Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বয়ং সিরাজউদ্দৌলা এলেন সংবাদ সম্মেলনে

‘পলাশী পুরাণ’ যাত্রা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে নবাবের হাতে পত্রবাহক একটি বার্তা তুলে দেন। ছবি: সংগৃহীত

এ রকমও হয় সংবাদ সম্মেলন?

একটি আলোহীন ঘর। সেখানে বসে আছেন সাংবাদিকেরা। ঘরে আলো নেই কেন, তা নিয়ে একটু গুঞ্জন শুরু হতেই জ্বলে উঠল আলো। বেজে উঠল রাজদরবারের বাদ্য।

দেখা গেল, তাঁরা সবাই বসে আছেন স্বয়ং সিরাজউদ্দৌলার রাজদরবারে। সিংহাসনের পাশে বসে আছেন জগৎ শেঠ, রাজবল্লভ, মীরজাফর, ঘষেটি বেগম, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদসহ সভাসদবর্গ। তাঁরা কথা বলছেন নবাবকে নিয়ে। চমকিত হওয়ার মতোই ঘটনা।

এরই মধ্যেই বেজে উঠল কর্নেট। শোনা গেল শাহি এলান, ‘নবাব মনসুর-উল-মুলুক সিরাজউদ্দৌলা শাহ কুলি খাঁ মির্জা মোহাম্মদ হায়বৎ জং বাহাদুর। বা-আদাব আগা বাশে’দ।’

দরবারে প্রবেশ করলেন সিরাজউদ্দৌলা। সঙ্গে এলেন লুৎফা, মোহনলাল ও সাফ্রে। সবাই নতশিরে কুর্নিশ করলেন সিরাজকে।

‘পলাশী পুরাণ’ যাত্রা উপলক্ষে ছিল সংবাদ সম্মেলন। আয়োজন করেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে। গত শুক্রবার নাট্যকলা বিভাগের ল্যাবে বসেছিল এ আসর।

নবাবের হাতে একজন পত্রবাহক একটি বার্তা তুলে দেন। নবাব সে পত্র সভাসদদের সামনে পাঠ করেন। উপস্থিত সবাই শুনতে পান সিরাজউদ্দৌলার সেই চিরচেনা স্বর। নবাব ঘোষণা দেন, যাত্রাপালা ‘পলাশী পুরাণ’-এর। বাঙালির শিকড়সন্ধানী সংস্কৃতির সঙ্গে যাত্রার যে সম্পর্ক, তাকে পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দিয়ে নবাব জানান, এ যাত্রায় মুখ ফেরানোর কিছু থাকবে না, থাকবে অশ্লীলতামুক্ত সপরিবারে উপভোগের সেই ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনা।

উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে উঠে আসে যাত্রাপালার বিস্তারিত তথ্য। উপস্থিত সভাসদদের সঙ্গে ছোটখাটো মত-দ্বিমত সংবাদ সম্মেলনকে করে তোলে আরও উপভোগ্য। এমনকি স্বয়ং নির্দেশকও নবাবের অনুমতি ছাড়া কোনো কথা বলতে পারেননি। তাঁকে রাজদরবারের বিধিমোতাবেক অনুমতি প্রার্থনা করতে হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে একটি মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত

সিকান্দার আবু জাফরের নাটক ‘সিরাজুদ্দৌলা’ অবলম্বনে ‘পলাশী পুরাণ’-এর যাত্রারূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান রহমান রাজু। বিভাগের ১৮তম ব্যাচের বার্ষিক প্রযোজনার অংশ হিসেবে ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল চত্বরে এই যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হবে। যাত্রার কনসার্ট শুরু হবে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায়। আর পালা শুরু হবে সন্ধ্যা সাতটায়।

যাত্রাপালার নাম ‘পলাশী পুরাণ’ রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে রহমান রাজু বলেন, সিরাজের পরাজয় হয়েছিল পলাশীতে এসে। এ জন্য এই ভূমিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে এর নাম রাখা হয়েছে ‘পলাশী পুরাণ’।

সিকান্দার আবু জাফরের ‘সিরাজুদ্দৌলা’ এত দিন মূলত নাটক হিসেবে এসেছে; যাত্রা হিসেবে আসেনি। যাত্রায় রূপ দেওয়ার জন্য আবহমান যাত্রার কিছু গান, ঢং, সংলাপ ও বিবেকের চরিত্র সংযোজন করা হয়েছে। সিরাজের সংলাপের মাধ্যমে নাটকের শেষ করা হলেও যাত্রায় মিরণ ও বিবেকের পারস্পরিক সংলাপের মাধ্যমে যাত্রা শেষ হয়েছে। তাদের সংলাপে বাংলার ধারাবাহিক সংগ্রামের ইতিহাস প্রতিধ্বনিত হয়েছে। সবশেষে দর্শকদের সম্পৃক্ত করে সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কোরাস নিয়ে হাজির হয় একটি দল। মুজিব শতবর্ষকে সামনে রেখে হচ্ছে বলে এই কোরিওগ্রাফিতে সবার ওপরে আলোয় ভেসে ওঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখ। তখন কর্নেটে বেজে ওঠে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’