আইয়ুব বাচ্চুর দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস আজ
আইয়ুব বাচ্চুর দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস আজ

চালু হচ্ছে আইয়ুব বাচ্চুর গানের আর্কাইভ

রুপালি গিটার ফেলে চলে যাওয়ার দ্বিতীয় বছর পূর্ণ হলো। আজ ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর প্রয়াণ দিবস। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। মহামারিকাল না হলে হয়তো অন্যভাবে স্মরণ করা হতো বাংলার এই গিটারের জাদুকরকে। হয়তো স্মরণসভা হতো, নয়তো কোনো অনুজের কণ্ঠে মুক্তমঞ্চে বেজে উঠত তাঁর গান। এ বছর হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করাই হবে না তাঁকে। এ দুই বছর কেমন ছিল তাঁর পরিবার, গানের দল এলআরবি, ৪৮টি গিটার, গানের বিরাট ডালা আর অগুনতি বন্ধু–স্বজন–অনুরাগী?

আইয়ুব বাচ্চু

মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব, ছেলে আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব দুজনেই থাকেন বিদেশে। একজন অস্ট্রেলিয়া, অন্যজন কানাডায়। আর তাঁদের মা ঢাকায়। বাবার বিদেহী আত্মার প্রশান্তির জন্য দূর থেকে কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন দুই সন্তান। সেসব নিয়ে তেমন উচ্চকিত ছিলেন না তাঁরা, যেটি বাবার কাছ থেকেই শিখেছেন দুই ভাইবোন। বাবা যে জায়গাগুলোতে সহযোগিতা দিয়ে আসছিলেন, সে রকম বেশ কিছু জায়গায় আর্থিক সহযোগিতা পাঠিয়েছেন তাঁরা। বাবা স্মরণে ফেসবুকে সেসব জানিয়ে দেশবাসী ও অনুরাগীদের কাছে তাঁর পারলৌকিক শান্তির জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

আইয়ুব বাচ্চু

আইয়ুব বাচ্চু মারা যাওয়ার কিছুদিন পরই এলআরবিতে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সদস্যরা হয়েছেন বিচ্ছিন্ন, হতাশ। গত ডিসেম্বর মাসে দলের নতুন লাইন আপ ঘোষণা করেছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গিটারিস্ট সাইদুল হাসান স্বপন। ব্যান্ড লিডার ও বেজে ছিলেন তিনি, গিটারে পুষ্প ফেরদৌস, ড্রামসে অমিত। বাদ পড়েছিলেন ড্রামার রোমেল, নতুন ভোকাল হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ওয়ারফেজ দলের সাবেক ভোকাল মিজান। এরপর আর কোনো খবর নেই দলটির। এর আগে বালামকে ভোকাল করে নতুন লাইনআপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না–যেতেই শুরু হয়েছিল নতুন দ্বন্দ্ব।

জীবনের শেষ প্রান্তে আক্ষেপ করে সংগৃহীত গিটারগুলো বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। ইচ্ছে ছিল, গিটারগুলো নিয়ে নবীন গিটারিস্টদের সঙ্গে দেশব্যাপী একটি গিটার প্রতিযোগিতার আয়োজন করবেন। প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা জিতে নেবে সেসব গিটার। পৃষ্ঠপোষকতা না পেয়ে সেটি আর করা হয়নি তাঁর। গিটারের রক্ষণাবেক্ষণ কষ্টকর বলে কিছু গিটার আগ্রহীদের কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন বাচ্চু। সেগুলো, ৪৮টি গিটার এখনো পড়ে আছে ঘরবন্দী।

গানে গানে শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। ছবি: জাহিদুল করিম

ইতিবাচক খবর হচ্ছে, আইয়ুব বাচ্চুর ২৭২টি গান সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলোর ডিজিটাল আর্কাইভ। তৈরি হয়েছে ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেল। সেখানে থাকবে কিংবদন্তিতুল্য এই শিল্পীর কনসার্ট ও দুর্লভ সব মুহূর্তের ভিডিও। গতকাল শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কপিরাইট রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শিল্পীর ২৭২ গানের বেশ কয়েকটির গীতিকার হয়তো অন্য কেউ। তাঁরা হয়তো আইয়ুব বাচ্চুকে সেগুলো স্বত্ব ত্যাগ করেই দিয়েছেন। সে হিসেবেই আমরা প্রথমে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করি। এরপর তাঁর প্রোফাইল, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কনসার্ট, উল্লেখযোগ্য ঘটনা সেই ওয়েবসাইটে আপলোড করি। তাঁর গান ইউটিউবে ফ্রি শোনা যাবে, তবে স্ট্রিমিং করতে চাইলে মূল্য দিতে হবে। অ্যালবাম কিনতে হলে লাগবে ৯ দশমিক ৯ মার্কিন ডলার। এ অর্থ পাবেন আইয়ুব বাচ্চুর উত্তরাধিকার দুই সন্তান।’ আজ রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস থেকে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের এবি কিচেন নামে ওয়েবসাইটটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে।