
ঈদে মুক্তি পাবে আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত সিনেমা ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুক পোস্ট দিয়েও আলোচনায় এই অভিনেত্রী। এসব প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুর কাদের
কয়েকবার ঘোষণা দিয়েও ‘এশা মার্ডার’ আসেনি, এবার সত্যিই আসবে তো?
আজমেরী হক বাঁধন : আমাকে বলা হয়েছে আসবে। গত বছরও বলেছিল। কাজ যা বাকি ছিল, শেষ। ডাবিং শেষ। শুনেছি, শিগগিরই সার্টিফিকেশন বোর্ডে জমা দেবে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে শুটিং হচ্ছে। এটা এখন মুক্তি দেওয়াটা জরুরি।
কেমন হয়েছে?
আজমেরী হক বাঁধন : এটা পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধাঁচের সিনেমা। গান আছে, রোমাঞ্চ আছে, থ্রিল আছে, সাসপেন্স আছে। আমার জন্য আলাদা; কারণ, কখনো পুলিশের চরিত্র করিনি। লিড চরিত্র। তা–ও একটা মেয়ের ওপর গল্প। সাধারণত আমাদের এখানে নারীকেন্দ্রিক সিনেমা এখন হয় না, ওই জায়গা থেকে আমার কাছে আলাদা লেগেছে। নারীকেন্দ্রিক গল্পের ছবি মুক্তি পাবে, মানুষও দেখবে। আমি আশা করি। প্রেক্ষাগৃহে এসে দর্শক আমার ছবিটিকে সাপোর্ট করবে, এটাও মনে করছি।
নতুন আর কিছু করছেন?
আজমেরী হক বাঁধন : আরেকটা ছবি করেছি, ‘মাস্টার’। বানিয়েছেন রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। এ ছবিরও কাজ শেষ। আপাতত এই দুটি ছবি আছে। মাঝখানে আরও দুটি ছবির কথা চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রযোজক আর আগ্রহ দেখাননি। তাই ছবিগুলো হয়নি। তা ছাড়া আমি যে ধরনের ছবি করতে চাই, সে রকম গল্প খুব বেশি পাওয়া যায়, তা–ও তো নয়। কোনো নির্মাতা-প্রযোজক যদি পছন্দসই গল্প নিয়ে আসেন, আমি অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত।
ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কী মর্মান্তিকভাবে নষ্ট হলো এক ঐতিহাসিক সুযোগ! আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি ভালো, ন্যায়ের ওপর গড়া দেশ, যেখানে থাকবে সততা, থাকবে আশার আলো। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন চূর্ণবিচূর্ণ।’
আজমেরী হক বাঁধন : আমরা যখন জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছি, তখন একটা আশা ছিল মনে, একটা উত্তেজনা ছিল, একটা পরিবর্তনের ইচ্ছা ছিল। এখন সেই আশা চূর্ণবিচূর্ণ। আমি বিশ্বাস করেছিলাম, পরিবর্তন সম্ভব। আমি খুবই ইতিবাচক একজন মানুষ। আমার মনে হয়েছিল যে পরিবর্তনটা বুঝি শুরু হবে। কিন্তু শুরুটাও হলো না। আমি এটাও মনে করেছিলাম, এই সরকারও সব করবে না। একটা নির্বাচিত সরকার করবে। একটা কাঠামো তৈরি করে দিয়ে যাবে, এরপর যে সরকার আসবে, তার কাজটা যাতে আরেকটু বেগবান হয়। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে, এই সরকার ব্যর্থতার দিকে চলে যাচ্ছে।
কোন কোন ক্ষেত্রে?
আজমেরী হক বাঁধন : আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি ভালো দেশের; ন্যায়বিচার, সততা ও আশার ওপর গড়ে ওঠা জাতির। কিন্তু সে স্বপ্ন এখন চূর্ণবিচূর্ণ। একই দুর্নীতিগ্রস্ত, পচে যাওয়া ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে, যা প্রকৃত পরিবর্তনের সব আশা দমন করে ফেলছে। আমি শুধু হৃদয়ভাঙা নই, আমি ক্ষুব্ধ, লজ্জিত। আমার জন্য এটা খুবই সমস্যার আসলে। আমার মানসিক অসুস্থতাও আছে। এটা নিয়ে অনেকবার কথা বলেছি। আমার তীব্র বিষণ্নতা আছে। আমি আসলেই বিষণ্ন। শেষ কয়েক মাসে আমার ওজনও বেড়েছে। হতাশা থেকেই এমনটা হয়েছে। আসলে অনেক আশা ছিল। সব আশা চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
আপনার কথায় মনে হচ্ছে, ব্যবস্থার কোনো বদল হয়নি। এই ব্যবস্থা টিকে থাকার মূল কারণ কী?
