
বড় তারকার উপস্থিতি, আলোচিত ফ্র্যাঞ্চাইজির নতুন কিস্তি—অনেক কারণেই মুক্তির আগে সিনেমা নিয়ে বিশ্বব্যাপী দর্শকের আগ্রহ তৈরি হয়। তবে সব সিনেমা যে এই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে, তা নয়। অনেক ছবি সব প্রত্যাশা ব্যর্থ করে বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০২৫ সালে এমন সিনেমার সংখ্যা কম নয়। সবচেয়ে হতাশ করেছে মার্ভেল, ডিজনির বড় বাজেটের কয়েকটি সিনেমা। তালিকায় আছে ডোয়াইন জনসনের অভিনীত স্পোর্টস বায়োপিকও। ২০২৫ সালে বক্স অফিসে ব্যর্থ ১০ সিনেমার তালিকা প্রকাশ করে বিবিসি। সেই তালিকা অবলম্বনে জেনে নেওয়া যাক প্রত্যাশার নিরেখে সবচেয়ে ব্যর্থ হওয়া এসব সিনেমার কথা।
১. থান্ডারবোল্টস*
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে ‘থান্ডারবোল্টস*’—অঙ্কটা ছোট নয়। কিন্তু ২০১৯ সালে ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’ যা আয় করেছিল, এটি তার অর্ধেকেরও কম আয় করতে পেরেছে। চলতি বছর মার্ভেলের আরেক ছবি ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ কিছুটা ভালো করতে পারলেও দুটি ছবিই স্টুডিওর আয় তালিকায় ২৯ ও ৩০ নম্বরে রয়েছে।
দুটিকে একসঙ্গে বিচার করা হয়তো ঠিক হবে না। ‘থান্ডারবোল্টস*’ বেশ উপভোগ্য সিনেমা হলেও ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ ছিল একেবারেই খাপছাড়া। কিন্তু দুটি সিনেমাতেই যে সমস্যাটি প্রকটভাবে দেখা গেছে তা হলো, সিনেমা দুটি দেখে মনে হয় বহু বছর আগে শেষ হয়ে যাওয়া মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের শুটিংয়ের কোনো ফেলে দেওয়া অংশ থেকেই বানিয়ে নেওয়া হয়েছে সিনেমা দুটি। কোনো নতুনত্ব নেই।
তবে মার্ভেলের আরেক ছবি ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর: ফার্স্ট স্টেপস’ তুলনামূলকভাবে সাফল্য পেয়েছে। এতে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, স্টুডিও যদি তাদের সবচেয়ে আইকনিক চরিত্রগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবে, তবে তা দর্শকপ্রিয়তা পাবেই। এখানে আরেকটা ব্যাপার না বললেই নয়। চলতি বছর আন্তর্জাতিক টপ টেন ছবির তালিকায় মাত্র একটি সুপারহিরো ছবি ছিল—ওয়ার্নার/ডিসির ‘সুপারম্যান’। তবে কি সুপারহিরো সিনেমা থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন?
২. স্নো হোয়াইট
২০২৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘লিলো অ্যান্ড স্টিচ’ আয়ের দিক থেকে এক বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে ঢুকেছে, আর ‘হাউ টু ট্রেইন ইওর ড্রাগন’ও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। এ থেকে দর্শকদের চাহিদা নিয়ে একটা ব্যাপার বোঝা যায়। দর্শকেরা তাঁদের আগের দেখা প্রিয় অ্যানিমেশন বা লাইভ-অ্যাকশন কিংবা রিমেক দেখতে আগ্রহী।
তবে ব্যতিক্রম ছিল ডিজনির ‘স্নো হোয়াইট’। সিনেমাটি বাজেটই তুলতে পারেনি। সিনেমার সমস্যা ছিল স্পষ্ট—এটি একসঙ্গে দুই নৌকায় পা রেখে চলছিল।
একদিকে ১৯৩৭ সালের মূল কার্টুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার চেষ্টা, অন্যদিকে গল্পটিকে বিদ্রূপাত্মকভাবে নতুন আঙ্গিকে দেখানো। কিন্তু এর চেয়েও বড় সমস্যা ছিল মুক্তির আগে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্ক। কেউ র্যাচেল জেগলারের প্রধান চরিত্র হিসেবে আপত্তি তুলেছেন, কেউ আবার অভিনেতাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে। বিবিসির কেরিন জেমস তখন লিখেছিলেন, ‘“স্নো হোয়াইট” হয়ে উঠেছিল সময়ের শিকার—কাদামাখা এক রূপকথার রাজকন্যা।’ এত নেতিবাচক প্রচারণা পেরোতে হলে ছবিটিকে জাদুকরি কিছু হতে হতো। তবে বাস্তবে সিনেমাটি সেটা আর পারেনি।
৩. মিকি ১৭
২০২০ সালে অস্কারে ঘটে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। সে বছর অস্কারে সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নেয় অ-ইংরেজি ভাষার ছবি ‘প্যারাসাইট’। সারা বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীরা তাই ‘প্যারাসাইট’ নির্মাতা বং জুন-হোর পরের ছবির অপেক্ষায় ছিলেন। তবে সে অপেক্ষা দীর্ঘদিন ধরে চলতেই থাকল। একের পর এক মুক্তির তারিখ পেছানোর পর শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পায় ‘মিকি ১৭।’
কিন্তু তত দিনে বং জুন-হো অনেকটাই বিস্মৃতপ্রায়। তাঁর নির্মাণের ধারও যেন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমল। বিবিসির সমালোচক হিউ মন্টগোমারি সিনেমাটিকে মাত্র ‘টু স্টার’ দেন। তাঁর সমালোচনায় তিনি লেখেন, ‘গভীর হতাশাজনক ও নিষ্প্রভ’ এবং ‘পরিচয় সংকটে ভোগা একটি ছবি’। অনেক দর্শকও একমত তাঁর সঙ্গে।
‘প্যারাসাইট’-এর সাফল্যের পর ওয়ার্নার ব্রাদার্স নির্মাতা বং জুন-হোকে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বাজেট দেওয়া যুক্তিসংগত ভেবেছিলেন। এ সিনেমার প্রধান ভূমিকায় রবার্ট প্যাটিনসন থাকলেও, ‘মিকি ১৭’ স্টুডিওর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
৪. আফটার দ্য হান্ট
হলিউড কুইন জুলিয়া রবার্টস অভিনীত সিনেমা নিয়ে প্রত্যাশা কম ছিল। তাঁর মতো অভিনেত্রী আর ‘কল মি বাই ইওর নেম’ নির্মাতা লুকা গুদানিনো যখন এক হন তখন আশা করতে দোষ কী। ছবিতে এক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের মামলার কাহিনি উঠে এসেছে।
তবে মিটু নিয়ে বানানো সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। শোনা যায়, জুলিয়া রবার্টসের পারিশ্রমিকও এর দ্বিগুণ ছিল। আর মোট বাজেটের সঙ্গে তুলনা করলে এটি মাত্র ৮ ভাগের ১ ভাগ টাকা কামাতে পেরেছে।
