মালয়ালম ভাষার সিনেমা ‘অফিসার অন ডিউটি’ একটি পুলিশি ক্রাইম থ্রিলার। দেখতে বসে আপনি সাসপেন্স অনুভব করবেন এবং দক্ষিণি সিনেমার চিরন্তন ক্লাইম্যাক্স পাবেন। পাবেন না কেবল মুখে লেগে থাকার মতো স্বাদ। যে স্বাদ পাওয়া যায় ‘আই স দ্য ডেভিল’, ‘সেভেন’, ‘মেমোরিজ অব মার্ডার’ কিংবা ‘দৃশ্যম’ দেখে।
নাম উল্লেখ করা এসব সিনেমার বিভিন্ন অংশের মিশ্রণ বলা চলে ‘অফিসার অন ডিউটি’কে। গত ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটির ময়নাতদন্ত করলে পাওয়া যায় ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি (আই স দ্য ডেভিল ও মুম্বাই পুলিশ), পুলিশের নৈতিক দ্বন্দ্ব (মেমোরিজ অব মার্ডার), মানসিক চাপ বা ট্রমা (সেভেন) এবং তদন্তের মাধ্যমে সত্য উন্মোচনের চেষ্টা (জোডিয়াক)।
চিরায়ত এসব অনুষঙ্গের মিশ্রণে ‘অফিসার অন ডিউটি’ শুরু হয় অনেকটা কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ পাওয়ার মতো করে। কেন্দ্রীয় চরিত্র হরি বা হরিশঙ্কর পুলিশের সাবেক ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট।
যিনি উচ্চপদস্থ আইপিএস অফিসারের ওপর হামলার জন্য পদচ্যুত হয়ে স্টেশন হাউস অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।
গল্পের শুরু হয় চিরকুট লিখে এক পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে। পরের দৃশ্যে কক্ষটিতে দেখা যায়, কয়েক তরুণ-তরুণীকে। এ ঘটনার আট মাস পর একটি নকল সোনার চেইন বিক্রি মামলার তদন্তের দায়িত্ব বর্তায় হরির কাঁধে। তদন্তের গভীরে যাওয়ার পথে হরিশঙ্করের সামনে আসে মাদক পাচার, যৌন অপরাধ এবং ব্ল্যাকমেলের ঘটনা।
মালয়ালম সিনেমার সৌন্দর্য হলো, নির্মাতারা সব থ্রিলারকে ব্যক্তিগত আবেগ, সমাজ বাস্তবতা ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ দিয়ে বাস্তবঘন ও প্রাণবন্ত করে তোলেন।
অফিসার অন ডিউটিতেও নিজের মেয়ের আত্মহত্যা, সেটির রেশ হিসেবে ব্যক্তিগত অপরাধবোধ ফুটে ওঠে হরির চরিত্রে। এসব দেখাতে গিয়ে গল্পে ধীরগতি এলেও একপর্যায়ে সব ঘটনা এক বিন্দুতে মিলিয়ে লেখক শাহী কবীর ও পরিচালক জিতু আশরাফ মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।
যেমন নকল সোনার গয়না মামলার তদন্তের একপর্যায়ে সামনে আসে একটি যাত্রীবাহী বাসে জনসাধারণের হাতে মাদকসহ তিন তরুণ-তরুণীর ধরা পড়ার ঘটনা। বলা চলে এ ঘটনাটিই সিনেমার গল্পের নিউক্লিয়াস। যেটির জেরে একে একে পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যা ও একটি পরিবারের নকল সোনার গয়না বিক্রির ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনা জোড়া দিতে গিয়ে পরিচালক ব্যবহার করেছেন বহুল প্রচলিত ‘বাটারফ্লাই ইফেক্ট’। এ তত্ত্বের মূলকথা হলো, একটি খুব ছোট পরিবর্তন বা ঘটনা, যা প্রথমে তুচ্ছ মনে হতে পারে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা অনেক বড় এবং অপ্রত্যাশিত ফলাফলের কারণ হতে পারে। সিনেমায় দেখা যায়, যাত্রীবাহী বাসে মাদকসহ তরুণ-তরুণীদের ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাই একে একে পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যা, সোনার গয়না চুরির মতো ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার জন্ম দেয়। আর সেগুলোর তদন্ত করতে গিয়েই মাদকের জগতের সন্ধান পান পুলিশ কর্মকর্তা হরি।
সিনেমায় হরি চরিত্রে অভিনয় করেছেন কুঞ্চাকো বোবান। আরও আছেন বিশাক নায়ার ও প্রিয়ামণি। গল্পের কারণে প্রিয়ামণির উপস্থিতি বেশ কম। তবে মাদক কারবারির চরিত্রে লিয়া মামেন ও ঐশ্বরিয়া রাজের অভিনয় চোখে পড়ার মতো।