নাজিফা তুষি। ছবি: সুমন ইউসুফ
নাজিফা তুষি। ছবি: সুমন ইউসুফ

‘আইসক্রিম’ দিয়ে জীবনটাই বদলে যাওয়ার শুরু করে

আজ ১৪ অক্টোবর, অভিনেত্রী নাজিফা তুষির জন্মদিন। দিনটিতে হঠাৎ করেই মিলে গেছে কিছুটা অবসর। আজ শুটিং নেই। বিশেষ এই দিনে শুটিং ব্যস্ততাসহ ব্যক্তিগত জীবনের নানা প্রসঙ্গ তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম

প্রশ্ন

শুভ জন্মদিন...

নাজিফা তুষি: ধন্যবাদ।

প্রশ্ন

দিনটি আপনার কাছে কতটা বিশেষ?

নাজিফা তুষি: আমার কাছে দিনটি তেমন বিশেষ মনে হয় না। তবে আমাকে নিয়ে শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধুরা, পরিবারের মানুষ ভাবে, সারপ্রাইজ দেয়, এটাই ভালো লাগে। আমার কাছে দিনটিতে কোথাও ঘুরতে যেতে পারলে মনটা আরও ভালো থাকে। কখনো কখনো মন যা চায় করে ফেলি। চলে যাই ঘুরতে। এবার পারিনি।

প্রশ্ন

এবার পারলেন না কেন?

নাজিফা তুষি: এখন আমি ঘুরতে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। হাতে অনেক কাজের ব্যস্ততা। সিনেমার শুটিং চলছে। আরও কাজ রয়েছে। আজও শুটিং ছিল। সামান্য কিছুটা অসুস্থবোধ করছি। যে কারণে আজ আর শুটিং করতে যেতে হয়নি। অবসর মিলেছে।

নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

শুটিংয়ে কখনো জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছেন?

নাজিফা তুষি: আমি খুবই ভাগ্যবান। অনেকবার জন্মদিন শুটিংয়ে কাটিয়েছি। আমাদের এখানে দেখা যায়, শীতের শুরুর সময়গুলোতে বেশি শুটিং হয়। আমারও জন্মদিন এমন সময়। কোনো না কোনোভাবে এই সময়ে কাজে ব্যস্ত থাকা হয়। শিল্পী হিসেবে, জন্মদিনে পছন্দের কাজ, গল্প-চরিত্রের সঙ্গে থাকতে পারলে সবচেয়ে বেশি আনন্দ হয়। শুটিংয়ে জন্মদিনের অন্য রকম মজা থাকে।

প্রশ্ন

জন্মদিনে নাকি অনেক উপহার পান...

নাজিফা তুষি: উপহার তো আসছেই (হাসি)। পছন্দের, কাছের মানুষেরা উপহার দিলে ভালো লাগে। তবে উপহার প্রসঙ্গে আরেকটা বিষয় ভালো লাগে, কেউ যখন আমাকে বুঝে, কাছ থেকে চিনে কোনো কিছু উপহার দেয়। একসঙ্গে কথাবার্তা, আড্ডা মেলামেশার ফলে কার কী পছন্দ, সে সম্পর্কে জানা হয়। এভাবে কেউ কেউ আমাকে বুঝে অনেক উপহার দেয়। তখন সেই উপহার অনুভূতি তৈরি করে।

প্রশ্ন

ক্যারিয়ারে কী হবে, এমন কিছু ভাবায়?

নাজিফা তুষি: আমি ক্যারিয়ার নিয়ে খুব একটা ভাবি না। পরিশ্রম করলে, লক্ষ্য ঠিক রেখে ধৈর্য ধরলে সফলতা আসবেই। এর মাঝে জীবনকে কতখানি উপভোগ্য করে তুললাম, সেটা ভাবায়। জীবনকে যাপন করতে চাই, উপভোগ করতে চাই। সময় পেলেই নিজের মতো করে ছুটে বেড়াই। যতটাই পারি সেলিব্রেট করি। সুস্থ আছি, ভালো আছি। কাছের মানুষেরা ভালো আছে, এগুলোই চাই।

নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

সফলতা বনাম প্রতিযোগিতা; দুটো বিষয়কে কীভাবে দেখেন?

নাজিফা তুষি: আমাকে প্রতিযোগিতা কখনোই টানে না। শিল্প অঙ্গনে প্রতিযোগিতায় নেমে কেউ সফল হয় না। প্রতিযোগিতা শিল্পীর কাজ নয়। অসুস্থ প্রতিযোগিতা কখনো শিল্পীকে মহৎ কিছু দেয় না। আমি পরিশ্রমে বিশ্বাসী। আমার লক্ষ্য ঠিক আছে। আমি একটু করেই এগিয়েছি। সফল হয়েছি কি না, সেটাও সময় বলে দেবে। যদি ভাবি সফল হয়ে গেছি, তাহলে জীবনে আর অপ্রাপ্তি কী থাকে। একটি গণ্ডির মধ্যে আটকে গেলাম।

প্রশ্ন

আপনাকে অনেকেই বলেন সফল অভিনেত্রী...

