ফিল্ম অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ (ফ্যাব) আয়োজিত ‘ফ্যাব ফেস্ট’-এর আসর বসেছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। দিনব্যাপী এই আয়োজনে দেশের একমাত্র ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম কনটেন্টপ্রেমীদের জন্য দারুণ সুযোগ করে দিয়েছে। আকর্ষণীয় সব উপহারের পাশাপাশি ফ্যাব ফেস্ট উৎসবে যাঁরা পেইড নিবন্ধনকারী, তাঁরা পাচ্ছেন বিনা মূল্যে এক মাসের চরকি সাবস্ক্রিপশন। আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের জন্য ১ সপ্তাহের সাবস্ক্রিপশন ও টি-শার্ট। জানিয়েছে চরকি কর্তৃপক্ষ।
আজ শুক্রবার দিনব্যাপী আয়োজিত ফ্যাব ফেস্টের সহযোগী হিসেবে রয়েছে চরকি। বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে ঢুকতেই বর্ধমান হাউসের বিপরীতে রয়েছে চরকির প্যাভেলিয়ন। উৎসবে বর্ধমান হাউসের সামনের মঞ্চে চরকির পক্ষ থেকে তিনটি সেশনের আয়োজন করা হয়, এসব সেশনে আলোচনা করেন অনম বিশ্বাস, নুহাশ হুমায়ূন ও সুকর্ণ শাহেদ ধীমান। চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি একটি সেশনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
চরকি জানিয়েছে, অনেক গল্পকার ও পরিচালক চরকিতে গল্প জমা দিতে চান। তাঁদের বিষয়টিও খেয়াল রাখা হয়। ফ্যাব ফেস্ট উপলক্ষে চরকি আগ্রহীদের কনটেন্ট পিচ করার একটি সুযোগ করেছে দেয়। জমা পড়া কনটেন্টের মধ্যে থেকে বিচারকেরা ৫টি গল্প নির্বাচন করেন। সেই গল্পকার ও দলের নাম আজ ঘোষণা দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে এই ৫ গল্প থেকে একটা গল্প বা কনটেন্ট পৃষ্ঠপোষকতা করবে চরকি।
সিনেমা কিংবা দৃশ্যশিল্পের নীতিমালা ‘সংস্কার’, বাংলা কনটেন্টের সম্ভাবনার এ সময়কে ‘নতুন করে সংজ্ঞায়িত’ করার লক্ষ্যে ভাবনা বিনিময়ের জন্য প্রথমবারের মতো ফ্যাব ফেস্টের আয়োজন করেছে ফিল্ম অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ (ফ্যাব); যেটিকে ‘চিন্তা লেনদেনের উৎসব’ বলছেন আয়োজকেরা। আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাংলা একাডেমি মিলনায়তন ও প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে এই আয়োজন। চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী, দর্শক, গবেষকদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর এ আয়োজন দিনভর চলবে। সকাল থেকেই এই আয়োজনে প্রযোজক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, শিল্পী, লেখক, সিনেমাটোগ্রাফার কিংবা দৃশ্য-সংস্কৃতির অংশীজন, নীতিনির্ধারক ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর, চলচ্চিত্রকার মসিউদ্দিন শাকের ও মোরশেদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। উদ্বোধনী আয়োজনে গান পরিবেশন করেন আরমীন মুসা, তনুশ্রী দাস, রেজাউল করিম, ইউসুফ আলী খান, আহনাফ খান প্রমুখ।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বাংলাদেশি সিনেমাকে সীমানা ছাড়িয়ে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, কামার আহমাদ সাইমন, পিপলু আর খান ও ব্যারিস্টার মইন গনি। পর্বটি সঞ্চালনা করেন নূর সাফা জুলহাজ।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ‘গোয়িং ওয়াইল্ড, গোয়িং জেনর’ শীর্ষক আলোচনায় ছিলেন অভিনেতা ও প্রযোজক ইরেশ যাকের, নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী, নুহাশ হুমায়ূন ও মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম। পর্বটি সঞ্চালনা করেন নির্মাতা তানিম নূর ও চিত্রসমালোচক সাদিয়া খালিদ রীতি। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বাংলাদেশের প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে আলোচনা অংশ নেন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা মানজারে হাসীন মুরাদ, নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা হুমায়রা বিলকিস ও এলিজাবেথ ডি কস্তা। পর্বটি সঞ্চালনা করেন তারেক আহমেদ।
বেলা সোয়া দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত ‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’ সিনেমা নিয়ে আলোচনা করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র) মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্রযোজক ইশা ইউসুফ, পরিচালক রায়হান রাফি ও প্রযোজক শিমুল চন্দ্র বিশ্বাস। পর্বটি সঞ্চালনা করবেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। এরপর ‘স্টে লোকাল, গো গ্লোবাল: প্রডিউসারস পারসপেক্টিভ’ শীর্ষক আলোচনায় থাকার কথা রয়েছে নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত, পরিচালক-প্রযোজক আবু শাহেদ ইমন, নির্মাতা-প্রযোজক আরিফুর রহমান ও প্রযোজক আদনান ইমতিয়াজ আহমেদ। পর্বটি সঞ্চালনা করার কথা প্রযোজক সারা আফরীনের।
বিকেল সোয়া চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত ‘কনটেন্ট অ্যাজ কারেন্সি’ শীর্ষক আয়োজনে আলোচনা করার কথা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমান, স্টার সিনেপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব রহমান, চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি, টফির পরিচালক আবুল মুকিত আহমেদ, শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান ও পরিচালক আশফাক নিপুণের। পর্বটি সঞ্চালনা করার কথা প্রযোজক ও গ্রের কান্ট্রি হেড সৈয়দ গাউসুল আলম শাওনের। বিকেল সোয়া পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত নব্বইয়ের দশকের আলোচিত সিনেমা ‘ঘুড্ডি’ নিয়ে স্মৃতিচারণা করার কথা সিনেমার নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ ও অভিনেত্রী লায়লা আজাদ নূপুরের।
সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী হবে। এরপর সিনেমার নির্মাতা মোহাম্মদ কাইউম ও শিক্ষক মানস চৌধুরী প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেবেন নির্দেশক-অভিনেতা তারিক আনাম খান। কেন এই উৎসব—তা নিয়ে আয়োজকেরা জানান, সময় এসেছে সিনেমা-ওটিটি কিংবা সব দৃশ্যশিল্পের জন্য চিন্তা নবায়নের, সব ধরনের নীতি নবায়নের এবং বিশ্বব্যাপী বাংলা কনটেন্টের যে বাজার তৈরি হয়েছে, সেখানে অবস্থান নেওয়ার। যে কাজটি ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে নানা প্ল্যাটফর্মে, উৎসবে এ দেশের তরুণেরা শুরু করেছেন, সেটির পৃষ্ঠপোষকতা এখন জরুরি। গল্প বলার স্বাধীনতাকে মর্মে ধারণ করে এই উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে।