Thank you for trying Sticky AMP!!

অনেক জনপ্রিয় তারকাই সাহায্যে এগিয়ে আসেননি

আহসান হাবিব নাসিম। ছবি: সংগৃহীত
>শুটিং বন্ধ করে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন এই অভিনেতা। শুটিং না থাকলেও সাংগঠনিকভাবে ব্যস্ততায় ঘরের মধ্যেই দিন কাটছে। সাংগঠনিক এবং সংকট-পরবর্তী পরিস্থিতির পরিকল্পনা নিয়ে কথা বললেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম

করোনা নিয়ে কতটা সতর্কে আছেন? 

খুবই সতর্ক আছি। বাসা থেকে সবার বের হওয়া বন্ধ। বাসায় অনেক নির্দেশনা এবং দূরত্ব মেনে চলছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সজাগ আছি। খাওয়ার ব্যাপারেও পরিবারের সবাই সতর্ক। ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি খাচ্ছি। এই মুহূর্তে মানুষের সংস্পর্শে যাচ্ছি না।

করোনায় সময় কীভাবে কাটছে?
বেশির ভাগ সময় সাংগঠনিক কাজ করেই সময় কেটে যাচ্ছে। আমরা একটি ফান্ডরাইজ করেছি। সেখান থেকে সবাইকে আমাদের স্বল্প আয়ের মানুষদের সহায়তা করা হচ্ছে, আরও করব। সেগুলো নিয়েই সব সময় সবার সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে হচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছি।

অভিনয় শিল্পী সংঘ কীভাবে সহায়তা করবে?
অপেক্ষাকৃত যাঁরা স্বল্প আয়ের শিল্পী এবং কলাকুশলী আছেন, তাঁরাই মূলত সহায়তা পাবেন। নিয়মিত কাজ না করলে টিকে থাকাটা কষ্টকর, দৈনিক মজুরিভিত্তিক আয় করেন যাঁরা, পাশাপাশি ৫ থেকে ১০ দিনের আয় দিয়ে পরিবার চালান কিন্তু শুটিং বন্ধ হয়ে আর্থিক সংকটে আছেন, এমন শিল্পী ও কলাকুশলীদের সাহায্য করব। আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে পাঁচ হাজার মানুষ কাজ করেন, যাঁদের বেশির ভাগ মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না। এই করোনা পরিস্থিতিতে আমরা মনে করেছি তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়াই সংগঠনের কাজ। এ জন্য আমরা অনুরোধ করেছিলাম এই সহায়তায় জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে। আমাদের আহ্বানে অনেকেই সাড়া দিয়েছেন, আবার অনেক জনপ্রিয় তারকাই সাহায্যে এগিয়ে আসেননি।

আহসান হাবিব নাসিম। ছবি: সংগৃহীত

সাড়া না পাওয়ার পেছনে আপনাদের কোনো ব্যর্থতা আছে কি? 
না, আমাদের কোনো ব্যর্থতা নেই। আমরা সংগঠন থেকে মুঠোফোনে কথা বলে, খুদে বার্তা এবং নোটিশ দিয়ে আহ্বান করেছি সবাইকে সাহায্যে এগিয়ে আসতে। আমাদের কর্মপরিকল্পনা সবাই জানেন। আমরা নিশ্চিত, সবার কান পর্যন্ত ফান্ড গঠনের বিষয়টি পৌঁছেছে। তা ছাড়া এটা যদি কেউ না বুঝে থাকেন সে ক্ষেত্রে তাঁর দায়িত্ব কারও কাছে থেকে বুঝে নেওয়ার। কেউ সাড়া না দেওয়াটা আসলে তাঁদের বোধের ব্যাপার। আমাদের বোঝা উচিত, কর্মক্ষেত্রের আশপাশে যে মানুষগুলো সার্বক্ষণিক সাপোর্ট দেন, তাঁদের জন্যই আজ একজন শিল্পী তারকা হয়ে উঠতে পারেন। শুটিংয়ের পরিবেশ তৈরিতে তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম জড়িত। এঁরা স্বল্প আয়ের মানুষ। এঁদের জন্য কিছুটা সহায়তা কেউ যদি না করেন, তাহলে আমাদের জোর করার কিছু নেই। এই ব্যাপারে সংগঠন কিছু করতে পারে না। সংগঠন একটা প্ল্যাটফর্ম মাত্র।

