
২৩ বছর পর আবার পরিচালনায় ফিরলেন বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা অনুপম খের। ২০০২ সালে ওম জয় জগদীশ দিয়ে তাঁর পরিচালনায় ‘হাতেখড়ি’। দীর্ঘ বিরতির পর এবার তিনি এসেছেন নতুন ছবি ‘তানভি দ্য গ্রেট’ নিয়ে। গত ১৮ জুলাই ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। বুধবার মুম্বাইয়ের ভারসোভায় তাঁর অভিনয় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাক্টর প্রিপেয়ার্স’-এ বসে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য–এর সঙ্গে একান্ত আলাপে জানালেন নিজের অভিজ্ঞতা ও নতুন ছবির গল্প।
ভারসোভার নিরিবিলি গলিতে অনুপম খেরের অভিনয় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান অ্যাক্টর প্রিপেয়ার্স। বিকেলের নরম আলোয় অফিস ঘরটিতে প্রবেশ করতেই হাসিমুখে এগিয়ে এলেন অনুপম। কুশল বিনিময় করেই আলাপে ঢুকে যাই। শুরুতেই আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বললেন, আবার পরিচালনা করতেই হবে—এমন কোনো তাড়া ছিল না। বুঝলাম, সঠিক সময় ও ভালো গল্পের অপেক্ষায় ছিলেন এত দিন। এবার সে অপেক্ষার প্রহর শেষে আবারও পরিচালকের আসনে এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। দীর্ঘ বিরতির পর তিনি ফিরেছেন নতুন ছবি তানভি দ্য গ্রেট নিয়ে।
অভিনয়জীবনের শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। ‘২৮ বছর বয়সে আমি ৬৫ বছরের বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করেছি। ইন্ডাস্ট্রিতে “টাইপ কাস্ট”-এর যে প্রথা ছিল, আমি তা ভেঙেছি। কেউ আমাকে কোনো ধাঁচে আটকে রাখতে পারেনি। সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। জীবনে এমন কাজ করেছি, যা আর কেউ করেনি,’ বললেন অনুপম।
‘তানভি দ্য গ্রেট’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র এক অটিস্টিক তরুণীর অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প। ‘তানভি’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন নবাগত শুভাঙ্গী দত্ত। ছবিতে আছেন বোমান ইরানি, অরবিন্দ স্বামী, পল্লবী যোশি, জ্যাকি শ্রফ ও নাসার। এ ছবির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনুপমের ব্যক্তিগত আবেগ ও গভীর ভালোবাসা। আবেগভরা কণ্ঠে সেটাই জানালেন, ‘আমার ভাইঝির অটিজম আছে। একদিন তাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কী দেখছ? সে বলেছিল, “আমি বিশ্বকে দেখছি।” সেদিন ওর এই উত্তর আমাকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। একজন অটিস্টিক মানুষের কল্পনাশক্তি আমাকে বিস্মিত করেছিল।’
এ ছবির লেখক, পরিচালক, অভিনেতা ও প্রযোজক—সবই অনুপম। একসঙ্গে এতগুলো দায়িত্ব পালন কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল জানতে চাইলে হেসে বলেন, ‘আমি জীবনকে উপভোগ করি। ছোট-বড় সব অনুভূতিই উপভোগ করতে ভালোবাসি। “তানভি”র যাত্রা আমি পুরোপুরি উপভোগ করতে চেয়েছি, আর করেছি। তাই কোনো কিছুই চ্যালেঞ্জ মনে হয়নি।’
অটিজম নিয়ে সমাজে সচেতনতার ঘাটতির কথাও বললেন অনুপম। তাঁর মতে, ‘ছবি দেখার পর মানুষ বিষণ্ন হতে চান না। তাই সামাজিক বার্তাও দিতে হয় বিনোদনের মোড়কে। বিনোদনের মাধ্যমে গল্প বললে তার প্রভাব বেশি পড়ে। এ ছবির ক্ষেত্রেও আমি সেটাই করেছি।’
দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে গেলেও ‘তানভি দ্য গ্রেট’ বক্স অফিসে সেভাবে সাফল্য পায়নি। এখন ছবির সাফল্যের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে আয়ের অঙ্ক, কাহিনি নয়—এ নিয়ে আক্ষেপ নেই অনুপমের। ‘আমার “সারাংশ” ব্লকবাস্টার ছিল না, কিন্তু মানুষ আজও সেই ছবির জন্য আমাকে মনে রাখে। কারণ, এটি কালজয়ী। অনেক ব্লকবাস্টার ছবি আসবে, হারিয়ে যাবে। কিন্তু ১৫ থেকে ২০ বছর পর “তানভি”-কেই মনে রাখা হবে। কারণ, এটি হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে,’ বললেন তিনি।
৫৪০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করলেও নিজেকে ‘পারফেক্ট’ মনে করেন না অনুপম। ‘“পারফেক্ট” শব্দটা আমার বিরক্তিকর লাগে। নিজেকে পারফেক্ট ভাবলেই শেষ। অপূর্ণতা মানুষকে উন্নতির পথে চালিত করে।’ নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরুতে টাক মাথা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগতাম। মুম্বাইয়ে এসে অনেকে বলত, এ রকম চুলহীন মাথা নিয়ে হিন্দি ছবিতে নায়ক হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু চুল না থাকাতেই আমি “সারাংশ” ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাই। মহেশ ভাট আমার মতো একজনকেই খুঁজছিলেন।’
জীবনে বহুবার ব্যর্থ হয়েছেন অনুপম। বহুবার পড়ে গেছেন, কিন্তু প্রতিবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। ‘ভাগ্যের চেয়ে নিজের ওপর আমার আস্থা বেশি। সাফল্যের কৃতিত্ব দর্শক, পরিচালক ও নিজের পরিশ্রমকে দিই। তবে আজ আমি যা হয়েছি, তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার পরিবারের।’ আবার কবে পরিচালনায় ফিরবেন জানতে চাইলে অপলক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখা যাক, আরেকটা হৃদয়গ্রাহী গল্পের অপেক্ষায় আছি।’ কথা বলতে বলতে কফি এল। কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললেন, আজ না হয় এ পর্যন্তই থাক। পরে আবার হয়তো কথা হবে।