নাজিফা তুষি: আমার অভিনীত ‘আইসক্রিম’, ‘হাওয়া’, ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘সিন্ডিকেট’ কাজগুলো দেখে হয়তো সেটা কেউ কেউ মনে করেন। সেটা আমি জানি। পরিচালকেরা কেউ কেউ বলেন, আমাকে ভেবে গল্প চিত্রনাট্য লিখছেন। এই কথাটা শোনার জন্যই পরিশ্রম করি। এখন আমি পছন্দমতো চরিত্রের দেখা পাচ্ছি। দর্শকদের চোখে যে সফলতা, এই মান ছাড়িয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য। জীবনে সফল হয়ে গেলেই শেষ। সফলতা আসুক, সফলতাকে খুঁজতে চাই আমি।

নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

আপনার শুরু ‘আইসক্রিম’ সিনেমা দিয়ে। এখন পর্যন্ত আপনার বড় প্রাপ্তি কী?

নাজিফা তুষি: ‘আইসক্রিম’ সিনেমা দিয়ে আমার জীবনটাই বদলে যাওয়ার শুরু করে। এখনো সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমি যেসব গুণী নির্মাতা, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছি; সেখানে যা চেয়েছি, সেভাবেই কাজ করতে পেরেছি। সবার সঙ্গে কাজ করে আমি শিখতে পেরেছি। এটা আমার ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি আমার অভিনয়কেও পরিপক্ব করেছে। অল্প বয়সেই আমি অনেক পরিপক্ব হয়েছি। এটা ছিল আমার জন্য আশীর্বাদ। সবকিছুর জন্যই কৃতজ্ঞতা।

প্রশ্ন

কত বছর বয়সে আপনার শোবিজ অঙ্গনে পা রাখা?

নাজিফা তুষি: অনেক ছোট থেকেই শোবিজ অঙ্গন আমাকে টানত। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই লাক্স চ্যানেল আই প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। তখন আর কত বয়স, সেই শুরু। তারপরে সিনেমার ক্যারিয়ারে একটু একটু করে পথ চলছি। এখন অনেকেই বলে আমি নাকি ‘হাওয়া’ সিনেমার মতো হারিয়ে যাচ্ছি। আমি এখনো আগের গতিতেই আছি। আমার চিন্তা চেতনা থেকে আমি একটুও সরে আসিনি। সামনে অনেক ভালো কাজ আসবে, আশা করি।

নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

স্কুল–কলেজের বন্ধু-আড্ডায়...

নাজিফা তুষি: এটা মাঝেমধ্যে ভাবি, স্কুল–কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে প্রাণ খুলে আড্ডা দেওয়াটা তেমন একটা হয়নি। পড়াশোনা শেষ করে অভিনয় পেশায় এলে যেভাবে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠত, বন্ধুদের সময় দেওয়া হতো, সেটা কম হয়েছে। আমি আমার বয়সীদের সঙ্গে কম মেশার সুযোগ পেয়েছি। মিশলেও অভিনেত্রী শব্দটা সামনে চলে আসত। অভিনয়ের প্রয়োজনে দেখা যেত যাঁদের সঙ্গে আড্ডা, কথাবার্তা হতো তাঁরা সবাই সিনিয়র। যে কারণেই আগে বলেছি, আমি অল্প বয়সেই অনেক কিছু শিখেছি। অনেক পরিণত হয়েছি।

প্রশ্ন

বাসায় কোনো কাজ করেন?

নাজিফা তুষি: বাসায় তো আমি অভিনেত্রী না। বাসায় নিজের কাজগুলো করতে হয়। রান্না বা অন্য কোনো কাজ অতটা করতে হয় না। এ জন্য পরিবারের সবাই সহায়তা করে। বাসায় শুটিংয়ের কারণে ঠিকমতো থাকাই হচ্ছে না। বেশি ঘুমাব আলসেমি করব, সেটাই হচ্ছে না।

প্রশ্ন

বিয়ে নিয়ে ভাবেন...

নাজিফা তুষি: বিয়ে নিয়ে আমি আপাতত ভাবি না। আসলে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে তো মানুষের হাতে নেই। বিয়ে হয়তো করব, হয়তো করব না; এই যা। এসব নিয়ে এত কিছু ভাবি না। জীবনে অনেক কিছু আছে ভাবার মতো।

প্রশ্ন

শোনা যাচ্ছে, আপনি রায়হান রাফীর ‘আন্ধার’ সিনেমার শুটিং করছেন, কেমন হচ্ছে শুটিং?

নাজিফা তুষি: এটা নিয়ে আমাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এভাবেই চুক্তি, আপাতত কোনো কথা বলা যাবে না। তবে এটা ঠিক আমি এখন একটি সিনেমার শুটিং নিয়েই ব্যস্ত। সামনেও আরও কাজ রয়েছে। টানা শুটিং করে যাব।

নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে