‘জংলি’ ছবির পরিচালক এম রাহিম
‘জংলি’ ছবির পরিচালক এম রাহিম

প্রথমত গল্প, দ্বিতীয়ত সিয়াম...

প্রেক্ষাগৃহে চলছে এম রাহিম পরিচালিত ‘জংলি’। যে কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে, সব জায়গায় হাউজফুল যাচ্ছে। ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ এমনটা হবে কি ভেবেছিলেন, কী কী কারণে দর্শকের আগ্রহ, তা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন পরিচালক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুর কাদের

প্রশ্ন

মুক্তির ১৬ দিন চলছে, এখনো ‘জংলি’ ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ বেশ লক্ষণীয়। মাল্টিপ্লেক্সের যেখানে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে, সব জায়গায় টিকিট পাওয়া নিয়ে সংকটের খবরও শোনা যাচ্ছে। মুক্তির আগে ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ এমনটা হবে ভেবেছিলেন?

এম রাহিম: হ্যাঁ, আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। দেখুন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা খুব কঠিন এক জায়গা। এ রকম একটা জায়গায় আমি তিন থেকে চার বছরের বিরতি নিচ্ছি, এটা খুব বড় একটা রিস্ক। তাই ‘জংলি’ নিয়ে যখন আমি কাজ শুরু করেছি, তখন থেকেই জানি, আমি আসলে এই গল্পটাই পর্দায় দেখানোর জন্য এত দিন অপেক্ষা করেছি। এত দিন নিজেকে তৈরি করেছি দর্শককে নতুন কিছু ও ভালোবাসামাখা একটা গল্প উপহার দেওয়ার জন্য। দর্শক যে সে ভালোবাসা দ্বিগুণ করে ফেরত দেবেন, সে আত্মবিশ্বাসটা ছিলই।

‘জংলি’ ছবির শুটিংয়ে পরিচালক এম রাহিমের সঙ্গে চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ
প্রশ্ন

দর্শকের আগ্রহ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র সমালোচক থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ নানা মত দিচ্ছেন। কারণ খুঁজতে গিয়ে ছবি হিটের জন্য কেউ ১০টি কারণ, কেউবা ৭টি কারণ দাঁড় করাচ্ছেন। আপনার দৃষ্টিতে কোন পাঁচটি কারণে ছবিটি নিয়ে দর্শকের এতটা আগ্রহ? সেই কারণগুলো একটু বিস্তারিত যদি বলতেন?

এম রাহিম: প্রথম কারণ আমি বলব, ‘জংলি’র গল্প। আমাদের দেশের সিনেমাগুলোয় আমি খেয়াল করেছি, আমরা অনেক কিছু করতে গিয়ে একটা সহজ গল্প বলতে পারি না। দিন শেষে একজন দর্শক কী নিয়ে ফেরত যাবেন! আমার কাছে তাই মনে হয়েছে, ‘জংলি’র গল্পটা দর্শক আগলে নিয়েছেন। দ্বিতীয় কারণ, সিয়াম আহমেদ। সিয়াম ভালো কাজ করেন, সিয়াম গুছিয়ে কাজ করেন। দর্শক একটা ছক কষা সিয়ামকে দেখেছিলেন এত বছর। সেই সিয়াম ‘জংলি’তে নিজেকে যেভাবে ভেঙেছেন, সেটা পরিচালক হিসেবে আমার কাজ সহজ করে দিয়েছেন। দর্শকও সিয়ামকে এমন অবতারে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। তৃতীয়ত, নৈঋতা। আমি যতই ডিরেকশন ভালো দিই না কেন, সিয়াম যতই নিজেকে ভাঙুক না কেন, ‘জংলি’ সিনেমা দাঁড়াতে পারত না, যদি আমাদের সিনেমার শিশুশিল্পী নৈঋতা পর্দায় মায়া না ছড়াতে পারত। চতুর্থত, আমি বলব, এই সিনেমার গান। আমি খুবই খুশি যে আমাদের দেশের কিংবদন্তি প্রিন্স মাহমুদ আমাদের সিনেমার চারটি গান করেছেন। সবার শেষে আমি নিজের কথা বলতে পারি। আমি অনেক বড় একটা রিস্ক নিয়েছি, এত সময় বিরতি নিয়ে। সেখান থেকে চেষ্টা ছিল যে আমি নতুন কিছু যদি না দিতে পারি, তাহলে আসলে ফিরে লাভ নেই। আমি নতুন কিছু উপহার দিতে পেরেছি দর্শককে, একটা দারুণ টিম সঙ্গে পেয়েছি। এটাই আমার প্রাপ্তি।

‘জংলি’ ছবির পোস্টার
প্রশ্ন

ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া অন্য ছবিগুলোর মধ্যে আপনার পরিচালিত ছবি ছাড়া আর কোনটি দেখার সুযোগ হয়েছে। যদি দেখে থাকেন, কেমন লেগেছে? ভালো লাগলে কেন, আর যদি ভালো না লাগে, তাহলে কেন লাগেনি?

এম রাহিম: না, এখনো সময় করে উঠতে পারিনি আসলে। আমাদের দেশে তো ডিরেক্টরকে আসলে ১০০ হাতে কাজ করতে হয়। সবকিছু তাঁকেই দেখে দিতে হয়। একটু বিরতি পেলে ইচ্ছা আছে সব কটি সিনেমাই দেখার। সবার আগে ‘বরবাদ’ দেখব। শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে তো আমার অনেকগুলো কাজ হয়েছে, দেখতে চাই হৃদয় ‘বরবাদ’–এ শাকিব ভাইকে কীভাবে প্রেজেন্ট করেছেন। ‘দাগি’তে নিশো ভাই ও ‘চক্কর ৩০২’–এ মোশাররফ করিম ভাইয়ের পারফরম্যান্স দেখতেও তর সইছে না।

এম রাহিম
প্রশ্ন

দেশের মানুষ যে ছবি দেখতে চান, উৎসবের সময় এটা বেশ ভালোভাবে চোখে পড়ে। বছরব্যাপী মানুষকে ছবি দেখার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য কীভাবে এগোনো উচিত বলে মনে করেন আপনি?

এম রাহিম: এখানে আসলে এগিয়ে আসতে হবে প্রযোজকদের। হলের মালিকদেরকেও সাহস দিতে হবে। দুই ঈদে ১০টা বড় সিনেমা না এসে যদি ঈদ ছাড়া বছরে পাঁচটি বড় সিনেমা আসে, তাহলেই দেখবেন দর্শকও আসছেন, প্রযোজকেরাও সাহস পাচ্ছেন। রিস্ক তো কাউকে না কাউকে নিতেই হবে, বড় প্রযোজকদেরই আমি অনুরোধ করব রিস্কটা নেওয়ার। তাহলেই তাঁদের দেখানো পথে অনেকেই ঈদ ছাড়া সিনেমা মুক্তি দেওয়ার সাহস করবেন।