আজমেরী হক বাঁধন : একমাত্র কারণ দুর্নীতি। আমরা আগাগোড়া দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি। আমাদের এই দুর্নীতি এখনো যায়নি। স্বৈরাচার চলে গেছে ঠিক, সিস্টেম তো রয়ে গেছে। আমি উপদেষ্টা পরিষদের কথা বলতে চাই, তারা প্রত্যেকে ভালো মানুষ। কিন্তু তাদের চেষ্টা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কিন্তু তারা এতটা সময় থাকার পরও যেহেতু সিস্টেম ঠিক করতে পারল না, এটার দায় তাদের নিতেই হবে। এই দায়ভার এড়ানোর কোনো সুযোগ বর্তমান সরকারের নেই।
আপনি ব্যক্তিগতভাবে এ অবস্থার বিরুদ্ধে কী করেছেন?
আজমেরী হক বাঁধন : আমার কিছুই করার নেই। যতটুকু করার ক্ষমতা ছিল, জুলাই আন্দোলনে ওদের সাপোর্ট করে করেছি। এখন যা করার আছে, আমার উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার কথা জানাচ্ছি। এ ছাড়া আমি আর কী করতে পারব? আমাকে অনেকে বলছে, তুমি রাজনীতিতে যোগ দাও, তোমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়া উচিত। আমি বললাম, কোনো দিন রাজনীতি করব না। আমার এই জীবনে কোনো দিন কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেব না। কিন্তু রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কথা বলে যাব, অধিকার চেয়ে যাব, স্বাধীনতা চেয়ে যাব; যত অন্যায় হবে, সেটার প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে যাব।
সাধারণ মানুষের কি কোনো দায় আছে?
আজমেরী হক বাঁধন : আমি জানি না, মানুষ এখন আবার সেই স্পিরিট থেকে কিছু করবে কি না। মানুষের কী হয়েছে জানি না, আমার বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে। স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। তবে আমি চাই যে একটা নির্বাচিত সরকার খুব তাড়াতাড়ি আসুক। আমরা যদি অন্যের অধিকার দিতে জানতাম, স্বাধীনতা বুঝতাম, তাহলে অনেক কিছু মিটে যেত। আমরা সব সময় ক্ষমতার রাজনীতি করি। ধর্মকে বিক্রি করি। আমরা টাকা বানানোর রাজনীতি করি। যেসব অপরাধী রাজনীতিক পালিয়ে গেলেন, তাঁদের অনেকে আমাদের লিডার ছিলেন। তাঁরা জাস্ট দেশটাকে খোকলা বানিয়ে চলে গেলেন। আমি একজন রাজনীতিবিদকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলাম, তার তো দেশ, সমাজের প্রতি দায় আছে। যার যার জায়গা থেকে দেশটাকে তো ভালোবাসতে হবে।
আপনার চাওয়া কী?
আজমেরী হক বাঁধন : আমি যা চাই, বলতে থাকি। আমি একটা সাম্যের দেশ চাই। শান্তির দেশ চাই। সেই চাওয়া কবে পূরণ হবে, জানি না। তবে আমি চেয়েই যাব। আমি শুধু বলে যাব, আমার জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব। আমার মেয়েসন্তান আছে, তাকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করব।
পরিবর্তনের কোনো পথ দেখেন?
আজমেরী হক বাঁধন : এখন আসলে নির্বাচিত সরকারের দিকে আমাদের হাঁটতে হবে। এই সরকারও বলছে তা...তবে সরকারকে সময়টা সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তাদের বিভিন্ন দল থেকে চাপ দেওয়াও হচ্ছে। একটা নির্বাচিত সরকার যা করতে পারবে, বিচ্ছিন্নভাবে এই সরকারের কিছু ভালো মানুষ তা করতে পারছেন না।