Thank you for trying Sticky AMP!!

‘প’ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সাতমসজিদ রোডে দেয়ালচিত্রাঙ্কনের আয়োজনে চিত্রকর কণকচাঁপা চাকমা ও অভিনেত্রী জয়া আহসান

কোলে কুকুরছানা, মুখে ভালোবাসার আহ্বান

“তারকা নয়, একজন শিল্পী হিসেবে আমি আজ এসেছি সবাইকে সচেতন করতে। এই সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা তৈরিই শিল্পীর কাজ। যে কুকুরগুলোকে সবাই স্ট্রিট ডগ বলে, আমি বলি ফ্রি ডগ। সভ্যতার শুরু থেকে এরা মানুষের প্রাচীনতম বন্ধু। নগর কর্তৃপক্ষ সেই বন্ধুদের শহর থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছে, এ আমাদের কাম্য নয়”

জয়া আহসান

জয়া আহসান কুকুর ভালোবাসেন, সে তো সবারই জানা। ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের বদৌলতে তাঁর পরিবারের অন্যতম সদস্য ক্লিওপেট্রা এখন সবার চেনা। ইস্কাটনের বাসায় জয়াদের সঙ্গে থাকা গোল্ডেন রিট্রিভার কুকুরটি প্রাণীর প্রতি জয়ার ভালোবাসার প্রতীক। একটা ছোট্ট দেশি কুকুরছানাকে কোলে নিয়ে কাল বিকেলে সে কথাই বলছিলেন তিনি। প্রাণিকুলের প্রতি একটু সদয় হওয়ার কথা, তাদের জন্য একটু ভালোবাসার কথা।

সকল প্রাণে প্রাণবিক হওয়ার আহ্বানে চিত্রকর কণকচাঁপা চাকমা ও অভিনেত্রী জয়া আহসান

কালো গাড়িটা থেকে নেমে ফুটপাতে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দুই বাংলার প্রিয় জয়া আহসান। আসবেন, আগেই জানিয়েছিলেন। তাঁর অপেক্ষায় ছিলেন শহরের কুকুর, বিড়ালপ্রেমী তরুণ-তরুণীর দল। ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের এক পাশের দেয়াল অর্থবহ রঙে রঙিন হয়ে উঠেছিল ততক্ষণে। এক দিন আগেও সেটা ছিল বিবর্ণ, পুরোনো পোস্টার আর বিজ্ঞাপনের লেখায় জর্জরিত। সেখানে আঁকা হয়েছে মানুষ ও পোষা প্রাণীর সম্পর্কের ছবি। মাস্কঢাকা মুখে সেখানে গিয়ে দাঁড়ান জয়া। বললেন, ‘তারকা নয়, একজন শিল্পী হিসেবে আমি আজ এসেছি সবাইকে সচেতন করতে। এই সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা তৈরিই শিল্পীর কাজ। যে কুকুরগুলোকে সবাই স্ট্রিট ডগ বলে, আমি বলি ফ্রি ডগ। সভ্যতার শুরু থেকে এরা মানুষের প্রাচীনতম বন্ধু। নগর কর্তৃপক্ষ সেই বন্ধুদের শহর থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছে, এ আমাদের কাম্য নয়।’

ঢাকা শহর থেকে ৩০ হাজার কুকুর শহরের বাইরের লোকালয়ে স্থানান্তরিত করতে চেয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, যার প্রতিবাদ জানিয়েছে পরিবেশবাদীরা। তারই অংশ হিসেবে ‘প’ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সাতমসজিদ রোডে দেয়ালচিত্র এঁকেছে আঁকিয়ের দল। সচেতনতামূলক এ কর্মকাণ্ডের জন্য আয়োজকদের সাধুবাদ জানিয়েছেন জয়া। তিনি বলেন, ‘এ রকম আয়োজনে একটু অবদান রাখার জন্য আমি সব সময় উদগ্রীব থাকি। যাঁরা আমার কাজ পছন্দ করেন, তাঁদের বলব, একটু সচেতন হোন। পৃথিবীতে যেমন মানুষের প্রয়োজন আছে, তেমনি বিভিন্ন প্রাণীরও প্রয়োজন আছে।’

পৃথিবীতে যেমন মানুষের প্রয়োজন আছে, তেমনি বিভিন্ন প্রাণীরও প্রয়োজন আছে। সব প্রাণীকে নিয়েই আমাদের প্রকৃতিতে বেঁচে থাকতে হবে
জয়া আহসান

করোনার কারণে সিনেমার শুটিং বন্ধ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরেই কাটছিল জয়া আহসানের দিন। কিন্তু শহর থেকে কুকুর তাড়ানো হবে শুনে আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমি এই মুভমেন্টের সঙ্গে একাত্ম ঘোষণা করেছি। আবেগ থেকে বেরিয়েও যদি ভেবে দেখতে বলি, মানুষের জীবনের সঙ্গে শেয়াল, কুকুর, সাপ, ব্যাঙের মতো প্রাণীরা জড়িয়ে আছে। প্রকৃতিতে এদের প্রয়োজন আছে। ব্যাঙ নিধন করে আজ বহু প্রজাতির ব্যাঙ আমরা হারিয়ে ফেলেছি। হয় খাবার হিসেবে রপ্তানি করেছি, নয়তো ধান খেয়ে ফেলে বলে নিধন করেছি। বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ নেই বলে ফসলে বেশি বেশি কীটনাশক দিতে হচ্ছে, যা একভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। তাই বলব, সব প্রাণীকে নিয়েই আমাদের প্রকৃতিতে বেঁচে থাকতে হবে।’

জয়া আহসান

এ আয়োজনে এসেছিলেন চিত্রকর কনক চাঁপা চাকমা। তিনিও সামাজিক প্রাণীদের নিয়ে ভাবার আহ্বান জানালেন। অত্যাচার না করে কুকুর, বিড়ালের মতো প্রাণীরা যাতে মানুষের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে, সে ব্যাপারে সচেতন হতে বললেন। পথের কুকুরদের খাওয়ানো, হাসপাতালে নিয়ে নিজ খরচে অনুর্বর করেন রুকসাত। জয়া আহসানকে কাছে পেয়ে তিনিও ভাগাভাগি করেন অত্যাচারিত প্রাণীদের প্রতি অমানবিক আচরণের নানা ঘটনা।

শহর থেকে কুকুর স্থানান্তরের প্রতিবাদে গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার সাতমসজিদ রোডে দেয়ালচিত্র আঁকার প্রতিবাদী আয়োজন করে পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।