সমালোচকদের মতে, নির্মাতার দীর্ঘ ও এলোমেলো ছবিটি দর্শককে পুরোপুরি আকর্ষণ করতে পারেনি। বিশদ আলোচনা, পরিপাটি পোশাকের তারকাবহুল কাস্ট, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের মতো অভিজাত প্রেক্ষাপট আর রহস্য—কিছুই আকর্ষণ করতে পারেনি। অতিরিক্ত সাবপ্লট, অতিরঞ্জিত হাস্যরস আর অতি দীর্ঘ এ সিনেমা দর্শকদের ক্লান্ত করে তুলেছে। তাই ‘আফটার দ্য হান্ট’ যেন অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে উঠেছিল ব্যয়বহুল সেসব টেলিভিশন সিরিজের মতো, যেগুলো আজকাল প্রতিটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে দেখা যায়। তাই সিনেমা হলে গিয়ে একই পুনরাবৃত্তি দেখতে দর্শকেরা টাকা খরচ না করাটাই যৌক্তিক মনে করেছেন।
৫. ক্রিস্টি
‘ক্রিস্টি’ যেন ‘আমেরিকানা’ ও ‘ইডেন’ এই দুটি ছবির পথ ধরেই হাঁটল। সিডনি সুইনি এ তিনটি সিনেমাতেই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন, আর তিনটি সিনেমাই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
নারী বক্সার ক্রিস্টি মার্টিনের জীবনীভিত্তিক ‘ক্রিস্টি’ সিনেমাটি যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তির প্রথম সপ্তাহে এতটাই খারাপ ব্যবসা করেছে যে পরিসরে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির ইতিহাসে অন্যতম খারাপ বলা যায়। ক্রিস্টির চরিত্রে অভিনয় করেন সিডনি সুইনি।
এই সিনেমার ফ্লপ হওয়া অনেকের কাছেই ছিল বিস্ময়কর। কারণ, সিডনি সুইনি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকাদের একজন। এতে একটা ব্যাপার যেন স্পষ্ট, সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা আর সিনেমার তারকাখ্যাতি এক জিনিস নয়। এ ছাড়া আমেরিকান ইগল বিজ্ঞাপনে সুইনির উপস্থিতি ঘিরে বিতর্কও দর্শকখরার একটি কারণ হতে পারে।
তবে আলোচনার আড়ালে পড়ে যায় একটি বিষয়—সুইনি নিয়মিত এমন স্বাধীন ধারার ছবি করেন, যেগুলো তাঁর গ্ল্যামারকে পুঁজি করে না। ‘অ্যানিওয়ান বাট ইউ’ সিনেমায় হয়তো আবেদনময়ী চরিত্রে তাঁকে হাজির করা হয়েছিল, কিন্তু ‘ইম্যাকুলেট’, ‘রিয়েলিটি’–এর মিনেমায় গ্ল্যামহীন চরিত্র ছাড়াই প্রশংসা পেয়েছেন ‘ইউফোরিয়া’ তারকা।
তবে সিডনির ব্যর্থ ছবিগুলো আদৌ মূলধারার হলিউড ছবি ছিল না। ‘ক্রিস্টি’ বক্স অফিসে ধসে পড়ার পর ইনস্টাগ্রামে সুইনি লিখেছিলেন, ‘আমরা সব সময় বক্স অফিসের আয়ের জন্য শিল্প করি না, প্রভাবের জন্যও করি।’ হয়তো তাঁর কথার মধ্যে সত্যিই কিছু আছে।
৬. আই নো হোয়াট ইউ ডিড লাস্ট সামার
কিছুদিন ধরেই নব্বইয়ের দশক আর চলতি দশকের অনেক আলোচিত ফ্র্যাঞ্চাইজি সিনেমার পুনর্জাগরণ বেশ লাভজনক ছিল। ‘স্ক্রিম’ ও ‘ফাইনাল ডেস্টিনেশন’ই এর প্রমাণ। তাই ‘স্ক্রিম’–এর চিত্রনাট্যকার কেভিন উইলিয়ামসনের হাত ধরেই যখন ‘আই নো হোয়াট ইউ ডিড লাস্ট সামার’ ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন পরিচালকেরা হয়তো ধারণা করতে পারেননি এ সিনেমার ভবিষ্যৎ কী হতে যাচ্ছে।
বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ভৌতিক সিনেমার সিকুয়েল ‘আই নো হোয়াট ইউ ডিড লাস্ট সামার’ বক্স অফিসে আলোচনাতেই আসতে পারেনি। এই ফ্লপের কারণ হিসেবে সমালোচকেরা বলছেন, ১৯৯৭ সালেও এই সিনেমা ‘স্ক্রিম’ বা ‘ফাইনাল ডেস্টিনেশন’–এর মতো জনপ্রিয়তা পায়নি। তাই এ সিনেমাটির সঙ্গে দর্শক নিজের অতীতের কোনো স্মৃতি হয়তো মেলাতে পারেননি।
