
এবার ঈদুল ফিতরে আটটি সিনেমার মধ্যে তাঁর একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সেই সিনেমা দিয়েই আলোচনায় রয়েছেন এই ঢালিউড চিত্রনায়ক। ব্যতিক্রমী চরিত্র দিয়ে ভক্তদের কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছেন। ডাক পাচ্ছেন নতুন সিনেমার জন্য। এ ছাড়া হাতে রয়েছে হাফ ডজনের বেশি কিছু সিনেমা। ইতিমধ্যে তারকা খ্যাতি জুটলেও এই নায়ককে শুরুর দিকে ঢাকায় এসে সংগ্রাম করতে হয়েছে। একসময় তিনি ইট বিক্রি করেছেন, রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেছেন। তবুও হাল ছাড়েননি। কে সেই অভিনেতা?
স্কুল ও কলেজের পাট চুকিয়ে বগুড়ার তরুণ ঢাকায় আসেন। উদ্দেশ্য পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয় করবেন। কিন্তু থাকার কোনো জায়গা নেই। মামার সঙ্গে ছোট্ট ঘরে জায়গা হয়। কিন্তু কাছে তেমন কোনো টাকা নেই। সামনে নিজে আয় করে চলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। একসময় বাধ্য হয়ে ইট বিক্রির কাজ বেছে নেন। এ জন্য প্রতিদিন পান্থপথ থেকে শ্যামলী পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়েছে এই অভিনেতাকে। তাঁর সংগ্রাম এখানেই থেমে থাকেনি। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেছেন। এই নায়কের কথা, কোনো কাজই ছোট না। সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রম করলে সফলতা ধরা দেবেই।
অতীত স্মরণ করে মডেল ও অভিনয়শিল্পী এর আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘২০১২ সালে ঢাকায় এসে দুই বছরের হোটেল ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হই। আমার থিওরির ক্লাস হতো ওয়েস্টিন হোটেলে। পড়ার ফাঁকে পার্টটাইম চাকরির খোঁজ করতাম। একটি বিল্ডার্স কোম্পানির খোঁজ পাই। পান্থপথে অফিস। গেলাম দেখা করতে। সেদিন আমাকে ইট বিক্রির জন্য দুটি ইটের নমুনা ধরিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, শ্যামলীতে গিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। গ্রাহক আমার কথা শুনে দুই লাখ ইটের অর্ডার দেন। পরদিন অফিসে গিয়ে জানতে পারি, আমাকে কমিশনের যে টাকা দেওয়ার কথা, তা পাব না। মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু হাল ছাড়িনি।’ একসময় তিনি সেই বিল্ডার্সের অফিসে যাওয়া বন্ধ করে আবার কাজ খুঁজতে থাকেন।
অর্থনৈতিক সংকটে এবার তাঁকে ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি নিতে হয়। সেখানে থেকেই তাঁর ভাগ্য বদলের শুরু। তিনি এখন অভিনয়শিল্পী আদর আজাদ।
তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘কেন জানি হোটেলের সবাই আমাকে পছন্দ করতেন। একদিন হোটেলের একটি অনুষ্ঠানে নাচ করি। তার পর থেকে সবাই আমাকে আরও বেশি আপন করে নেন। বলতে পারেন, সেখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠি। এরপর ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাকে চ্যানেল আইয়ের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়।’
পরিবারে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা আজাদ দুই বছর আগেও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন।
কিন্তু সফল হতে পারেননি। তবে দমে যাননি। নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করে দুই বছর পর সেবার আবার এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। পরে তো সফলতার গল্প। ২০১৪ সালে ‘ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম দ্য আল্টিমেট ম্যান’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবার চোখে পড়েন। ভাগ্য খুলে যায়। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
এবার ঈদে আজাদ অভিনীত ‘লোকাল’ সিনেমাটি দর্শক পছন্দ করেছেন। তাঁর সহ অভিনেত্রী ছিলেন বুবলী।
সিনেমাটি এখনো দেশের বেশ কিছু সিনেমা হলে চলছে। আজাদ বলেন, ‘লোকাল’ সিনেমার পর নতুন একাধিক সিনেমার প্রস্তাব পাচ্ছেন। গতকাল একটি সিনেমার চুক্তি করেছেন। তবে এখনো কিছু জানাতে চাননি। আরও বেশ কিছু সিনেমা নিয়ে কথা হচ্ছে। সময় হলেই সব জানাবেন। গতকাল ছিল এই অভিনেতার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনটা বাসাতেই পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন তিনি।