নেটফ্লিক্সের ট্রেন্ডিং তালিকা থেকে সিনেমা বাছাই করেন অনেকেই। সময় যখন স্বল্প, তখন কী দেখব, কোন ধরনের সিনেমা দেখব—এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে রেহাই পেতে ট্রেন্ডিং লিস্ট বেশ ভালো কাজ করে। তবে সব সময় কি আপনার ট্রেন্ডিং লিস্টকে ভরসা করা উচিত?
একনজরেসিনেমা: ‘জুয়েল থিফ: দ্য হাইস্ট বিগিনস’জনরা: অ্যাকশন–থ্রিলারপরিচালক: কুকি গুলাটি ও রবি গ্রেওয়ালস্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্সরানটাইম: ১১৬ মিনিটপ্রধান চরিত্রে: সাইফ আলী খান, জয়দীপ আহলাওয়াত, নিকিতা দত্ত, কুনাল কাপুর
‘জুয়েল থিফ: দ্য হাইস্ট বিগিনস’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এপ্রিলের ২৫ তারিখে। মুক্তির এক মাস পেরিয়ে গেলেও সিনেমাটি এখনো নেটফ্লিক্সের শীর্ষ দশের তালিকায় রয়েছে। সিনেমাটি যখন ডাকাতি নিয়ে আর যেখানে প্রধান চরিত্রে রয়েছেন সাইফ আলী খান, দর্শকেরা যে এ রকম সিনেমা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবেন, তা বলাই বাহুল্য। তবে দর্শকের প্রত্যাশা কি পূরণ করতে পেরেছে সাইফ আলী খানের এই অ্যাকশন-থ্রিলার সিনেমা? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
রাজন আউলাখ একজন দুর্লভ চিত্রকর্ম ও রত্ন সংগ্রাহক। তবে সে এসব জিনিস সংগ্রহ করে চুরি বা ডাকাতি করে। তারপর বহুমূল্যে তা বিক্রি করে দেয় আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনদের কাছে। এসব জিনিস সংগ্রহ করতে সে যেকোনো ধরনের অপরাধ করতে পিছপা হয় না। হঠাৎ খবরে আসে বিখ্যাত আফ্রিকান লাল হীরা ‘রেড সান’ ইন্ডিয়ায় প্রদর্শনীর জন্য আসতে চলেছে। এই হীরা নিজের করতে সে মারিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু এ হীরা চুরি করতে তাকে একমাত্র একজনই সাহায্য করতে পারে, রেহান রায়। রেহান একজন কুখ্যাত চোর। যেকোনো জিনিস চুরি করা তার জন্য বাঁ হাতের খেল। তবে এখনো তার ওপর নজর রাখছে ভারতীয় পুলিশ। কিন্তু সে আমেরিকায় থাকায় গ্রেপ্তার করতে পারছে না।
রাজন সৃষ্টি করে এমন এক পরিস্থিতি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে আসতে বাধ্য হয় রেহান। শুধু তা–ই নয়, রাজনের জন্য রেড সান চুরি করতেও সম্মত হয় সে। কিন্তু পুলিশের চোখ আর প্রযুক্তির বেড়া ডিঙিয়ে রেহান কি পারে রেড সান চুরি করতে? নাকি রাজনের চালে ফেঁসে যায় সে? ‘জুয়েল থিফ: দ্য হাইস্ট বিগিনস’ সিনেমায় দেখানো হয়েছে সেই কাহিনি।
এ সিনেমার পরিচালক কুকি গুলাটি ও রবি গ্রেওয়াল। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাইফ আলী খান। চরিত্রের প্রতি যতটা সুবিচার করা যায় সাইফ সেটা হয়তো করেছেন, কিন্তু দুর্বল চিত্রনাট্যে এ সিনেমা হোঁচট খেয়েছে প্রতি পদে।
ডাকাতির সিনেমার প্রধান আকর্ষণ এর রোমাঞ্চকর গল্প আর দুর্দান্ত অ্যাকশন। তবে এ সিনেমায় যেন কোনো গল্পই নেই। রেহান চরিত্রে সাইফ আলী খানকে একটি দুর্ধর্ষ চোর হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু চরিত্রটি যখন সিনেমার পর্দায় এন্ট্রি নেয়, এ দৃশ্য দেখানো হয় খুব সাদামাটাভাবে। কোথাও সে দৃশ্য কোনো অর্থবোধকতা রাখে না। সাইফ আলী খান কেন কুখ্যাত, কেন তাকে পুলিশ খুঁজছে, তা–ও তুলে ধরা হয়নি।
গল্প এগিয়ে গেলে বোঝা যায় রাজন অর্থাৎ জয়দীপ আহলাওয়াতের সঙ্গে সাইফ খানের পূর্বপরিচয় ছিল। কিন্তু সেটি কখন কীভাবে হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হয় না। বাবার সঙ্গে সাইফের সম্পর্কে কেন ঘুণ ধরেছে, তা শুধু ফুটে উঠেছে দু-একটি সংলাপে। কিন্তু এখানে চাইলেই একটা ভালো গল্প দেখানো যেত।
কুনাল কাপুরকে একজন দুর্দান্ত পুলিশ অফিসার হিসেবে দেখানো হলেও তাঁর চরিত্রটি মাঠে মারা গেছে। এ রকম একটা প্রমিসিং চরিত্র বানানোর পরেও নির্মাতারা যেন কোনো কাজেই লাগাতে পারেননি সেটা।
তবে এই সিনেমার সবচেয়ে দুর্বল দিক সম্ভবত নায়িকা নিকিতা দত্তের সঙ্গে সাইফের রসায়ন। এখানে কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রেম কীভাবে হলো, তা নিয়ে দর্শকেরাও দ্বিধায় পড়ে যাবেন। শুধু তা–ই নয়, নিকিতা দত্তের কোনো অভিব্যক্তি ছাড়া অভিনয় বিরক্তি ধরানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।
তবে জিষ্ণু ভট্টাচার্যের সিনেমাটোগ্রাফি আর সাইফের অভিনয়ের জোরে এ সিনেমা শেষ পর্যন্ত দেখা যায়। রোমাঞ্চকর অ্যাকশনের দৃশ্যগুলোতে সাইফ আলী খান ভালো করেছেন। চিত্রনাট্যে অনেক দুর্বলতা থাকলেও রোমাঞ্চকর দৃশ্যের জন্য গল্প গতিশীল থাকে। তাই সিনেমা শুরু করলে শেষ পর্যন্ত দেখা হয়েই যায়। কিন্তু অভিনেতা যখন সাইফ, আশা অনেক বেশি থাকে বৈকি। সাইফ, এই সিনেমা আপনি কেন যে করতে গেলেন। ছবির প্রযোজক আবার ‘ওয়ার’, ‘পাঠান’ নির্মাতা সিদ্ধার্থ আনন্দ; তাঁর কাছ থেকেও এমন গড়পড়তা কাজ আশা করা যায় না। তবে ‘টপ চার্ট’–এ সিনেমা মানেই যে ভালো সিনেমা হয় না, ‘জুয়েল থিফ: দ্য হাইস্ট বিগিনস’ এর জ্বলন্ত প্রমাণ।