৭. স্প্রিংস্টিন: ডেলিভার মি ফ্রম নোহোয়ার
হার্টল্যান্ড রকের পথিকৃৎ, ‘দ্য বস’খ্যাত গায়ক ব্রুস স্প্রিংস্টিনের জীবন নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি নিয়ে অনেক আশা ছিল। অনেকে ভেবেছিলেন স্কট কুপারের সিনেমাটি হয়তো বব ডিলানকে নিয়ে নির্মিত ‘আ কমপ্লিন্ট আননোন’–এর মতো হবে।
‘দ্য বিয়ার’ তারকা জেরেমি অ্যালেন হোয়াইট ব্রুস স্প্রিংস্টিনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ব্রুসের মতো গাওয়া ও বাজানোর জন্য যথেষ্ট পরিশ্রমও করেছেন। আর লেখক-পরিচালক স্কট কুপার আগেও একজন মার্কিন গায়ক-গীতিকারকে নিয়ে ‘ক্রেজি হার্ট’ নামের একটি সিনেমা বানিয়ে অস্কার মনোনয়ন বাগিয়েছিলেন। যদিও সিনেমাটি কাল্পনিক ঘটনার ওপর নির্মিত হয়েছিল, কারও বায়োপিক ছিল না। কিন্তু এত আশায় শেষমেশ জল ঢেলে দেয় সিনেমাটি মুক্তির পর ডাহা ফ্লপ করে।
সমালোচকেরা বলছেন, নিউ জার্সিতে বসে এক রকস্টারের বিষণ্ন ঘোরাঘুরি, প্রেম, মাঝেমধ্যে বেডরুমে বসে অ্যাকুস্টিক গানের অ্যালবাম রেকর্ডের গল্প দর্শকদের টানতে পারেনি। স্প্রিংস্টিনের স্টেডিয়াম কাঁপানো গানগুলোর উচ্ছ্বাসই যেন ছিল দর্শকদের চাওয়া। তাই ‘ডেলিভার মি ফ্রম নোহোয়ার’ শেষ পর্যন্ত কোথাওই পৌঁছাতে পারেনি। সিনেমাটি শুধু একটি ছোট্ট অংশকে তুলে ধরতে চেয়েছিল, যা বায়োপিক সিনেমার বহুল পরিচিত প্রবণতার চেয়ে আলাদা। এ ধরনের সিনেমায় যে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ব্যাপার থাকে, এ সিনেমায় সেটা হয়ে ওঠেনি।
৮. এলিও
২০২৪ সালে পিক্সারের ‘ইনসাইড আউট ২’ সারা বিশ্বে ঝড় তুলেছিল। তাই পিক্সার স্টুডিওর পরের অ্যানিমেশনটি নিয়ে প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু জুনে মুক্তির পর ‘এলিও’ সেই প্রত্যাশাকে মাটিতে নামিয়ে আনে। ভিনগ্রহে কিশোর এলিওর অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত ছবিটি খুব একটা খারাপ ছিল না। সিনেমাটি মূলত আরেক বিখ্যাত সিনেমা ‘কোকো’র সহপরিচালক অ্যাড্রিয়ান মোলিনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার গল্প থেকে অনুপ্রাণিত। একটি মানবিক গল্পই ছিল এ সিনেমার মূল ভিত্তি।
কিন্তু ২০২৪ সালে মোলিনা ও আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এ প্রকল্প ছেড়ে দেন। তাঁদের জায়গায় আসেন দুজন ভিন্ন পরিচালক। তাঁরা কোনো জোরালো গল্প দাঁড় করাতে পারেননি। এ ছবি ব্যর্থ হলেও ডিজনি শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়িয়েছে আরেক ভিনগ্রহবাসীর সাহায্যে! সে হলো ‘লিলো অ্যান্ড স্টিচ’ সিনেমার স্টিচ। এটিই চলতি বছর ডিজনির সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা।
৯. মেগান ২.০
তিন বছর আগে মুক্তি পাওয়া সায়েন্স ফিকশন হরর সিনেমা ‘মেগান’ শুধু মিমের মাধ্যমেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জয় করে নিয়েছিল। লম্বা চুল আর মিষ্টি পোশাকের সেই হত্যাকারী রোবট হয়ে উঠেছিল সবার প্রিয় হ্যালোউইনের পোশাকের থিম। ‘মডেল ৩ জেনারেটিভ অ্যান্ড্রয়েড’-এর ভীতিকর নাচের একটি দৃশ্য ছিল ভাইরাল ক্লিপ। তাই এর সিকুয়েল নিয়ে দর্শকের প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। তবে পরিচালক জেরার্ড জনস্টোন যদি শুধু আগের মতোই আরেকটি ছবি বানাতেন, তবে এ সিনেমা হিট হতে পারত। কিন্তু পরিচালক সে পথে হাঁটেননি।
