Thank you for trying Sticky AMP!!

কানিজ সুবর্ণা, তিশমা ও মিলা এখন কোথায়

কানিজ সুবর্ণা, তিশমা ও মিলা এখন কোথায়

এক দশক আগেও নতুন গান আর স্টেজ শোতে ব্যস্ত সময় কাটত কানিজ সুবর্ণা, মিলা ও তিশমাদের। তিন শিল্পী হঠাৎ যেন আড়াল হয়ে গেলেন। সংগীতসংশ্লিষ্ট কোনো আড্ডায় আগের মতো দেখা মেলে না তাঁদের। কাজের ব্যস্ততাও চোখে পড়ে না। মাঝেমধ্যে নতুন গানের খবরে এলেও তা একেবারেই উল্লেখ করার মতো নয়। গানের এই তিন কন্যা কোথায় আছেন, তা নিয়েই এ প্রতিবেদন।

Also Read: কেমন আছেন তিশমা

ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর সুর ও সংগীত পরিচালনায় ‘ভালোবাসা মানে’ অ্যালবাম দিয়ে পেশাদার সংগীতে পথচলা শুরু কানিজ সুবর্ণার। নিজেকে সে জন্য বেশ সৌভাগ্যের অধিকারী মনে করতেন তিনি। পরবর্তী সময়ে বাপ্পা মজুমদার, ফুয়াদসহ আরও অনেকের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে তাঁর। চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন। শেখার শুরুটা ক্লাসিক্যাল ও নজরুলগীতি দিয়ে হলেও নিজের পছন্দেই বেছে নেন পপ-রক ধাঁচের গান। দীর্ঘ বিরতি ভেঙে বছরখানেক আগে নতুন দুটি গানে কণ্ঠ দিলেও ‘মায়া’ শিরোনামের গানটি প্রকাশিত হয়েছে। ‘ভালোবাসা জানি’ গানটি প্রকাশের অপেক্ষায়। দুটি গানেরই সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন তানভীর তারেক।

কানিজ সুবর্ণা

গত এক যুগে এর বাইরে আরেকটি গানের খবরে কানিজকে পাওয়া যায়। ২০০৮ সালে ব্যান্ড তারকা হামিন আহমেদকে বিয়ে করার পর সংসারে থিতু হন। এরপর তাঁর কণ্ঠে গান শোনা গেছে খুব কমই। বছর দুয়েক পর মা হন। দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর এখন যত ব্যস্ততা।

কানিজ সুবর্ণার দুই সন্তান অটিজম স্পেকট্রাম। একজনের বয়স ১২ বছর, আরেকজনের ১৩। বললেন, ‘ওরা দুজন কথা বলতে পারে না। ইন্টেলেকচুয়ালি ডিজঅ্যাবল। ওদের অনেক সময় দিতে হয়। হয়তো আম্মুর কাছে রেখে কাজে যেতে পারতাম, কিন্তু আমি সেটা চাইনি। সন্তানদের নিয়েই থাকতে চেয়েছি।’

Also Read: বিয়ের তথ্য গোপনের মামলায় জামিন পেলেন সংগীতশিল্পী মিলা

নিজের ক্যারিয়ারের হঠাৎ থমকে যাওয়া নিয়ে কানিজ সুবর্ণা আরও বলেন, ‘সন্তানদের এমন অবস্থার কারণে শুরুর দিকে আসলে ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম। বাচ্চারা স্বাভাবিক থাকলে হয়তো অন্য রকম হতো। এটা নিয়ে সন্তানদের বাবারও তো একটা মানসিক কষ্ট হতো। তবে এটা ঠিক, আমি কতটুকু ম্যানেজ করে কতটা কী করতে পারি, সেটাও একটা বিষয়। আমি হয়তো ম্যানেজ করতে পারিনি। হয়তো ম্যানেজ করতে চাইওনি।’
দীর্ঘ বিরতির পর নতুন দুটি গানের খবরে আসার পরপরই ‘সুবর্ণভূমি’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার কথাও শোনা যায়। শুটিংও করেছিলেন। কিন্তু কাজটি এখনো শেষ হয়নি। ওজন কমাতে হবে। ফিটনেস ফিরে পেলে তবেই চলচ্চিত্রের অভিনয় শেষ হবে। কানিজ বললেন, ‘দুই ছেলের যাবতীয় কাজ শেষ করার পর জিমে যাই। তবে নিয়মিত পারি না। এখন সন্তানদের সময় দিয়ে কাটছে।’

তিশমা
একটা সময় দেশে ও দেশের বাইরে মঞ্চে গানে গানে ব্যস্ত সময় কাটত তিশমার। রেডিও-টেলিভিশন চ্যানেলেও শোনা যেত তাঁর নিত্যনতুন গান। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নেই দেশের মঞ্চে। নতুন গান প্রকাশেও আগের মতো সেই ব্যস্ততা নেই। খ্রিষ্টীয় নতুন বছরে একটা করে অ্যালবাম প্রকাশ করেন। কয়েক বছর ধরে এই ধারাবাহিকতা চলছে। গত বছরের শেষ দিনে প্রকাশ করেন কোবরা অ্যালবাম। তাঁর ১৯ নম্বর এই অ্যালবামের গানের সংখ্যা ১২। সব কটি গান লিখেছেন, সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন শিল্পী নিজেই। তিশমা বলেন, ‘আমি সব সময় গান নিয়ে নিরীক্ষা করি। নতুন অ্যালবামও তা–ই। এখানে রক, অ্যাকুস্টিক, অলটারনেটিভ, এক্সপেরিমেন্টাল ও ক্ল্যাসিক্যাল—সব ঘরানার গান থাকছে।’ গানগুলো নিজের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে শোনা যাবে।

তিশমা

ঢাকার দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন। একটিতে স্নাতক করেছেন, অন্যটি চলছে। দুটি বিষয়ের ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশনের চাপে গানে অনিয়মিত হতে বাধ্য হন। তিশমা জানালেন, ‘সত্যিই বড় রকমের গ্যাপ হয়ে গেছে।’ তবে পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত কিছু কারণও ছিল, তাই স্টেজ শো আর নতুন গান প্রকাশে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। কী সেই ব্যক্তিগত কারণ, তা জানাতে চান না একসময়ের জনপ্রিয় এই গায়িকা।

২০০৩ সালে তিশমার প্রথম একক গানের অ্যালবাম ‘তারা’ প্রকাশিত হয়। হিটও হয়। তিশমা পরিচিতি পান। টানা আট বছর অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে গান প্রকাশের পর ২০১১ সালে সিদ্ধান্ত নেন, ওয়েবসাইটে গান প্রকাশ করবেন। এক্সপেরিমেন্ট নামে প্রথম অ্যালবাম অনলাইনে প্রকাশ করেন। তিশমা জানালেন, ‘এখন সবাই ডিজিটালি গান প্রকাশ করছে। অথচ আমি যখন অনলাইনে গান প্রকাশ করেছিলাম, তখন সবাই হাসাহাসিও করছিল। এখন সবার গান প্রকাশের ধরন দেখে আমার অবশ্য ভালোই লাগে।’

মিলা
গান নিয়ে ফিরলেন মিলা। নির্বাচনী এই গানের শিরোনাম ‘গো ভোট’। তরুণ প্রজন্মকে ভোট প্রদানে উদ্বুদ্ধ করতেই গানটি করা হয়েছে। অটামনাল মুনের কথা ও সুরে এ গানের সংগীতায়োজন করেছেন আদিব কবির। ভিডিও আকারে গানটি প্রকাশিত হয়েছে ‘ক্যাম্পেইন অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রাম (ক্যাপ)’-এর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে। তাঁর নতুন গানের খবরে ভক্তদের অনেকেই চমকে গেছেন। অনেকেরই জিজ্ঞাসা, ‘এত দিন কোথায় ছিলেন?’

মিলা

মিলার ব্যক্তিজীবনের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। এই ঝড় তাঁর সংগীতজীবনকে টালমাটাল করে দিয়েছিল। অনেক দিন কোথাও দেখা যায়নি তাঁকে। দুঃখ, কষ্ট আর অভিমানে একেবারে নিজের মতো করে কাটিয়ে দিয়েছেন অনেকটা দিন। কারও সঙ্গে দেখা পর্যন্ত হতো না তাঁর। ভক্ত-শ্রোতাদের টান অনুভব করে চার বছর আগে মিলা আবার ফেরেন গানের জগতে। সবকিছু ঝেড়েমুছে আবার সরব হন। এ যেন ছিল তাঁর দাপুটে ফেরা। একসঙ্গে দেশের আনাচকানাচে অনেকগুলো স্টেজ শোতে নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন। তবে এরপরই আবার তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। গায়িকা বললেন, এবার তাঁর ফেরা হবে ফেরার মতোই। এখন সময়টা বেশ উপভোগ করছেন।

এক যুগ আগে গানের জগতে মিলার অভিষেক ঘটে। প্রথম অ্যালবামেই বাজিমাত করেন। ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সুর ও সংগীতের সেই অ্যালবামের কয়েকটি গান শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। এর ঠিক দুই বছর পর ‘চ্যাপটার টু’ অ্যালবাম দিয়ে আরও এগিয়ে যান। এই অ্যালবামেরও কয়েকটি গান শ্রোতারা সহজে লুফে নেন।

‘যাত্রাবালা’ বা ‘বাবুরাম সাপুড়ে’ গান দুটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গান করার অনুরোধ পেতে থাকেন। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। অডিও, চলচ্চিত্রের গান ও স্টেজ শোতে বেশ দাপটের সঙ্গে কাজ করতে থাকেন তিনি। ২০১৭ সালে বিয়ের পর তাঁর গতিময় সংগীতজীবনে ছন্দপতন ঘটে। বিয়ের কয়েক মাস আগে থেকে মিলা গানে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। বিয়ে ও বিচ্ছেদ নিয়ে জীবনে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি। এ নিয়ে গণমাধ্যমের ওপরও ছিল তাঁর ক্ষোভ।

ক্যারিয়ার নিয়ে আক্ষেপ করে মিলা সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার মৃতপ্রায় অবস্থা দেখে সবাই খুব খুশি হয়েছিল। জীবনের কষ্টের সময়টাতে আমার আশপাশে কেউই ছিল না। বিরোধীপক্ষ আমার নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল। আমার কষ্টের অবস্থা দেখে কাছের মানুষ তো চোখে সানগ্লাস পরে পাশ কেটে চলে গিয়েছিল। ভুলিনি কিছুই। এসব যন্ত্রণা নিয়েই আমি আবার গানে ফিরেছি।’