পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরের এই বাড়িতে শৈশব কেটেছে সৌমিত্রর
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরের এই বাড়িতে শৈশব কেটেছে সৌমিত্রর

সৌমিত্রের পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণের দাবি

প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কৃষ্ণনগরের পৈতৃক বসতবাড়িকে হেরিটেজ স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন এলাকার মানুষজন। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরের সোনাপট্টি এলাকার বি কে চ্যাটার্জি লেনে এই দ্বিতল বাড়িতে শৈশব কেটেছে সৌমিত্রর। জীবনের প্রথম ১০ বছর এখানে কাটিয়েছেন তিনি।
সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেছেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অনেক বছর আগে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। ১২ বছর আগে তাঁর পরিবারের লোকজন বাড়িটি বিক্রি করার প্রস্তাব দিলে পার্টি বাড়িটি কিনে নেয়। তাতে সম্মতি ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়েরও। সেই থেকে বাড়িটি সিপিআইএমের দপ্তর হিসেবে চলে আসছে। সেদিন অবশ্য বাড়িটি সিপিআইএম পার্টির কাছে বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাবে সম্মতি ছিল অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের।

কথা প্রসঙ্গে সিপিআইএম নেতা সুমিত দে আরও বলেছেন, এখন এই বাড়ির বহু অংশ ভেঙে পড়েছে। পেছনের দিক বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাড়িটিরও জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। এই বাড়ির নাম ছিল সুধা-নিলয়। সৌমিত্রর ঠাকুরমার নামে।

সৌমিত্রর প্রয়াণের পর স্থানীয় লোকজন পর দাবি তুলেছেন, সৌমিত্রর স্মৃতিকে স্মরণে রাখার জন্য বাড়িটি সংরক্ষণ করা উচিত। তাঁদের মতে সৌমিত্র একজন কিংবদন্তি, কৃষ্ণনগরের গর্ব।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (১৯ জানুয়ারি ১৯৩৫–১৫ নভেম্বর ২০২০)

তাঁর বাড়ি এখন সংরক্ষণ করলে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বেঁচে থাকবেন এই কৃষ্ণনগরের মানুষের হৃদয়ে। যদিও সৌমিত্রর মৃত্যুর পর এই বাড়িতে সিপিআইএম লাগিয়েছে সৌমিত্রকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পোস্টার-ব্যানার। তাতে লেখা হয়েছে, ‘তুমি রবে নীরবে, প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়; তিনি বেঁচে থাকবেন মানুষের লড়াইয়ে—সিপিআইএম, কৃষ্ণনগর।’ সিপিআইএম নেতা সুমিত দে এ কথাও বলেছেন, ‘আমরাও চিন্তা করছি ওনার বাড়ি যাতে সংরক্ষণ করা যায়। এ ধরনের চিন্তাভাবনা আমাদের দলেরও রয়েছে।’

কলকাতার গলফগ্রীনের বাড়ি।

প্রসঙ্গত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই বাড়িতে ১০ বছর কাটানোর সময়ে নাটকে হাতেখড়ি। এরপর তিনি চলে যান হাওড়ায়। তারপর দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর অঞ্চলের একটি ভাড়া বাড়িতে।

সৌমিত্রর বাসভবনের সামনে ভক্তদের ভিড়

এই ভাড়া বাড়িতেই একসময় থাকতেন প্রখ্যাত অভিনেতা সত্যজিৎ রায়। তিনিই এই ভাড়া বাড়ি ছাড়ার সময় সৌমিত্রকে বাড়ির মালিকের মাধ্যমে ভাড়াটে হিসেবে রেখে যান। এরপর এই ভাড়াটে বাড়িতে থেকে তিনি গলফ গ্রিনে নিজের বাড়ি করে চলে যান সেখানে।

চরিত্রে সৌমিত্র

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বহুদিন আগেই এই কৃষ্ণনগর এলাকা ছেড়ে স্থায়ী হিসেবে বসবাস শুরু করেন প্রথমে হাওড়ায়, তারপর কলকাতায়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি থেকেছেন তাঁর দক্ষিণ কলকাতার গলফ গ্রিনের বাড়িতে। এই বাড়িতে থাকাকালীন তিনি প্রয়াত হন কলকাতার বেলভিউ নার্সিং হোমে গত রোববার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে একটানা ৪১ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়