Thank you for trying Sticky AMP!!

খুন না আত্মহত্যা, কী বলছে পল্লবীর ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন

পল্লবী দে

পশ্চিমবঙ্গের ছোট পর্দার অভিনেত্রী পল্লবী দের অপমৃত্যু নিয়ে এখনো জল্পনা চলছে। প্রথম থেকে তাঁর প্রেমিক বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও পল্লবীর বাবা নীলু দের অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রেমিকের সঙ্গে পল্লবীর সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং গতকাল রোববারের ঘটনাক্রম দেখে খুন সম্পর্কে তিনি ৯০ শতাংশ নিশ্চিত; যদিও খুনের বিষয়টি মানতে নারাজ পল্লবীর প্রেমিক। গতকাল পল্লবীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন ইতিমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে।
গতকাল সকালে কলকাতা শহরের গড়ফার ফ্ল্যাট থেকে পল্লবীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। বিছানার চাদর দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে বলছে, প্রেমিক সাগ্নিক চক্রবর্তী দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পল্লবীর মরদেহ দেখতে পান। এরপর তিনিই পুলিশে খবর দেন। গড়ফা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পল্লবীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। মেয়ে এভাবে আত্মহত্যা করতে পারেন, তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না বাবা নীলু দে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর দেওয়া বক্তব্যে এ তথ্য পাওয়া যায়। পল্লবীর বাবার ভাষায়, ‘মেয়ের হুট করে মাথা গরম হওয়ার প্রবণতা ছিল। কিন্তু নিজেকে মেরে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত সে নেবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ও কেন আত্মহত্যা করবে? নিজে আয় করছে। ভালো ভালো কাজ করছে। পরপর সিরিয়াল আসছে। ওর তো আত্মহত্যা করার কোনো কারণ নেই।’

সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পল্লবীর বাবা বারবার মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথাই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘দুজনের মধ্যে প্রায়ই কথা-কাটাকাটি হতো শুনেছি। শুনেছিলাম, অন্য সম্পর্কে জড়িয়েছিল ছেলেটা। এ নিয়ে ওদের মধ্যে অশান্তিও হতো। তবে এ বিষয়ে বেশি কিছু জানি না আমরা।’

পল্লবীর বন্ধু সায়ক চক্রবর্তীও এ নিয়ে মন্তব্য করেন আনন্দবাজার পত্রিকার কাছে। তিনি বলেন, ‘মাসখানেক আগের একটি ঝামেলার কথা পল্লবীর মুখ থেকেই জেনেছিলাম। পল্লবী বলেছিল, ওদের মধ্যে কথা বন্ধ। আমি বলেছিলাম, হয় মিটিয়ে নে, নয়তো সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আয়। পরে ওদের দেখে মনে হয়েছিল, সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে। ইনস্টাগ্রামে ছবিও দিয়েছিল ওরা।’

পল্লবী দে

সাগ্নিক চক্রবর্তী একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। ঘটনার পরই তাঁকে গড়ফা থানায় ডেকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি থানাতেই ছিলেন বলে খবর পুলিশ সূত্রে। জেরায় সাগ্নিক স্বীকার করেছেন, গত শনিবার রাতে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। গতকাল সকালেও ঝগড়া হয়েছিল। এরপর কিছুক্ষণের জন্য বাইরে ধূমপান করতে গিয়েছিলেন তিনি। ফিরে দেখেন দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তিনি পল্লবীর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান।
পল্লবীর ময়নাতদন্ত হয় কাঁটাপুকুর পুলিশ মর্গে। সেখানকার চিকিৎসকদের সূত্র দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত, অভিনেত্রী আত্মহত্যাই করেছেন; যদিও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত এখনো এ বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ তদন্তকারীরা।

পল্লবীর টেলিভিশনযাত্রা খুব বেশি দিনের নয়। অল্প সময়েই ছোট পর্দায় পরিচিতি পেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। কালারস বাংলার ‘রেশমঝাঁপি’ ধারাবাহিকে প্রথম নজর কাড়েন তিনি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘আমি সিরাজের বেগম’ ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছিলেন মূল চরিত্রে। বিপরীতে ছিলেন শন বন্দ্যোপাধ্যায়।

পল্লবী দে

সেই সময় প্রশংসিত হয়েছিল তাঁর অভিনয়। গড়ফায় দেহ উদ্ধার হলেও ফেসবুকে দেওয়া পল্লবীর অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুযায়ী তিনি হাওড়ার বাসিন্দা। সাঁতরাগাছি ভানুমতী গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন চাকরিও করেন। এরপর কলকাতার সব বিনোদন টিভি চ্যানেলেই কাজ করেছেন বলে উল্লেখ আছে ফেসবুকে। বর্তমানে ‘মন মানে না’ নামে একটি ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। ধারাবাহিকটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।

পল্লবী দে