তিন বছর পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় এসেছেন তমালিকা কর্মকার। নাট্যদল আরণ্যকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবে অংশ নিতে তাঁর ঢাকায় আসা। ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর আবার ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। যাওয়ার আগেই কথা বলল বিনোদন।
কেমন আছেন?
ভালো আছি।
অনেক কোলাহলের মধ্যে আছেন মনে হয়!
আমি রাস্তায়। সিএনজিতে চড়ে একটা জায়গায় যাচ্ছি। আমার তো এখানে গাড়ি নাই। তাই সিএনজি চড়ে যেতে হচ্ছে। তা ছাড়া ঢাকার রাস্তায় গাড়ি আমি খুব একটা প্রেফারও করি না।
কেন?
ঢাকার রাস্তায় যে জ্যাম, তাতে মনে হয় প্রাইভেট কারে সময়টা অনেক বেশি নষ্ট হয়।
সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়তে কেমন লাগে?
প্রথম প্রথম একটু ভয় লাগত। এখন তো মজাই লাগে। শুনতে একটু আজব লাগলেও রিকশার চেয়ে সিএনজিতে চড়তে বেশি ভালো লাগে। ভীষণ আরামদায়ক লাগে।
কিন্তু অনেককে তো বলতে শুনি, রিকশাই তাদের বেশি প্রিয়।
সাইকোলজিক্যালি আমার মনে হয়, সিএনজিতে চারদিকে আটকা, মনে হয়, খাঁচার মধ্যে আছি। আবার দেখাও যায় সব। আর রিকশায় উঠলে পড়ে যাওয়ার একটা ভয় থাকে। তাই এখনো রিকশায় উঠলে হুড তুলে ধরে বসি।
কত বছর পর ঢাকায় এলেন?
এক মাস কম তিন বছর।
বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে ঢাকার কোন পরিবর্তন প্রথমে চোখে পড়ে?
ঢাকায় এখন অনেক মানুষ। ঢাকায় মেট্রোরেল হয়েছে, ঢাকার বাইরে পদ্মা সেতু—কোনোটাই আমার দেখা হয়নি। দুঃখজনক হচ্ছে, ময়লা–আবর্জনা এখনো রাস্তাঘাটে দেখা যায়। ঢাকাকে অপরিষ্কার মনে হয়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পরিবেশের ব্যাপারে সচেতন হচ্ছি না। এত সুন্দর একটা দেশ, ঢাকার রাস্তাঘাট অনেক প্রশস্ত হয়েছে, কিন্তু নোংরা!
কী করা উচিত বলে মনে করেন?
অবশ্যই সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত। আমি মনে করি, ঢাকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। আমার তো মনে হয়, ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল শহর। নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় ফিরেছি, এক মাসও হয়নি, কিন্তু তিন-চার লাখ টাকা নেই! বিষয়টা এমন নয় যে অনেক অপচয় করেছি। সত্যি বলতে ঢাকাকে নিউইয়র্কের চেয়ে ব্যয়বহুল শহর মনে হয়। আমি তো উৎসবের কারণে এসেছি, তাই গায়েও লাগছে না। আনন্দে টাকা খরচ করছি। কিছুদিন আগে দেখলাম, একটি রেস্টুরেন্টে একবাটি মাংস, ওই পরিমাণ দিয়ে কেউ পেট ভরে ভাতও খেতে পারবে না। ওই পরিমাণের দাম ১৭০ টাকা। এসব দেখলে মনে হয়, ঢাকার মানুষের অনেক টাকা।
ঢাকার মানুষের কষ্টও তো আছে নাকি?
তা তো আছেই। স্ট্রাগল তো প্রত্যেক দেশে, প্রত্যেক শহরে আছে। ঢাকার রাস্তায় মানুষ শুধু যেভাবে যানজট সহ্য করে, এটা পৃথিবীর কারও পক্ষে সম্ভব নয় বলে মনে করি। আমি তো মহাবিরক্ত হয়ে গেছি। অফিশিয়াল কাজের জন্য আমাকে তো সকালে বের হতেই হয়। কদিন আগে একটা দাওয়াতে গেলাম, রাস্তায় আসা-যাওয়ার পথে পাঁচ ঘণ্টা লেগে গেল! অথচ এই পথটুকু যদি হেঁটেও যাওয়া হতো, তাহলে এক ঘণ্টার বেশি লাগত না। খুবই বিরক্তিকর। এত কষ্ট সহ্য করে ঢাকায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের পা ছুঁয়ে সালাম করা উচিত। যে জ্যাম সহ্য করে মানুষ কর্মক্ষেত্রে পৌঁছায়, এটা অবিশ্বাস্য। আগে যেমনটা দেখেছি, এখন তার চেয়ে বেড়েছে।
এবার আরণ্যক প্রসঙ্গ। ৫০ বছরের এই দলে আপনার কত বছর হয়েছে?