প্রথম ছবিটি ছিল শহরের উপকূলে একটি স্ল্যাশার হরর আর দ্বিতীয়টি হয়ে ওঠে বিস্তৃত ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অ্যাকশন থ্রিলার। ছবিটি বিনোদনমূলক হলেও দর্শকের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। সিনেমার প্রযোজক জেসন ব্লাম পরবর্তী সময়ে বলেন, নির্মাতারা চরিত্রটির জনপ্রিয়তাকে অতিমূল্যায়ন করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, মেগানকে দিয়ে যেকোনো কিছু করা যাবে। তবে মানুষ যা ভালোবেসেছে, সেটাই তারা আবার দেখতে চায়। আর এটাই আমাদের ভুল ছিল।’
১০. দ্য স্ম্যাশিং মেশিন
ডোয়েন জনসন এক দশকের বেশি সময় ধরে হলিউডের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তারকাদের একজন। কিন্তু প্রত্যেক বাণিজ্যিক তারকাই একটা সময় মনে করেন, ‘সিরিয়াস অভিনেতা’ হিসেবেও তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন। আর এ জায়গাতেই তাঁরা ভুল করে বসেন। ‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’ ছিল জনসন ওরফে দ্য রকের সেই চেষ্টার ব্যর্থ ফল।
অথচ এই সিনেমার সব লক্ষণই ছিল আশাব্যঞ্জক। জনসনের সহ–অভিনেত্রী ছিলেন এমিলি ব্লান্ট, পরিচালক বেনি সাফদি—যিনি ভাই জশ সাফদির সঙ্গে ‘গুড টাইম’, ‘আনকাট জেমস’–এর মতো সিনেমা বানিয়েছেন। গল্পটি ছিল আসক্তির সঙ্গে লড়াই করা এক মিক্সড মার্শাল আর্টিস্টের সত্য ঘটনা।
কিন্তু সমস্যা হলো, জনসন এমন এক চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে রূপে তাঁকে দর্শকেরা বারবার দেখেছেন। তিনি ছিলেন এক ক্যারিশমাটিক রেসলার, আর এ সিনেমাতেও তাঁর চরিত্র ছিল তা–ই। তবে মূল পার্থক্য একটাই, ‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’ এক বিষণ্ন গল্প। আর দ্য রকের ছবি দেখতে গিয়ে আর যা–ই হোক, কেউ বিষণ্ন হতে চাইবেন না।
সিনেমাটি জনসন আসলে করেছেন অস্কার জয়ের আশায়। মুক্তি আগে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘হলিউডে যখন বক্স অফিসই প্রধান হয়ে ওঠে, তখন আপনাকে এক কোণে ঠেলে দেওয়া হয়। বলা হয়, তুমি এর বাইরে যেতে পারবে না। তখন নিজের মধ্যেও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়। এ সময় প্রিয়জনের প্রেরণা জরুরি। তারা যখন বলে “তুমি পারবে”, তখন কাজটা সহজ হয়।’
অভিনেতা জানান, তিনি সিনেমাটি করে কাউকে কিছু দেখিয়ে দিতে চাননি বরং নিজের ভেতরের ক্ষুধা মেটাতে চেয়েছেন। তাঁর ভাষ্যে, ‘অনেক দিন ধরেই মনে হতো, আমি কি নিজের স্বপ্নে বাঁচি, নাকি অন্যের? এ সিনেমা নিজের কাছে করা নিজেরই প্রশ্নের উত্তর।’ জনসন উত্তর পেয়েছেন কি না, বলা মুশিকল। তবে সিনেমাটি যে ডাহা ফ্লপ হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই।
কেবল পরিচালকের জন্য আক্ষেপ থেকেই যায়। তাঁর ভাই জশ সাফদির ‘মার্টি সুপ্রিম’ (টিমোথি শ্যালামে অভিনীত) একই ঘরানার ছবি হলেও প্রশংসা কুড়িয়েছে।