আপনারা যে ১০০ তারকার তালিকা তৈরি করেছেন, সেখানে কতটা সফল?
হ্যাঁ, আমরা একটি তালিকা করেছিলাম। ভেবেছিলাম সবাই যাঁর যাঁর জায়গা থেকে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসবেন। যাঁর যেটুকু সামর্থ্য আছে, তা দিয়েই সাহায্য করবেন। সবাই অল্প করে সহায়তা করলেও আমাদের ভালো একটি তহবিল হতে পারত। কিন্তু তালিকায় থাকা অনেকেই এগিয়ে আসছেন না। এখানে আমরা একটা হোঁচট খেয়েছি। যাঁরা মিডিয়া থেকে অনেক বেশি অর্জন করেন, তাঁদের মধ্যে থেকে খুব বেশি সাড়া পাইনি।

আহসান হাবিব নাসিম। ছবি: সংগৃহীত

মিডিয়া থেকে অনেক বেশি অর্জন করেন কারা?

যাঁদের ওপর ইন্ডাস্ট্রি নির্ভর করে, যাঁদের ঘিরে নাটকের জগৎ ব্যস্ত এবং যাঁদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি শুটিং হচ্ছে। ঈদে ৬০০/৭০০ নাটকের বেশির ভাগ নাটকে যেসব তারকা অভিনয় করেন, এঁদের অনেকের পেছনেই লগ্নিকারী, নির্মাতারা শিডিউলের জন্য ঘোরাঘুরি করেন, যাঁরা বেশির ভাগ সময় শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। এই সময়ে প্রতিদিন যদি এক থেকে দেড় কোটি লগ্নি হয়, তাঁর সিংহভাগ যাচ্ছে ওই সব তারকার কাছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। তাঁদের এক দিনের আয়ের এক-চতুর্থাংশও যদি সবাই তহবিলে দান করতেন, তাহলে স্বল্প আয়ের মানুষদের নিয়ে যে নিউজ হচ্ছে, ‘তাঁরা রুটি-কলা খেয়ে থাকছেন’, এটি হতো না। তাঁদের এই দুরবস্থা হতো না। আজ আমরা যাঁরা ভালো আছি, তাঁদের চিন্তা করা দরকার ছিল। কারণ এটাই মানবিকতা, এটাই সভ্যতা এবং শিল্পীর মানবিক গুণাবলি। একজন শিল্পী অবশ্যই অন্য মানুষ থেকে আলাদা হবেন এই মানবিক গুণাবলির কারণে। কারণ তাঁর মধ্যে সৃজনশীলতা থাকে, তাঁর মধ্যে কল্পনাশক্তি থাকে, তাঁর মধ্যে মানবিক গুণাবলি থাকে। যে মানুষের মধ্যে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারেন, তিনিই হয়ে ওঠেন প্রকৃত শিল্পী।

শুটিংয়ের ফাঁকে সহশিল্পীদের সঙ্গে আহসান হাবিব নাসিম। ছবি: সংগৃহীত

এই সংকট-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছেন?

আমরা আশা করছি সবাই যদি সতর্ক থাকি, তাহলে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব। এই অবস্থা স্বাভাবিক না হলে আমরা পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে পারছি না। তবে এই সংকটে আমাদের নাট্যাঙ্গনের অস্বাভাবিক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমরা যতটুকু পারি অসচ্ছল শিল্পী-কলাকুশলীদের সহায়তা করব।

ভক্তদের উদ্দেশে যদি কিছু বলেন...
সবাইকে বলব, এই মুহূর্তে নিজে সতর্কে থাকুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে চলুন। সবার প্রয়োজনে নিজেকে কয়টা দিন ঘরে বন্দী রাখুন। আমরা সচেতন হলে খুব তাড়াতাড়ি সুসময় ফিরে আসবে, ইনশা আল্লাহ।