দর্শকের হাতে এখন রিমোট বা মোবাইল ফোন। সিনেমা হলের পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ঘরে বসেই দেখছেন নানা ঘরানার কনটেন্ট। এ এক আলাদা বিনোদনের দুনিয়া, যেখানে কমেডি, থ্রিলার, রহস্য, হরর—সবই ঠাঁই পেয়েছে সমানভাবে। ২০২৫ সালেও সেই ধারা অব্যাহত থেকেছে। ভারতের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে বছরের শুরু থেকে শেষ—বিভিন্ন সময়ে মুক্তি পাওয়া কয়েকটি সিরিজ বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। গল্প বলার ভঙ্গি, অভিনয়, উপস্থাপন—সব মিলিয়ে সিরিজগুলো দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
এ বছর আলোচনার শীর্ষে থাকা এমন সাতটি জনপ্রিয় সিরিজের কথা আজ থাকল এই প্রতিবেদনে।

‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’—বাস্তবতার গন্ধমাখা এক ক্রাইম–থ্রিলার
নেটফ্লিক্স বছরের শুরুতেই দর্শকের জন্য নিয়ে আসে ক্রাইম–ড্রামা থ্রিলার ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’। বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে পরিচালিত সিরিজটি মুক্তির আগে খুব একটা আলোচনায় ছিল না, কিন্তু মুক্তির পরেই হয়ে ওঠে কথাবার্তার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ, এর গল্পের ভিত্তি বাস্তব জীবন।
সিরিজটি অনুপ্রাণিত হয়েছে ২০১৯ সালের আলোচিত বই ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট: কনফেশনস অব আ তিহার জেইলার’ থেকে। তিহার জেলের সাবেক জেইলার সুনীল গুপ্তা তাঁর কর্মজীবনের ভয়ংকর, অমানিশা–ভরা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছিলেন বইটিতে। সেই বাস্তবতার রেশই পাওয়া যায় সিরিজেও।
জাহান কাপুর, রাহুল ভাট ও পরমবীর সিং চিমা এখানে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। অপরাধী, জেল, ক্ষমতা ও ন্যায়বিচারের টানাপোড়েন—সব মিলিয়ে ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’ হয়ে উঠেছে এক উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা।
‘খৌফ’—অন্ধকারের ভেতর ডুবোজলের মতো ভয়
অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওর আলোচিত সিরিজ ‘খৌফ’ মূলত এক সাইকোলজিক্যাল হরর–ড্রামা। গল্পের কেন্দ্রে মধু—যিনি অতীতের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে নতুনভাবে শুরু করতে গোয়ালিয়র থেকে দিল্লিতে চলে আসেন। কিন্তু যে হোস্টেলে তিনি ওঠেন, সেটিই যে ভুতুড়ে—তা টের পেতে দেরি হয় না। ঘটনার পর ঘটনা, অদৃশ্য আতঙ্ক, মানসিক বিপর্যয়—সব মিলিয়ে মধুর জীবনে নেমে আসে এক অজানা অন্ধকার। পংকজ কুমারের নির্মাণে ‘খৌফ’ শুধু ভয়ের গল্পই নয়, মানুষের মনের গোপন আতঙ্কের গল্পও। মনিকা পনওয়ার, রজত কাপুর ও শিল্পা শুক্লা এখানে উল্লেখযোগ্য অভিনয় করেছেন।
‘দ্য ব্যা*ডস অব বলিউড’—সিনেমা–দুনিয়ার ভেতরের গল্প
নেটফ্লিক্সের সিরিজ ‘দ্য ব্যা***ডস অব বলিউড’ দিয়ে পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খান। ব্যঙ্গ আর ড্রামার মিশেলে তৈরি এই সিরিজ মুক্তির পরই আলোচনায় উঠে আসে। গল্পটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিনেতা আসমান সিংকে ঘিরে, যিনি সুপারস্টার অজয় তলবারের মেয়ের প্রেমে পড়েন। এরপর তাঁর ক্যারিয়ার নষ্ট করতে উঠেপড়ে লাগে ক্ষমতাধর সেই নায়ক।
