মুক্তির তালিকায় তারকাবহুল ছবি থাকলেও করোনার কারণে আর ছবি মুক্তি দেওয়া যায়নি।
মুক্তির তালিকায় তারকাবহুল ছবি থাকলেও করোনার কারণে আর ছবি মুক্তি দেওয়া যায়নি।

সিনেমার ভবিষ্যৎ

অপেক্ষা আগামী বছরের...

বছরটি ছিল চলচ্চিত্রের। কেননা বছরের শুরুতেই আসতে থাকে একের পর এক ছবির খবর। কিন্তু করোনার প্রভাবে হুট করেই পাল্টে গেল সব। এ বছর একটি নতুন ছবিও মুক্তি দিতে চাচ্ছেন না প্রযোজকেরা। কারণ হিসেবে আর্থিক ক্ষতিসহ নানা কথা উঠে এল নির্মাতা ও প্রযোজকের কথায়।

গত মার্চ মাসের প্রথম দিকে শেষ সিনেমা মুক্তি পায় প্রেক্ষাগৃহে। এরপর মুক্তির তালিকায় তারকাবহুল ছবি থাকলেও করোনার কারণে আর ছবি মুক্তি দেওয়া যায়নি। মার্চ মাসে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’, নাদের চৌধুরীর ‘জ্বীন’, মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’, চয়নিকা চৌধুরীর ‘বিশ্বসুন্দরী’।

‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমার পোস্টার

১৮ মার্চ সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের ঘোষণা করা হয় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। যে কারণে রোজার ঈদে মুক্তির তালিকায় থাকা সানি সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদের ‘মিশন এক্সট্রিম’, শামীম আহমেদের ‘বিক্ষোভ’, এম এ রাহিমের ‘শান’, রবিন খানের ‘মন দেব মন নেব’, শাহিন সুমনের ‘বিদ্রোহী’সহ বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসতে হয়।

‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টু’ সিনেমার পোস্টার

বছর শেষ হতে বাকি আছে চার মাস। এখনো প্রেক্ষাগৃহ খোলার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জানা গেছে, বছরের বিভিন্ন সময়ে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল আরও বেশ কিছু ছবির। কোনো কোনো ছবির শুটিং শেষ, প্রযোজনা–পরবর্তী কাজ চলছে।

কোনো ছবির শুটিং বাকি অল্প কিছু। এ তালিকায় আছে দীপংকর দীপনের ‘অপারেশন সুন্দরবন’, মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’, ফয়সাল আহমেদের ‘মিশন সিক্সটিন’, সৈকত নাসিরের ‘ক্যাসিনো’, শাহিন সুমনের ‘ক্রিমিনাল’, অঞ্জন আইচের ‘আগামীকাল’, সাইফ চন্দনের ‘ওস্তাদ’, অনন্য মামুনের ‘মেকআপ’, রায়হান রাফির ‘পরাণ’, আবু রায়হান জুয়েলের ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, সোয়াইবুর রহমানের ‘নন্দিনী’সহ ৩০টির বেশি ছবি। এই ছবিগুলোও শিগগির পরিস্থিতি ভালো না হলে আগামী বছর মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন প্রযোজকেরা।

‘এ অবস্থায় আমাদের ছবি মুক্তি নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা এ মুহূর্তে ঝুঁকি নিতে চাই না। আগামী বছর ভালো কোনো সময়ে ছবি দুটি মুক্তি দিতে চাই।
সেলিম খান, প্রযোজক।
অপারেশন সুন্দরবন সিনেমার পোস্টার

বিক্ষোভ ও বিদ্রোহী ছবি দুটির প্রযোজক সেলিম খান বলেন, ‘এ অবস্থায় আমাদের ছবি মুক্তি নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা এ মুহূর্তে ঝুঁকি নিতে চাই না। আগামী বছর ভালো কোনো সময়ে ছবি দুটি মুক্তি দিতে চাই।’

এ রকম কত দিন চলবে আমরা জানি না। হল খুললেই দর্শকের সংকট হবে। এমনও হতে পারে, আরও এক কি দুই বছর অবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ছবি মুক্তি দেব।
এ এম আরিফুর রহমান, প্রোগ্রাম ইনচার্জ, মাছরাঙা টিভি।

কোনো কোনো প্রযোজক মনে করছেন, এখন সিনেমা হল চালু হলেও দর্শক আগের মতো ছবি দেখতে ভিড় করবেন না। মানুষের মধ্যে এখনো করোনা নিয়ে আতঙ্ক আছে। ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মাছরাঙা টিভির প্রোগ্রাম ইনচার্জ এ এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘এ রকম কত দিন চলবে আমরা জানি না। হল খুললেই দর্শকের সংকট হবে। এমনও হতে পারে, আরও এক কি দুই বছর অবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ছবি মুক্তি দেব।’

শুধু তা–ই নয়, করোনায় আটকে গেছে বেশ কিছু ছবির শুটিং। নন্দিনী ছবির পরিচালক সোয়াইবুর রহমান বলেন, ‘ছবিটি অক্টোবর মাসে মুক্তির কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু এখনো ছয় দিনের শুটিং হাতে আছে। অক্টোবর কিংবা নভেম্বর মাসে করব।’

বিশ্বসুন্দরী সিনেমার পোস্টার

ঈদুল আজহায় মুক্তির জন্য ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির সব কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছিলেন নির্মাতা দীপংকর দীপন। কিন্তু এখনো ছবিটির কিছু অংশের শুটিং বাকি আছে। তা ছাড়া ভারতের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ স্বাভাবিক না হওয়ায় ছবির প্রযোজনা–পরবর্তী কাজও আটকে আছে। দীপন বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ স্বাভাবিক হলেই একটি কারিগরি দল এসে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের কিছু কাজ শুরু করবেন। ছবিটি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তির জন্য প্রস্তুত করতে চাই।’ একই কারণে আটকে আছে মেজবাউর রহমান সুমনের হাওয়া ছবিটিও।

জ্বিন সিনেমার পোস্টার

জ্যেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা মতিন রহমান বলেন, ‘এখনো করোনার আতঙ্ক থেকে সামাজিক, মানসিক, অর্থনৈতিকভাবে মানুষ মুক্তি পায়নি। এ অবস্থায় সিনেমা হল দর্শকদের টানবে না। প্রযোজকেরা স্বভাবিকভাবেই অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য আগামী বছরকে বেছে নেবেন।’