো কিন্তু ‘এক্সক্লুসিভ’। মানে এই খবর আর অন্য কারও ঝুলিতে নেই।

অজয় বললেন, ‘নো ম্যাম, থ্যাংক ইউ’
দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে বলিউড তারকাদের অনুসরণ করছেন অজয় সুরভী। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই গাড়ির নম্বর মুখস্থ অজয়ের। গাড়ির পিছে নির্দিষ্ট দূরত্বে অনুসরণ করতে করতে সবার গাড়ির নম্বর বলতে পারেন তিনি। কখনো এয়ারপোর্টে, জিমে, বড় রেস্টুরেন্টের সামনে সারা দিন ওত পেতে থাকেন। কিন্তু কোনো পত্রিকায় বা ম্যাগাজিনে কখনো তাঁর নাম ছাপেনি। বাসায় যখন মা, স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে রাতের খাবার খান আর টিভি দেখেন, তখন অজয়ের তোলা ছবির নিউজ দেখায়। অজয় পরিবারকে জানালে কেউ নাকি বিশ্বাসই করে না!
বান্দ্রা থেকে জুহু পর্যন্ত কত তারকাদের যে পিছু পিছু এসেছেন, গিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। কে কখন কোথায় যান, কোত্থেকে বের হন, সব মুখস্থ তাঁর। একবার তো জাহ্নবী জিম থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার সময় হাসতে হাসতে অজয়কে বললেন, ‘আসেন, গাড়ির ভেতরে উঠে পড়েন।’ অজয় চটপট জবাব দেন, ‘নো ম্যাম, থ্যাংক ইউ।’ পতৌদি যাওয়ার পথে মুম্বাই এয়ারপোর্টে সাইফ আলী খানের ঘাড়ের ওপর পা দোলানো তৈমুরের ছবি তুলতে গেলে অজয়কেই সাইফ বলেছিলেন, ‘এবার ক্ষান্ত দাও, ছেলেটা তো অন্ধ হয়ে যাবে!’

পাপারাজ্জিদের ক্যামেরা থেকে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া


এই পাপারাজ্জি নিজেই তারকা
মানব মঙ্গলানি এই পেশায় আছেন ১৫ বছরের বেশি। মানব জানান, তাঁর কোম্পানির একজন সব সময় এয়ারপোর্টে থাকেন। মানব বলেন, একটা ছবি তোলার ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে সেটা হাউসে পৌঁছানো দরকার। নতুবা এখন মার্কেটে এত ফটো সাংবাদিক! একবার ইনস্টাগ্রামে এ ধরনের একটা ছবি চলে যাওয়া মানে তাঁর তোলা ছবি একেবারে মূল্যহীন। তবে এই পাপারাজ্জি অন্যদের চেয়ে বেশ ভালো অবস্থানে আছেন। মানব মঙ্গলানিকে বেশির ভাগ তারকা চেনেন। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ার প্রায় পাঁচ লাখ। তিনিই ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের কোলে আরাধ্যর প্রথম ছবিটা তুলেছিলেন। সেই ছবি কত দামে বিক্রি করেছেন? জবাব দিতে গিয়ে প্রথমে গালভরা হাসি দিলেন। শেষে বললেন, ‘না, এটা বলা যাবে না।’

শাহরুখ খানের সঙ্গে মানব মঙ্গলানি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া


আছেন নারী ‘প্যাপ’
সানজানা শর্মা জানান, ভারতে অনুষ্ঠান কভার করার জন্য অনেক নারী আলোকচিত্রী আছেন। কিন্তু তাঁর জানামতে, একমাত্র নারী তিনিই। রাত ৩টা বা সাড়ে ৩টা থেকে তাঁর কাজ শুরু হয়। তিনি মূলত লেট নাইট পার্টিগুলো কভার করেন। এই নারী পাপারাজ্জি আরও জানান, একজন পুরুষ পাপারাজ্জি যা যা করেন, তিনিও তাই তাই করেন। আর তিনি বেতন বা অ্যাসাইনমেন্টের ক্ষেত্রে কখনো কোনো বৈষম্য পাননি।

পাপারাজ্জিদের তোলা জাহ্নবীর ‘জিম লুক’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া


পাপারাজ্জি হতে কী লাগে?
অবশ্যই বাইক থাকতে হবে। তা না হলে ‘ফলো’ করবেন কীভাবে? তবে সবাই জানালেন, এটা নেশার মতো। এই নেশা কারও ভেতর না থাকলে পাপারাজ্জি হওয়া সম্ভব নয়। অজয় সুরভীর কথায় ঝরে পড়ে দুঃখও। বললেন, ‘আমি চাই না, আমার সন্তান এই কাজ করুক। কারণ, এখানে কোনো সম্মান নেই। কোথাও নাম ছাপা হয় না। কী করি, জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতে পারি না। মানুষ বোঝেও না।’
তবে ইদানীং চিত্রটি বদলে যাচ্ছে বলেও বিশ্বাস এই প্যাপদের।

পাপারাজ্জিদের ক্যামেরায় শাহরুখ খানের ছোট ছেলে আব্রাম আর মেয়ে সুহানা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া


পাপারাজ্জিদের যত ভুল
অজয় সুরভী বিশ্বাস করেন, পাপারাজ্জিরাও ভুল করেন। কোনো তারকা যখন বলেন, আজ মুড নেই, প্লিজ ছবি তুলবেন না, অজয় তোলেন না। অজয় বলেন, ‘এই সম্মানটুকু তো অবশ্যই করা উচিত। একবার অর্জুন কাপুর আমাকে দেখে ডাকেন। তারপর তোলা ছবিগুলো ডিলিট করতে বলেন। আমিও সঙ্গে সঙ্গে ডিলিট করে দিই।’ সাইফ আলী খান যা বলেছিলেন, ঠিক বলেছিলেন মনে করেন তিনি। ক্যামেরার ফ্ল্যাশে শিশুদের চোখের ক্ষতি হয়। কিন্তু সঙ্গে আরও বলেন, ‘আমরা কী করব, আমাদেরও তো বাঁচতে হবে!’ তবে কোনো তারকা যদি নিষেধ করেন, তা মেনে ছবি তোলেন তিনি।

পাপারাজ্জি বৈধ?
এ নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে। একপক্ষ জোর গলায় বলেন, নীতি বলে তো একটা কথা আছে! তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন একান্তই তাদের। সেখানে ক্যামেরার অনুপ্রবেশ ঠিক নয়। আবার অনেকে তর্ক জুড়ে বসেন, যা দেখানো হয় বা বলা হয়, সেটা প্রকৃত সাংবাদিকতা নয়। প্রকৃত সাংবাদিকতা হলো, যেটা আড়াল করা হয়, সেটা খুঁজে বের করে আনা। এভাবে তাঁরা পাপারাজ্জিদের বৈধতা দেন। তবে বৈধ হোক আর অবৈধ, জনপ্রিয়তা বাড়ছে পাপারাজ্জিদের। বাড়ছে গ্রহণযোগ্যতা। ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন একবার বলেছিলেন, ‘আরাধ্য বেশ ভালোভাবে সামলাচ্ছে পাপারাজ্জিদের। তবে মা হিসেবে আমি ওকে আড়ালে রাখতে চাই। তাঁদের কাজ ছবি তোলা, আমার কাজ আড়াল করা, সতর্ক থাকা।’

তৈমুরের সঙ্গে খুবই মধুর সম্পর্ক পাপারাজ্জিদের। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

পাপারাজ্জি আর একজন তৈমুর
পাপারাজ্জিদের জন্যই এখন তারকারা এয়ারপোর্টে সেজেগুজে আসেন, জিমেও নতুন নতুন জামা পরে আসেন। আর বলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিশু তারকা তৈমুর আবার পাপারাজ্জিদের খুব পছন্দ করে। বাইরে বের হলেই চারদিকে খুঁজে খুঁজে বের করে পাপারাজ্জিদের। তারপর হাত নেড়ে কথা বলে, পোজ দেয়। মা কারিনা কাপুর খান বলেছেন, ‘পাপারাজ্জিরাই ওর সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমি বরং পাপারাজ্জিদের কাছ থেকে ওর ছবি নেব।’

সূত্র: বলিউডের পাপারাজ্জিদের ওপর নির্মিত দ্য কুইন্টের তথ্যচিত্র, জি নিউজ, পেজ সিক্স ও বলিউড হাঙ্গামা