ববি দেওল, লক্ষ্য লালওয়ানি, রাঘব যুয়াল, মোনা সিং—সবাই মিলে সিরিজটিকে দিয়েছেন অনন্য রূপ। ক্যামিও করেছেন বলিউডের শীর্ষ তারকারা—যেটা সিরিজটির প্রতি আগ্রহ আরও বাড়িয়েছে। শেষ পর্বের চমক তো আছেই।
‘মান্ডালা মার্ডার্স’—রহস্যের পিছে রহস্য
রহস্য, রোমাঞ্চ আর আধিভৌতিক উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি ‘মান্ডালা মার্ডার্স’ নেটফ্লিক্সের অন্যতম আলোচিত শো। সিআইবি অফিসার রিয়া থমাস ও পুলিশ অফিসার বিক্রম সিং তদন্তে নামেন একাধিক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে। কিন্তু যত এগোতে থাকেন, ততই সামনে আসে ভয়াবহ সব সত্য। গোপী পুথরান পরিচালিত এই সিরিজে বাণী কাপুর ও সুরভীন চাওলার অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছে। গল্পের বুনন আর উত্তেজনার মাত্রা দর্শককে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে।
‘পঞ্চায়েত ৪’—হাসির ফাঁকেই গ্রামবাংলার গল্প
অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওর জনপ্রিয় সিরিজ ‘পঞ্চায়েত’ একধরনের গ্রামকেন্দ্রিক স্যাটায়ার, যেখানে হাসির আবরণে তুলে ধরা হয় গ্রামীণ জীবনের খুঁটিনাটি বাস্তবতা। তিন সিজনের সফলতার পর এ বছর আসে ‘পঞ্চায়েত ৪’।
দীপক কুমার মিশ্রা পরিচালিত এই সিজনেও সচিবজি—অর্থাৎ জিতেন্দ্র কুমার—দারুণ অভিনয় করেছেন। কমেডির পাশাপাশি এবার গল্পে এসেছে নির্বাচন ও রাজনীতির ভিন্ন স্বর। নীনা গুপ্তা ও রঘুবীর যাদবও ছিলেন স্বমহিমায়।
‘পাতাল লোক ২’—অন্ধকার আরও ঘন হয়
অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওর বহুল আলোচিত সিরিজ ‘পাতাল লোক’-এর দ্বিতীয় সিজন মুক্তি পায় এ বছর। আগের সিজনের মতোই অন্ধকার, হিংসা, অপরাধ আর ষড়যন্ত্রে মোড়া গল্প দর্শককে টেনে রাখে পর্দায়। হাতিরাম চৌধুরীর চরিত্রে জয়দীপ অহলাওয়াত যেন আরও পরিণত। গুল পনাগ, ইশওয়াক সিং ও তিলোত্তমা সোমের অভিনয়ও নজর কাড়ে। আলোচিত হন নাগেশ কুকুনূরও—তিনি এখানে কপিল রেড্ডির চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
‘মিসেস দেশপান্ডে’—মাধুরীর এক নতুন
রূপ জিও হটস্টারের আলোচিত সিরিজ ‘মিসেস দেশপান্ডে’-তে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত। এই সিরিজে তাঁকে দেখা গেছে এক সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে, যা তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের একেবারেই নতুন সংযোজন।
নাগেশ কুকুনূরের পরিচালনায় নির্মিত এই সিরিজ তৈরি হয়েছে জনপ্রিয় ফরাসি সিরিজ ‘লা মান্তে’-এর আধারে। পরিপক্ব অভিনয় ও গল্পের গতি—দুটো মিলেই ‘মিসেস দেশপান্ডে’ দর্শকের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।
ওটিটির দুনিয়ায় এখন দারুণ প্রতিযোগিতা। তাই টিকে থাকতে হলে চাই নতুন গল্প, নতুন ভাবনা আর মানসম্পন্ন নির্মাণ। ২০২৫ সালের আলোচিত এই সাত সিরিজ প্রমাণ করে, দর্শক এখন ভালো কনটেন্টের কদর করেন—তা সে কমেডিই হোক, থ্রিলার, কিংবা মন ছুঁয়ে যাওয়া কোনো ড্রামা।