আমার ৩০ বছর। খুব ইচ্ছা ছিল, দলের ৫০ বছরে যে করেই হোক দেশে থাকব। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড না পাওয়া পর্যন্ত অনিশ্চিত ছিল। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতাম, যে করেই হোক ১০ জানুয়ারির মধ্যে গ্রিনকার্ডটা যেন পাই। একদিন আমার এক বন্ধু মেকআপ আর্টিস্ট শিব্বিরের পরামর্শে ট্র্যাকিং করি। পরদিন সকালেই মুঠোফোনে মেসেজ আসে। জানতে পারি, গেল বছরের ৩০ ডিসেম্বরেই আমার গ্রিনকার্ড আইনজীবীর চেম্বারে চলে গেছে। তারপর আবার দুই দিনের সরকারি ছুটি। টেনশন আরও বাড়ল। গ্রিনকার্ড হাতে না নিয়ে দেখছি, উৎসব শুরুর আগে ফিরতে পারছি না। তার মধ্যে কিছুদিন আগে নতুন চাকরিতে জয়েন করি। নানান টেনশন শেষে কোনো কিছু চিন্তা না করে টিকিট বুকিং দিয়ে দিলাম। মনে মনে যে চেয়েছিলাম আরণ্যকের ৫০ বছরের অংশ হব, সেই স্বপ্ন আমার সত্যি হয়েছে।
দেশে ফিরে মঞ্চে ওঠার পর কেমন অনুভূতি হয়েছে?
গত ১৭ জানুয়ারি ভোররাতে ঢাকায় ফিরেছি। অল্প কয়েকটা দিন মহড়া করার সুযোগ পেয়েছি। অনেক দিন পর মঞ্চে উঠে অনেক ভয় পেয়েছিলাম। প্রথম দিন মঞ্চে উঠলে যে ভয় হয়, সে রকম। কেঁদেও ফেলেছি। আমি ‘ময়ূর সিংহাসন’ ও ‘রাঢ়াঙ’—এই দুটি প্রযোজনায় অভিনয় করেছি। গলাটা ভেঙে গিয়েছিল। তবে একটা সংলাপও ভুলিনি। রাঢ়াঙ তো অসাধারণ শো হয়েছে। আমার মেসেঞ্জার মানুষের নানা রকম সুন্দর সুন্দর কথায় ভরে গেছে। এমন সব মানুষ নাটক দেখতে গেছেন, ভাবতেও পারিনি। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়েছে।
সবার এমন ইতিবাচক সাড়ায় অভিনয়ে ফেরার তাড়না অনুভব করছেন?
অভিনয় থেকে কখনো বিদায় নিয়েছি বলে তো মনে হয় না। কাউকে বলিওনি। কখনো বিদায় নেবও না।
কিন্তু দেশের বাইরে থাকার কারণে অনেকে তো ভেবেছেন এমনটা।
মঞ্চনাটক যদি বলি, সে ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা হবে। আগামী বছর (২৯ ফেব্রুয়ারি) মামুনর রশীদ আঙ্কেলের জন্মদিন, লিপইয়ার। এই সময়টায় নতুন আরেকটা নাটকের পাশাপাশি ‘রাঢ়াঙ’–এ অভিনয় করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি।
কারও সঙ্গে নতুন কাজের ব্যাপারে আলাপ হয়েছে?
অনিমেষ আইচ একটা ওয়েব সিরিজের কথা বলেছিল। এদিকে আমার আবার নিউইয়র্কে ফেরার সময় চলে এসেছে। তাই এবার করা হচ্ছে না।
ক্যামেরার সামনের সময়টা কেমন মিস করেন?
কী যে মিস করি, বলে বোঝাতে পারব না। কান্নাও পায়। অভিনয়শিল্পী তো আজীবনই অভিনয় করতে চায়। ভালো কাজের প্রস্তাব পেলে আমেরিকা থেকে ছুটে আসব। বছরে এখন দুবার করে আসার ইচ্ছা। অভিনয়ের টানে মাসে একবার করে আসতেও আপত্তি নেই।