Thank you for trying Sticky AMP!!

এ এস এম আসলাম তালুকদার মান্না (১৯৬৪- ২০০৮)

মান্না ছিলেন খুবই সাদা মনের মানুষ

ঢালিউডে মান্না ছিলেন এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনয়শিল্পী। অশ্লীলতা যখন চরমে, তখন হাল ছাড়েননি তিনি। ঢালিউডের দুঃসময়ে চলচ্চিত্রকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। সে সময় একা মান্নাই উপহার দিয়েছেন জনপ্রিয় সব সিনেমা। দর্শকদের করেছেন হলমুখী। প্রযোজকদের কাছে তিনি ছিলেন আস্থার নাম। এখনো চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে অপূরণীয় ক্ষতির নাম মান্নার চলে যাওয়া। আজ এই প্রয়াত অভিনেতার জন্মদিন। ১৯৬৪ সালে ১৪ এপ্রিল তিনি টাঙ্গাইল জেলায় জন্ম নেন।

প্রযোজকেরা তাঁকে নিয়ে লগ্নি করতে ভরসা পেতেন

কাজপাগল মানুষ ছিলেন মান্না। অনেক সময় তাঁর জন্মদিনের কথা মনেই থাকত না। তাঁর স্ত্রী শেলী মান্না জানান, এমন হয়েছে, সবাই অপেক্ষা করছেন কিন্তু মান্না কাজে ব্যস্ত। জন্মদিন নিয়ে তাঁর তেমন কোনো আগ্রহ কখনোই ছিল না। দিনটি অন্য দিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই কাটিয়ে দিতেন। এমন হয়নি, মান্না কখনো জন্মদিনের জন্য শুটিং বন্ধ রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘মান্নার জন্মদিন নিয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না। আমরা তাঁর জন্মদিন জমকালোভাবে আয়োজন করি, এটা চাইত না। এ জন্য আমরা বাড়তি কোনো আয়োজন করতে পারতাম না। ঘরোয়াভাবে সামান্য আয়োজনে দিনটি পালন করা হতো।’

স্ত্রীর সঙ্গে
জন্মদিনে শুটিং করলেও কাউকে বুঝতে দিতেন না জন্মদিনের কথা। সব সময় চাইতেন বড় আয়োজন এড়াতে। তবে নিজের জন্মদিনে যতটা নীরব থাকতেন, ততটাই অন্যের জন্মদিনে সরব থাকতেন তিনি।

এখন এই দিনে মান্নার জন্য মসজিদ ও এতিমখানায় দোয়ার আয়োজন করা হয়। করোনার কারণে এবারও ঘরোয়াভাবে দিনটি পালন করছে তাঁর পরিবার।

সহশিল্পীদের মতে, মান্না ছিলেন খুবই সাদা মনের মানুষ

সহশিল্পীদের মতে, মান্না ছিলেন খুবই সাদা মনের মানুষ। সবার সঙ্গে মিশতেন। জন্মদিনে শুটিং করলেও কাউকে বুঝতে দিতেন না জন্মদিনের কথা। সব সময় চাইতেন বড় আয়োজন এড়াতে। তবে নিজের জন্মদিনে যতটা নীরব থাকতেন, ততটাই অন্যের জন্মদিনে সরব থাকতেন তিনি। শুটিং ইউনিটের কারও জন্মদিন জানলে তাঁর সঙ্গে সেভাবে কথা বলতেন না মান্না। শুটিং শেষে একদম স্বাভাবিকভাবে তাঁকে ডাকতেন। তারপর যে সারপ্রাইজ দিতেন, তাতে চমকে যেতেন সেসব অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলী। অভিনেত্রী মুক্তির কাছে এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে তাঁর একটি জন্মদিন উদ্‌যাপন। শুটিং শেষ হলে তিনি মেকআপ রুম থেকে বের হচ্ছেন, এমন সময় পেছন থেকে মান্না তাঁকে ডেকে বলেন, ‘মুক্তি একটু শোন তো।’ ‘মান্না ভাই খুবই সাধারণভাবে আমাকে ডেকেছেন। গিয়ে দেখি, আমার জন্মদিনের বিশাল আয়োজন। আমি অবাক হয়েছিলাম, মান্না ভাই কীভাবে জানলেন যে আজ আমার জন্মদিন। ঘটনাটা আমার কাছে এখনো স্মরণীয়।’

স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে মান্না

মান্না শুধু পর্দায়ই নন, সহশিল্পীদের কাছেও ছিলেন জনপ্রিয়। ছিলেন ভালোবাসার নাম। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) থেকে যে বছর মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্স থেকে মান্নার নাম বাদ দেওয়ার কথা ওঠে, তখন চলচ্চিত্রের শিল্পী ও কলাকুশলীরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

১৯৮৫ সালে নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে চলচ্চিত্রে আসেন মান্না।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে সেই সময় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান বলেছিলেন, ‘মান্না ডিজিটাল ভবন থেকে মান্না নামটি বাদ দেওয়ায় শুধু আমরা শিল্পীরাই নই, পুরো এফডিসির লোকজন এর প্রতিবাদ করে। যার ফলে এফডিসি কর্তৃপক্ষ নায়ক মান্নার নাম আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনে।’
তখনকার শিল্পী সমিতির সহসভাপতি ওমর সানী বলেছিলেন, ‘মান্না বারবার ফিরে আসেন না। নায়ক মান্না বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের জন্য যা করেছেন, তা আমি কেন, আমরা অনেকেই করতে পারিনি।’ এ ছাড়া এই নায়কের সহ–অভিনয়শিল্পী চম্পা, মৌসুমী, শাবনূর, পূর্ণিমাসহ আরও অনেকে এখনো মান্নাকে স্মরণ করে স্মৃতিচারণা করেন।

একটি সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী মৌসুমী জানিয়েছেন, একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে মান্নার সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী মৌসুমী জানিয়েছেন, একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে মান্নার সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাঁরা একে অন্যকে পরিবারের সদস্য মনে করতেন।

মান্না আছেন মানেই ছবি হিট। প্রযোজকেরা তাঁকে নিয়ে লগ্নি করতে ভরসা পেতেন। ১৩ বছর আগে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রের সফল এক নায়কের পরিসমাপ্তি ঘটে। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রয়ারি তিনি মারা যান। এর আগের দিন রাতে শুটিং করে বাসায় ফিরেছিলেন এই নায়ক।

চলচ্চিত্রের দৃশ্যে রাজ্জাক ও প্রয়াত নায়ক মান্না

পরের দিন ভোরে তিনি বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেদিনই তিনি না–ফেরার দেশে পাড়ি জমান। সেই সময় এই নায়কের হাতে ছিল ২৫টি ছবির কাজ। তিনি মারা যাওয়ার পর মান্নার স্ত্রী ২০ লাখ টাকার বেশি সাইনিং মানি প্রযোজক ও নির্মাতাদের ফেরত দিয়েছিলেন। সেই সময় যাঁরাই তাঁকে বলেছেন মান্নার কাছে টাকা পান, তাঁদেরই তিনি টাকা দিয়েছেন। শেলী মান্না জানান, মান্নার পাওনা ছিল লাখ লাখ টাকা। সেসব টাকা কেউ দেননি। তিনি কারও কাছে কোনো টাকা চাননি। তিনি সবার কাছে সব সময় মান্নার জন্য দোয়া চেয়েছেন।

মান্না বারবার ফিরে আসেন না। নায়ক মান্না বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের জন্য যা করেছেন, তা আমি কেন, আমরা অনেকেই করতে পারিনি।
ওমর সানী
মান্নার চলে যাওয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে ঢালিউডকে

১৯৮৫ সালে নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে চলচ্চিত্রে আসেন মান্না। নব্বইয়ের দশকে এসে তিনি একটু করে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে যান। কাজী হায়াতের ‘ত্রাস’ সিনেমা ব্যবসা করলে তাঁকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ক্যারিয়ারে তিনি তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। পরে নাম লেখান প্রযোজক হিসেবে। তাঁর একাধিক সিনেমার সঙ্গে হিট তকমা লাগে।

ঢালিউডের প্রয়াত অভিনেতা মান্না

মান্নার উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘আম্মাজান’, ‘ত্রাস’, ‘দাঙ্গা’, ‘মনের সাথে যুদ্ধ’, ‘লাল বাদশা’, ‘বীর সৈনিক’, ‘এ দেশ কার’, ‘ভাইয়ের শত্রু ভাই’, ‘কঠিন পুরুষ’ ইত্যাদি। মান্নার চলে যাওয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে ঢালিউডকে।