ছোটবেলায় নায়িকার সঙ্গে তাঁর দুই বোন
ছোটবেলায় নায়িকার সঙ্গে তাঁর দুই বোন

এই তিন কন্যার একজন ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা, স্বামীও নায়ক

ছবির সেই ছোট্ট মেয়ে, যাঁর চোখে একদিন স্বপ্ন দেখার আগ্রহ ছিল, বড় হয়ে ঢালিউড মাতিয়েছেন। হয়েছেন আলোচিত নায়িকা, যাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে ভক্তরা চোখ রাখতেন। ১৯৯১ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী’ ছবিতে তাঁর অভিষেক। সেই সময়েই তিনি রীতিমতো সাড়া ফেলেছিলেন। তবে আজ আর চলচ্চিত্রের পর্দায় নেই তিনি। স্বামী, সন্তান আর সংসারেই ব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছেন ঢাকার উত্তরায়। নাটক ও চলচ্চিত্র—দুটি মাধ্যমেই একসময় মাতিয়েছিলেন। এখন অবশ্য আড়ালে থাকেন, মাঝেমধ্যে হঠাৎ দেখা মেলে চলচ্চিত্র বা নাটকসংশ্লিষ্ট কিছু ঘরোয়া আয়োজনে।

গতকাল বুধবার ছিল এই নায়িকার জন্মদিন। এই বিশেষ দিনে অভিনয়শিল্পী ছোট বোন তাঁর ছোটবেলার কিছু স্থিরচিত্র শেয়ার করেছেন। ছবি দুটি দেখেই অনেকে চমকে গেছেন। শুরুতে কেউই চিনতে পারেননি। কেউ বলছেন, হাসির কারণে চিনেছেন। কেউ আবার ফেসবুকে ট্যাগ করায় সহজে বুঝতে পেরেছেন—না হলে হয়তো এত সহজে চেনা যেত না।

ছোটবেলার ছবির এই মেয়ে আর কেউ নন, ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনাজ। চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় ওই সময়ের অন্য একজন জনপ্রিয় নায়ক নাঈমের। ধীরে ধীরে প্রেমে গড়া বন্ধন একদিন বিবাহে রূপ নেয়। আজ ২৯ অক্টোবর, সেই তারকার জন্মদিন—যে জন্মদিনে অতীতের শিশুসুলভ হাসি আর আজকের পরিণত নায়িকার গল্প একসঙ্গে মিলেছে।

ছবির এই ছোট্ট মেয়ে ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা

ছবির এই ছোট্ট মেয়ে শাবনাজ বড় হয়ে ঢালিউডে প্রথম অভিনয় করেন ‘চাঁদনী’ ছবিতে। প্রথম ছবিতে অভিনয় করে তিনি দর্শকের নজর কেড়েছিলেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত টানা ২৬টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এই সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘দিল’, ‘জিদ’, ‘আনজুমান’, ‘লাভ’, ‘চোখে চোখে’, ‘টাকার অহংকার’, ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’, ‘সোনিয়া’ ও ‘অনুতপ্ত’। নায়ক হিসেবে নাঈম ছাড়াও ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন, বাপ্পারাজ, সালমান শাহ, অমিত হাসান ও মান্নারা। অভিনীত বেশির ভাগ চলচ্চিত্রই প্রেমকেন্দ্রিক, তবে শাবনাজ চাইতেন বৈচিত্র্যময় চরিত্র। একঘেয়ে প্রেমের গল্পের ভিড়ে নিজেকে খুঁজে পেতে না পেরে ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নেন।

শাবনাজ জানান, ‘একজন শিল্পী মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকেন অসাধারণ চরিত্র হয়ে। আমি শুধু নায়িকা হতে চাইনি, শিল্পী হতে চেয়েছি।’

বড় হওয়ার পর তিন বোন চিত্রনায়িকা শাবনাজ (মাঝে), শাহনাজ সোনিয়া (বামে) ও ডানে অভিনয়শিল্পী বোন তাহমিনা সুলতানা মৌ

১৯৯১ সালে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেকের সময় শাবনাজ সদ্য এসএসসি পাস করেছিলেন। মায়ের মতো সবাই খুব উৎসাহী ছিলেন না, তবে নাট্যকর্মী বাবার সমর্থন ছিল অপরিসীম। বাবার উৎসাহে ও মঞ্চনাটকের শুরুর দিকে এহতেশাম ‘চাঁদনী’ ছবির নায়িকা হিসেবে শাবনাজকে বেছে নেন। প্রথম ছবির সম্মানী ছিল ৫০ হাজার টাকা, পরের ছবিতেই ছয় গুণ বৃদ্ধি। জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রযোজকেরা আগাম বুকিং করতে থাকেন।

নাইম ও শাবনাজ

চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে নায়ক নাঈমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। শুরুতে দুজনই নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে চাননি। শাবনাজ বলেন, ‘নাঈমের জন্য মেয়েরা অনেক পাগল ছিল, আমি বুঝতে পারতাম। তবে আমি নিজেও ওর প্রতি আমার অনুভূতি প্রকাশ করতাম না।’ তিন বছরের মধ্যে দুজনে বিয়ে করেন; ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর তাঁদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর শাবনাজ স্বামী নাঈমের পাশে থেকে পরিবারের দায়িত্ব পালন করেন এবং হাতে থাকা কিছু চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করে নিজেকে গুটিয়ে নেন।

শাবনাজ–নাঈম একসঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় তিন দশকের বেশি সময়

১৯৯৬ সালে ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ ছবির মাধ্যমে তিনি দীর্ঘদিনের চলচ্চিত্রের যাত্রা শেষ করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে টেলিভিশন নাটকে অভিষেক ঘটে, প্রথম নাটক ‘আকাশ কুসুম’। ২০০৫ সালে আবার চলচ্চিত্রে অনুরোধ আসে, এ টি এম শামসুজ্জামানের অনুরোধে ‘ডাক্তার বাড়ি’ ছবিতে অভিনয় করেন। এরপর আর ছোট বা বড় পর্দায় দেখা যায়নি তাঁকে এবং শাবনাজ এই সিদ্ধান্তে কোনো আক্ষেপও করেননি।

আজ ২৯ অক্টোবর শাবনাজের জন্মদিনে ছোটবেলার ছবি দুটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন তাঁর ছোটবোন অভিনয়শিল্পী তাহমিনা সুলতানা মৌ। ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন আপু। আল্লাহ তোমাকে সুস্বাস্থ্য, অফুরন্ত সুখ, মনের শান্তি এবং দীর্ঘায়ু দান করুন। তুমি এসবের চেয়ে বেশি পাওয়ার যোগ্য।’ ছবিগুলো দেখেইঅনেকেই চমকে যান।

পর্দার নয়, শাবনাজ–নাঈমের বাস্তবের ফুলশয্যা

ছোটবেলার ছবির সেই মেয়ে আজ জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে। চলচ্চিত্রে থাকা বা না থাকা, জনপ্রিয়তা বা গসিপ—কিছুই তাঁর মানসিক শান্তি নষ্ট করতে পারেনি। শাবনাজ প্রমাণ করেছেন, একজন শিল্পী কেবল পর্দার চরিত্র নয়, জীবনকেও সুন্দরভাবে সাজাতে পারার ক্ষমতা রাখেন। ছোটবেলার স্বপ্ন আর পরিবারের মধ্যে আজও তিনি বাঁচিয়ে রেখেছেন নিজের আলোকময় পথ।