কন্নড় সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী বি সরোজা দেবী আর নেই। আজ সোমবার শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন এই অভিনেত্রী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। খবর এনডিটিভির
মাত্র ১৭ বছর বয়সে সিনেমায় পা রাখেন সরোজা দেবী। ১৯৫৫ সালে মুক্তি পাওয়া কন্নড় ছবি ‘মহাকবি কালিদাস’ দিয়েই শুরু হয় তাঁর অভিনয়যাত্রা। এরপর ১৯৫৮ সালে এম জি রামচন্দ্রনের বিপরীতে ‘নাডোডি মান্নান’ ছবিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পান। ছবির সাফল্যে তিনি হয়ে ওঠেন পরিচিত নাম, শুরু হয় তামিল সিনেমায় তাঁর দীর্ঘ রাজত্ব।
চার দশকের বেশি সময়জুড়ে বি সরোজা দেবী অভিনয় করেছেন ২০০-র বেশি সিনেমায়—কন্নড়, তামিল, তেলেগু ও হিন্দি ভাষায়। শিবাজি গণেশন, জেমিনি গণেশন, রাজকুমার ও এনটি রামা রাওয়ের মতো প্রথম সারির নায়কদের সঙ্গে একাধিকবার জুটি বেঁধেছেন তিনি।
১৯৫৫ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত টানা ১৬১টি ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে গড়েছেন ভারতীয় সিনেমায় এক অনন্য রেকর্ড। তাঁর মতো এত দীর্ঘ সময় ধরে একটানা প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয়ের নজির আর কারও নেই।
এম জি রামচন্দ্রনের সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল রুপালি পর্দার অন্যতম জনপ্রিয়। তাঁদের একসঙ্গে ২৬টি হিট ছবি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘থাই সোল্লাই থাথাধে’, ‘থায়াই কাথা থানায়ান’ ও ‘নীদি পিন পাসাম’।
শিবাজি গণেশনের সঙ্গে করেছেন ২২টি টানা সফল ছবি। তেলেগু ছবিতে এনটি রামা রাওয়ের বিপরীতে ‘সীতারাম কল্যাণম’, ‘জগদেকা ভীরুনি কথা’ ও ‘দাগুদু মুথালু’ ছিল সুপারহিট।
হিন্দি সিনেমায়ও বি সরোজা দেবী নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন ‘পয়গাম’, ‘অপেরা হাউস’, ‘সসুরাল’ ও ‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া’ ছবির মাধ্যমে।
অভিনয়জীবনে সরোজা দেবী পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা—১৯৬৯ সালে পদ্মশ্রী, ১৯৯২ সালে পদ্মভূষণ। তামিলনাড়ু সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন ‘কালাই মামানি’ সম্মান। বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দিয়েছে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি।
অভিনয়ের বাইরেও সরোজা দেবী জড়িত ছিলেন চলচ্চিত্র সংগঠনের নানা কর্মকাণ্ডে। কন্নড় চলচ্চিত্র সংঘের সহসভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া ৫৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৩৮ সালের ৭ জানুয়ারি বেঙ্গালুরুতে জন্মগ্রহণ করেন সরোজা দেবী। পিতা ভাইরাপ্পা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, মা রুদ্রম্মা গৃহিণী। তিনি তাঁদের চতুর্থ সন্তান।
স্বামী শ্রী হর্ষর মৃত্যু হয় ১৯৮৬ সালে। স্বামীর মৃত্যুর পরও চলচ্চিত্রজগৎ থেকে সরে যাননি সরোজা দেবী। তরুণ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো, নতুন উদ্যোগে যুক্ত থাকা—সব সময় সক্রিয় ছিলেন সৃষ্টিশীল কাজে।
ষাটের দশকে তাঁর স্টাইলও ছিল আলোচনার বিষয়। তাঁর শাড়ি, গহনা ও চুলের সাজ অনুসরণ করতেন অনেকেই। এম জি রামচন্দ্রনের সঙ্গে তাঁর শেষ ছবি ‘আরসা কাট্টালাই’ মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালে।