প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের, পত্রিকাটির নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়া ও পরে একই আইনে মামলা করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি মনে করেন, সমাজে প্রশ্ন করার জায়গা থাকতে হবে। দ্বিমত করার জায়গা থাকতে হবে। যে আইন সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর, সেই আইনের পক্ষে নন তিনি। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম আলোর রিপোর্টে ভুলটা কী, আমি এখনো বুঝি নাই।’ আন্তর্জাতিক এই চলচ্চিত্র নির্মাতার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘যে বা যাঁরা প্রথম আলোর সাংবাদিক এবং সম্পাদকের বিরুদ্ধে ঘটনাটা মামলা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন, জেনে রাখবেন, এটা আমাদের আরও অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেল। আমি ওই খবরটা নিয়ে আলোচনায় আর না যাই। কারণ, অনেক কথা ইতিমধ্যেই হয়েছে। শুধু এইটুকু বলি, সংবাদ নিয়ে যে কেউ সংক্ষুব্ধ হতে পারেন। সেটা ডিল করার অনেক রাস্তাও আছে।
যে বা যাঁরা প্রথম আলোর সাংবাদিক এবং সম্পাদকের বিরুদ্ধে ঘটনাটা মামলা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন, জেনে রাখবেন, এটা আমাদের আরও অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেল।
সব বাদ দিয়ে যে রাস্তাটা বেছে নেওয়া হলো, এটা দেশের জন্য ভয়ংকর। আর সরকারের পিআর অ্যাঙ্গেল থেকেও যদি বলি, এই রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে “চাল-ডাল-মাংসের স্বাধীনতা চাই”-স্লোগানটার মধ্যে আরও কয়েক হাজার গুণ বেশি শক্তি ইনজেক্ট করা হলো।
আশা করব শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং এই অতি উৎসাহের রাশ টেনে ধরা হবে। এবং আবারও বলছি, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করেন! আমি সব সময় এই কথাটা বলি, ভাইয়েরা এবং বোনেরা আমার, আইন করার সময় এই জিনিস মাথায় রাখবেন যে আইনটা আপনার বিরুদ্ধে প্রয়োগ হলে আপনার অবস্থাটা কী হবে।
মানে আপনি যখন ক্ষমতায় থাকবেন না, তখন এই আইন আপনার কাছে কীভাবে ফিরে আসবে, এটা মাথায় রেখে যে আইন করা হয়, সেটাই তুলনামূলক উত্তম আইন। কারণ, মনে রাখবেন “চিরদিন কারও নাহি যায় সমান” পৃথিবীতে আজীবন থাকে—এ রকম কোনো সরকার আসে নাই এখনো।
রাস্তাঘাটে মানুষ তো বলছেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠছে। এমনকি স্বয়ং মন্ত্রীরাও বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দাম বেড়ে গেছে। তো এই কথাটা কেন এত কড়া রিঅ্যাকশন ইনভাইট করল, আমি বুঝলাম না
একটা স্বাস্থ্যকর সমাজে প্রেসের ভুল করার স্বাধীনতা থাকতে হবে। যদিও ছবি ওলটপালট করা ছাড়া প্রথম আলোর রিপোর্টে ভুলটা কী, আমি এখনো বুঝি নাই। রাস্তাঘাটে মানুষ তো বলছেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠছে। এমনকি স্বয়ং মন্ত্রীরাও বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দাম বেড়ে গেছে। তো এই কথাটা কেন এত কড়া রিঅ্যাকশন ইনভাইট করল, আমি বুঝলাম না। কিন্তু যদি প্রেস ভুলও করে তার রিঅ্যাকশন এই রকম রিপ্রেসিভ হইতে পারে না। কেন পারে না, সেটা জানতে গুগল করলে এই বিষয়ে অনেক ক্ল্যাসিক লেখা পেয়ে যাবেন। যা–ই হোক, শেষ করি একটা কথা দিয়ে। সমাজে প্রশ্ন করার জায়গা থাকতে হবে। দ্বিমত করার জায়গা থাকতে হবে।’