আইমন শিমলা
আইমন শিমলা

নায়িকা হতে আসিনি, তবে...

গুটি, সুড়ঙ্গ, মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন থেকে ওমর—সব সিনেমা-সিরিজেই প্রশংসিত হয়েছে আইমন শিমলার অভিনয়। অল্প সময়ের উপস্থিতিতেও নিজের ছাপ রাখতে পেরেছেন এই তরুণ অভিনেত্রী। ধূসর চরিত্রেও তিনি সাবলীল, অন্য তরুণ অভিনেত্রীদের থেকে এখানেই আলাদা শিমলা। তবে একটা কিন্তু আছে। এখন পর্যন্ত তাঁর অভিনীত আলোচিত চরিত্রগুলোর সবই চাটগাঁইয়া। শিমলা নিজে চট্টগ্রামের মেয়ে, একটা সময় পর্যন্ত বন্দরনগরীর বাইরে চেনাজানা ছিল সীমিত। এক সিরিজে তাঁর চাটগাঁইয়া ভাষা আলোচিত হওয়ায় পরপর আরও কাজে তাঁকে চাটগাঁইয়া চরিত্রের জন্য ভেবেছেন নির্মাতা।

এ প্রসঙ্গ দিয়েই অভিনেত্রীর সঙ্গে আলাপের শুরু করা গেল। শিমলা জানালেন, এ নিয়ে তাঁর নিজেরও অস্বস্তি আছে। চেষ্টা করছেন ‘চাটগাঁইয়া দুনিয়া’র বাইরে যেতে। সঙ্গে এ–ও জানিয়ে রাখলেন, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তাঁর নিজের চরিত্র পছন্দ করে নেওয়ার সুযোগ কমই ছিল।

‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুটিংয়ের ঠিক আগে জেনেছি চরিত্রটি সম্পর্কে। তখন তো কিছু করার থাকে না। তবে যেসব কাজ করেছি, সবই আলোচিত পরিচালক আর অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে; এ অভিজ্ঞতার মূল্যও কম নয়। শিহাব (শিহাব শাহীন) ভাইয়ের সঙ্গে মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন, কাছের মানুষ দূরে থুইয়া, রবিউল আলম রবি ভাইয়ের সঙ্গে ফরগেট মি নট আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। এ ছাড়া (শহীদুজ্জামান) সেলিম ভাইয়ের কথা বিশেষভাবে বলব। সুড়ঙ্গ ও ওমর—দুই সিনেমায় তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন,’ বলছিলেন তিনি।

ঈদে মুক্তি পাওয়া এম রাহিমের সিনেমা জংলিতেও আছেন শিমলা। এ ছবিতে অবশ্য তাঁর চরিত্রটি চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলে না। সে জন্য সিনেমাটি নিয়ে তিনি বেশি উচ্ছ্বসিত। ‘মুক্তির পর থেকে সিনেমা তো বটেই, আমার অভিনীত চরিত্রটি নিয়ে প্রশংসা পাচ্ছি কিন্তু দুঃখের কথা, আমি নিজেই এখনো দেখতে পারিনি। ব্যক্তিগত ঝামেলা, শুটিংয়ে ব্যস্ততার কারণে সম্ভব হয়নি। শিগগিরই আমার টিমের সঙ্গে দেখতে চাই,’ বলছিলেন তিনি।

আইমন শিমলা

জংলির চরিত্রটি অবশ্য ব্যক্তিগত কারণে শিমলাকে আরও বেশি ছুঁয়ে গেছে। এ সিনেমায় লিসার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ছবির শেষ দৃশ্যে লিসাকে স্বামীর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি থাকো আর না থাকো, এই বাচ্চার দায়িত্ব আমি নেব। আমিই ওর মা, আমিই ওর বাবা।’

শিমলা জানালেন, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে লিসা চরিত্রটির মিল থাকায় দৃশ্যটিতে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। চিত্রনাট্যের বাইরে গিয়েও নিজের মতো করে অনেক সংলাপ বলেছেন। কাঁদেননি, তবে ভেতরটা ভেঙে গিয়েছিল। চরিত্রটির সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কী মিল, সেটা অবশ্য জানাতে চান না অভিনেত্রী।

আলাপে আলাপে এই সময় থেকে সেই সময়ে ফিরে গেলেন শিমলা। জানালেন, ছোটবেলা থেকেই চট্টগ্রামের থিয়েটারে যুক্ত, কাজ করতেন আলোর ছায়া নাট্য পরিবারে। ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করেই কলেজে ভর্তির পর মুখোমুখি হন কঠিন বাস্তবতার। শুরু করেন চাকরি, পাশাপাশি নাটকও চলছিল। তবে ক্যামেরার সামনের চেয়ে পেছনের কাজেই শিমলার আগ্রহ ছিল বেশি। সে জন্যই আলোর ছায়া নাট্য পরিবারের যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন, তাঁর ভিজ্যুয়াল মাধ্যম দৃশ্য ছায়ায় কাজ শুরু করেন। ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে কীভাবে কাজ হয়, সেটা শেখাই ছিল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি মঞ্চ, চাকরি চলছিল। এর মধ্যে চলে আসে কোভিড। নানা বাস্তবতায় স্নাতক শেষ করতে পারেননি। হঠাৎই পেয়ে যান শঙ্খ দাশগুপ্তর গুটি সিরিজে কাজের প্রস্তাব। এই এক সিরিজ দিয়েই পরিচিতি পান।

কথায়–কথায় শিমলা জানালেন, গুটি ও মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন—দুই সিরিজেই সহ-অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান তাঁকে অনেক সাহায্য করেছেন। ঈদে অ্যালেন স্বপন ২-এ নাসির উদ্দিন আর শিমলার খাবারের টেবিলে একটি দৃশ্য আছে। সংশয়, ভয়, অবিশ্বাস মেশানো দৃশ্যটি প্রশংসিত হয়েছে। অভিনেত্রী বললেন, দৃশ্যটি সহজ ছিল না, কিন্তু চাটগাঁইয়া বড় ভাই নাসির উদ্দনের সঙ্গে আগে থেকেই ভালো বোঝাপড়া থাকায় ভালোভাবে উতরে গেছেন।

আইমন শিমলা

চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করে এখন ঢাকায় থিতু হয়েছেন শিমলা। সিনেমা, ওটিটি আর নাটক—তিন মাধ্যমেই কাজ করছেন। এখন যেমন ব্যস্ত স্বাধীন ঘরানার দুই সিনেমার শুটিংয়ে। নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে জানালেন, পাঁচ বছর পর নিজেকে অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে শীর্ষে দেখতে চান।

‘আমি নায়িকা হতে আসিনি। কিন্তু অভিনয়ের দিক থেকে অবশ্যই সেরা হতে চাই। আমি ইতিবাচক, নেতিবাচক, ধূসর, অ্যাকশন—সব ধরনের চরিত্রের চ্যালেঞ্জ নিতে চাই,’ বলছিলেন তিনি। দেশি সিনেমা ও সিরিজে পার্শ্বচরিত্রের অভিনয়শিল্পীদের গুরুত্ব পাওয়াটা শিমলার এমন স্বপ্নের পালে হাওয়া দিয়েছে। তাঁর ভাষ্যে, ‘এটা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। ওটিটি দিয়ে এটা (পার্শ্বচরিত্রের অভিনয়শিল্পীদের গুরুত্ব দেওয়া) শুরু হয়েছে, এখন সিনেমাতেও হচ্ছে। এ জন্য পরিচালকদের বিশেষ ধন্যবাদ পাওনা। নায়ক-নায়িকাভিত্তিক অনেক কাজ আমরা দেখেছি, নির্মাতারা এখন একটু ভিন্নভাবে কাজ করতে চাইছেন। আমরাও নিজেদের ওজন বোঝানোর চেষ্টা করছি। হয়তো সিনেমা বা সিরিজে চরিত্রটির সেভাবে গুরুত্ব নেই। কিন্তু একটু পরিকল্পনা করলেই সেটিকে ইন্টারেস্টিংলি তুলে ধরা যায়। পরিচালক থেকে অভিনয়শিল্পী—সবার মধ্যেই এখন সচেতনতা তৈরি হয়েছে।’

আলাপের শেষে জানালেন, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের স্বপ্নটা এখনো লালন করে চলেছেন। সময়-সুযোগ মিললেই পরিচালনা করতে চান।