
দুই বছর আগের কথাই যদি বলা যায়, সেবার বিশ্বব্যাপী আয়ে শীর্ষে ছিল ‘বার্বি’ সিনেমা। গত বছর শীর্ষ ছিল ‘ইনসাইড আউট-২’ সিনেমাটি। সিনেমার বক্স অফিস মানেই সাধারণত হলিউডের আধিপত্য—এমন ধারণাই প্রচলিত। কিন্তু এ বছর সেই পরিচিত চিত্র বদলে গেছে। ২০২৫ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমাটি আর হলিউডের নয়, জায়গা করে নিয়েছে ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন দেশের একটি ছবি। বদলে যাওয়া দর্শক রুচি, বৈশ্বিক বাজার আর নতুন ট্রেন্ডের ইঙ্গিত মিলছে এই তালিকায়। আয়ের দিক থেকে শীর্ষে থাকা এমন ১০টি সিনেমা নিয়েই এই প্রতিবেদন।
বছরের শুরুতে আলোচনায় আসে সিনেমাটি। একের পর এক আয়ে রেকর্ড গড়ে। বছর শেষেও আয়ে শীর্ষ রয়েছে আইএমডিবিতে ৮ রেটিংয়ের এই সিনেমা। হলিউড নয়, এ বছর বিলিয়ন ডলার আয়ের রেকর্ড গড়া চীনের এই সিনেমার নাম ‘নে ঝা-২ ’। মান্দারিন ভাষার এই সিনেমায় উঠে এসেছে চীনের নিজস্বতার কথা। সিনেমাটি দর্শকদের এতটাই পছন্দ হয় যে এটির আয় প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছে যায়। এর আয় ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বা ১৯০ কোটি ডলার, যা চীনের সিনেমার জন্য এ যাবৎকালের রেকর্ড।
‘জুটোপিয়া ২’ এ বছর বিশ্ব সিনেমার বাজারে এক বিস্ময়কর সাফল্যের গল্প লিখেছে। মুক্তির পর থেকেই দর্শকপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা এই অ্যানিমেশন সিনেমা বর্তমানে বছরের সর্বোচ্চ আয় করা ছবির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ২০১৬ সালের জনপ্রিয় সিনেমা ‘জুটোপিয়া’র এই সিকুয়েলে আবারও ফিরেছে খরগোশ, পুলিশ, জুডি হপস ও ধূর্ত শিয়াল নিক ওয়াইল্ড। তবে এবার গল্প আরও পরিণত, আরও গভীর। নতুন রহস্য, সামাজিক বার্তা আর আধুনিক নগরজীবনের জটিলতা নিয়ে এগিয়েছে ‘জুটোপিয়া ২’–এর গল্প। বিশেষ করে বৈষম্য, ক্ষমতা ও নৈতিকতার প্রশ্নগুলো নতুনভাবে উঠে এসেছে এই পর্বে।
একাকী এক হাওয়াইয়ান মেয়ে গল্প নিয়েই এ সিনেমা। তার সঙ্গে এক ভিনগ্রহের প্রাণীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সেই বন্ধুত্বই হওয়া এলিয়েন বা ভিনগ্রহের মেয়েটি নিজের ভেঙে যাওয়া পরিবারকে আবার জোড়া লাগাতে সাহায্য করে। ভিনগ্রহবাসী ও শিশুর এমন গল্প নিয়ে তৈরি ‘লিও অ্যান্ড স্টিচ’ সিনেমা। ডিজনির এই সিনেমাও নতুন রেকর্ড গড়েছে এবার। এ বছর তিনটি সিনেমা বিলিয়ন ডলার আয় করে। এর শেষ সিনেমা এটি। সিনেমাটির মোট আয় ১০৩ দশমিক ৮ কোটি ডলার। বাজেট ছিল ১০ কোটি ডলার।
অ্যাডভেঞ্চার, বন্ধুত্ব ও সৃষ্টিশীলতার গল্পে ভর করে এগিয়েছে ছবিটি। ভিডিও গেমপ্রেমীদের পাশাপাশি পারিবারিক দর্শকদেরও আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে ভিডিও গেম থেকে বড় পর্দায় আসা ‘আ মাইনক্র্যাফট মুভি’। এটি এ বছর বিশ্ব বক্স অফিসে চমক দেখিয়েছে। মুক্তির পর থেকেই দর্শকের ব্যাপক আগ্রহের কারণে সিনেমাটি বছরের সর্বোচ্চ আয় করা ছবির তালিকায় চতুর্থ স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। এর আয় ৯৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। পরিচিত চরিত্র, মজার সংলাপ আর দৃষ্টিনন্দন অ্যানিমেশন ছবিটির বড় শক্তি। বক্স অফিস সাফল্যের মাধ্যমে ‘আ মাইনক্র্যাফট মুভি’ প্রমাণ করেছে, গেমভিত্তিক সিনেমাও বৈশ্বিক দর্শকের মন জয় করতে পারে।
এ বছর আয়ে বিলিয়ন ডলারের ঘর পার করতে না পারলেও আলোচনায় ছিল ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড: রিবার্থ’ সিনেমাটি। প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরের দুনিয়া আবার ফিরে এসেছে এর গল্পে। জনপ্রিয় জুরাসিক ফ্র্যাঞ্চাইজির এই নতুন পর্বে আগের গল্পের ধারাবাহিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন চরিত্র ও নতুন সংকট। মানুষের লোভ, বিজ্ঞান ও প্রকৃতির সংঘাত—এই চিরচেনা থিমকে আরও বিস্তৃত পরিসরে দেখানো হয়েছে সিনেমাটিতে। দৃষ্টিনন্দন ভিএফএক্স, বাস্তবসম্মত ডাইনোসর আর টান টান অ্যাকশন দৃশ্য ছবিটির বড় শক্তি। পাশাপাশি আবেগ ও নৈতিকতার প্রশ্নও গুরুত্ব পেয়েছে গল্পে। সিনেমাটি ৮৬ দশমিক ৯ কোটি ডলার আয় করে এ বছর আয়ে শীর্ষ ৫ নম্বরে রয়েছে।
‘ডেমন স্লেয়ার: কিমেৎসু নো ইয়াইবা-ইনফিনিটি ক্যাসেল’ সিনেমাটির আয় ৭১ দশমিক ৫ কোটি ডলার। ২০২৫ সালে দর্শকদের মন জয় করেছে এবং বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে শীর্ষ ৬ অবস্থান দখল করেছে। সিনেমাটি মূল গল্পের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে টানসির অভিযান এবং ডেমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ফুটিয়ে তোলে। চিত্তাকর্ষক অ্যানিমেশন, নাটকীয় অ্যাকশন সিকোয়েন্স এবং আবেগঘন মুহূর্তগুলো দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কাহিনির মধ্যে বন্ধুত্ব, আত্মত্যাগ ও বীরত্বের বার্তা শক্তভাবে প্রতিফলিত হয়। ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট এবং সাউন্ডট্র্যাকও প্রশংসিত হয়েছে। এর জনপ্রিয়তা স্পষ্ট করে যে ডেমন স্লেয়ারের জাদু এখনো অমলিন। সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং ৮.৫।
‘হাউ টু ট্রেইন ইয়োর ড্রাগন’ ২০২৫ সালের বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসের আয়ে শীর্ষ ৭ নম্বর অবস্থান দখল করেছে। সিনেমাটিতে হিকাপ এবং টুথলেসের বন্ধুত্বের গল্পকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেখানে সাহস, আস্থা ও বন্ধুত্বের মূল বার্তাগুলো প্রতিফলিত হয়। গল্পের মধ্যে একাগ্রতা, বীরত্ব ও পারিবারিক সম্পর্কের আবেগ গভীরভাবে প্রকাশিত হয়েছে। শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় দর্শকই সিনেমাটির আবেগপূর্ণ মুহূর্ত এবং উত্তেজনাপূর্ণ অভিযান উপভোগ করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে ড্রাগন এবং মানুষের বন্ধুত্বের গল্পের বড় দর্শক রয়েছে। সিনেমাটির আয় ৬৩ দশশিক ৬ কোটি ডলার।
‘এফ ওয়ান: দ্য মুভি’ মূলত ফর্মুলা ওয়ান রেসিং-এর জগৎকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সিনেমার কাহিনি প্রতিযোগিতা, টিমওয়ার্ক এবং রেসারদের ব্যক্তিগত সংগ্রামের চারপাশে ঘোরে। প্রধান চরিত্র হিসেবে এক তরুণ রেসার তার দক্ষতা, সাহস ও কৌশল ব্যবহার করে শীর্ষে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। রেস ট্র্যাকের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য, দ্রুতগতির অ্যাকশন সিকোয়েন্স এবং রেসারদের মনোবল ও সাহসকে নাটকীয়ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সিনেমার মধ্যে প্রতিযোগিতা, জয়-পরাজয় এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প দর্শকদের আবেগে কাঁপিয়ে দেয়। এই সিনেমা শুধু স্পোর্টস ফ্যানদের জন্য নয়, বরং অ্যাডভেঞ্চার ও ড্রামাপ্রেমীদেরও আকর্ষণ করে। সিনেমাটি এ বছর আয়ে শীর্ষ ৮–এ রয়েছে। এর আয় ৬৩ কোটি ডলার।
২০২৫ সালের সুপারম্যান সিনেমা দর্শকদের মন জয় করেছে। গল্পে সুপারম্যানের নৈতিকতা, সাহস এবং মানবিক দিক ফুটে উঠেছে, যেখানে তিনি মানুষের জীবন রক্ষা এবং শত্রুদের মোকাবিলা করেন। চমৎকার ভিজ্যুয়াল এফেক্ট, অ্যাকশন-প্যাকড সিকোয়েন্স এবং আবেগঘন মুহূর্ত দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। সিনেমায় নায়কত্ব, আত্মত্যাগ এবং মানবিক মূল্যবোধের বার্তা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ই এই সিনেমা থেকে উত্তেজনা এবং বিনোদনের পূর্ণ অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং ৭.১। এতে ভোট দিয়েছেন তিন লাখের বেশি সিনেমাপ্রেমী।
২০২৫ সালের ‘মিশন: ইম্পসিবল-দ্য ফাইনাল রেকনিং’ আয়ে বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০ সিনেমার মধ্যে ১০ নম্বরে স্থান পেয়েছে। ইথান হান্টের শেষ অভিযান উত্তেজনা ও ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাকশন দিয়ে ভরপুর। চমকপ্রদ চেজ সিকোয়েন্স, নাটকীয় প্রতিশোধ এবং অপ্রত্যাশিত মোড় দর্শকদের তুমুল বিনোদন দিয়েছে। ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট এবং স্টান্টের উৎকৃষ্ট সংমিশ্রণ সিনেমাটিকে আরও রোমাঞ্চকর করেছে। অ্যাকশনপ্রেমী দর্শক এবং মিশন সিরিজের ভক্তরা উভয়ই এই সিনেমা থেকে উত্তেজনা ও বিনোদনের পূর্ণ অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। সিনেমাটি ৬১ দশশিক ৬ কোটি ডলার আয় করেছে। সিনেমাটির আইএমডিবি ৭.২।