Thank you for trying Sticky AMP!!

গ্রিন কার্ড পাওয়াটাই আমার 'কুফা' হয়েছিল

মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী। ছবি: সংগৃহীত

‘আমার জন্য লাইফে সবচেয়ে বড় কুফা বা অপবাদের মতো হয়েছিল ২০০২ সালে গ্রিন কার্ড পাওয়াটা। এটাই আমার অভিনয়জীনের জন্য কাল হয়ে দাঁডিয়েছিল। শুনেছি গৌতম ঘোষ আমাকে “মনের মানুষ” ছবির জন্য কতবার যে খুঁজেছিলেন, পাননি। তখন নাকি আমি দেশে ছিলাম না। আমারও তাই কাজটি করা হয়নি।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন চাঁদনী।


২০০২ সালে গ্রিন কার্ড পেলেও চলচ্চিত্রে অভিনয়ে তাঁর স্বীকৃতি আসে আগের বছরই। ‘লালসালু’ ছবিতে জমিলা চরিত্রের জন্য তাঁকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেবার পার্শ্বচরিত্রের সেরা অভিনয়শিল্পীর স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপরও অভিনয়ে অনিয়মিত হওয়া প্রসঙ্গে চাঁদনী বললেন, ‘গ্রিন কার্ডের বিষয়টি সবাই কমবেশি জানত। একটা কথা তখন মুখস্থই বলে দিত, “চাঁদনী তো দেশেই নাই।” এটাকে পলিটিক্স বলে কি না, তা–ও আমি জানি না। দেখা হলেও সবার কাছে একটা কথাই শুনতাম, তুই তো দেশেই থাকিস না, তোকে নিয়ে ক্যামনে কাজ করব। অথচ এই আমি ১৯৯৯ সাল থেকে একটা ফোন নম্বরই ব্যবহার করছি, ব্যাপারটা এবার বুঝে নিতে পারেন। যদি কারও ইচ্ছা থাকে আমাকে নিয়ে কাজ করার, তাহলে তো আমাকে খুঁজে দেখতে পারেন ফোন নম্বর অন নাকি অফ!’


দেড় যুগ আগে মুক্তি পাওয়া ‘লালসালু’ ছবির জমিলা চরিত্রের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। এই চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের ভালোবাসা অর্জন করেন চাঁদনী। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জিতে নেন তিনি। পুরো নাম মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী। কিন্তু চাঁদনী নামে পরিচিতি পাওয়া এই নৃত্যশিল্পী, মডেল ও অভিনয়শিল্পী বিনোদন অঙ্গনে এখন অনেকটাই অনিয়মিত।


ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মায়ের সঙ্গে থাকেন। করোনার এই সময়ে নতুনভাবে নিজেকে নিয়ে ভাবছেন। চালু করেছেন ইউটিউব প্ল্যাটফর্মও। বললেন, ‘আমি এমনিতেই কাজ কমিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু নাচ নিয়ে আমার কিছু ভাবনা আছে। তাই এসব নিয়ে ভিন্নধর্মী কিছু করতে চাইছি।’

নতুনভাবে নিজেকে নিয়ে ভাবছেন চাঁদনী। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদনীর শুরু সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে। চলচ্চিত্র, নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র—তিন মাধ্যমেই শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন চাঁদনী। শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম সিনেমা‘দুখাই’। এরপর ‘দুর্জয়’ সিনেমায় শাবানার ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন। চাঁদনীর জীবনের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতিও আসে এই সিনেমা থেকেই। নাচ, বিজ্ঞাপনচিত্র আর টেলিভিশন নাটকেও ছিল সমান উপস্থিতি। অথচ সেই চাঁদনীকে এখন আর কোথাও দেখা যায় না।


বেলি কেডসের বিজ্ঞাপন নিশ্চয়ই চাঁদনীর কথা আপনাদের মনে করিয়ে দেবে। টেলিভিশন নাটক নিয়ে খুব একটা আগ্রহ না থাকলেও সিনেমার প্রতি একটা টান রয়েই গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি বাণিজ্যিক সিনেমায়ও কাজ করতে চাই। তবে পরিচালককেও আমার বুঝতে হবে। সিনেমার জন্য বলতে পারেন আমি স্ট্যান্ডবাই।’


ঢাকার অগ্রণী স্কুল থেকে এসএসসি, ভিকারুননিসা থেকে এইচএসসি ও সিটি কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন চাঁদনী। বললেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার নাচের প্রতি বেশি ঝোঁক। স্কুল থেকে বাসায় যাওয়ার পথে বৃষ্টি হলেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে নাচ শুরু করে দিতাম। সেই অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই এখন তো রাস্তায় সম্ভব নয়, ছাদে গিয়ে নাচ করি। এই নাচ নিয়ে আমার নতুন কিছু স্বপ্ন বাসা বেঁধেছে। সেটা নিয়ে এগোব। সঙ্গে অভিনয় চললেও চলতে পারে।’


কয়েক বছর আগেও যে চাঁদনীর ফোন নম্বর বন্ধ থাকত না, এখন মাঝেমধ্যে তা বন্ধ রাখেন। এখন আর আগের মতো কাজ করেন না, তাই নিজের মতো থাকতে চান। ফোন থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। তবে চাঁদনী জানালেন, ‘আমি কিন্তু দেশের বাইরে যখনই যেতাম, সব কাজ শেষ করেই যেতাম। কখনোই কারও কোনো কাজ ঝুলিয়ে রেখে দেশের বাইরে যাইনি।’

বিনোদন অঙ্গনে এখন অনেকটাই অনিয়মিত চাঁদনী। ছবি: সংগৃহীত

২০০৮ সালে চাঁদনী বিয়ে করেন গায়ক ও সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদারকে। এরপর থেকে নিজের ইচ্ছায় চাঁদনী অভিনয় কমিয়ে দেন। তবে নাচটা চালিয়ে যেতেন। চাঁদনীর ভাষায়, ‘আমি এমনিতেই নাটকের কাজ কম করতাম।’ আর ২০১১ সালের একটি ঘটনা চাঁদনীকে অভিনয়ের আগ্রহ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। বললেন, ‘২০১১ সালে একটা নাটকে অভিনয়ের দিন আমার শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমার কাছে ফোন আসে, কিন্তু শুটিংয়ের ব্যস্ততায় সঠিক সময়ে শাশুড়ির অসুস্থতার খবরটা জানতে পারিনি। এটা আমার ভেতরে একটা অপরাধবোধ তৈরি করে। কেন জানি এরপর নিজে থেকে নাটকে অভিনয় করতে ভালো লাগত না। সেই নাটকের শুটিং শেষ পর্যন্ত আমি শেষই করতে পারিনি। এরপর আমি কেমন যেন ব্ল্যাকআউট হয়ে যাই।’


অভিনয় কম করার অরেকটি কারণের কথা এভাবেই বললেন চাঁদনী, ‘আমার স্কুলিং রাইসুল ইসলাম আসাদের কাছে। তিনি বলেছিলেন, “দরকার হয় বছরে একটা কাজ করবে, না হলে করার দরকার নেই।” সেই কথাই এখনো আমি মেনে চলছি। ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি।’


গ্রিন কার্ড পাওয়াটা এতটা বিপত্তির হবে জানতেন? চাঁদনী বললেন, ‘গ্রিন কার্ড কিন্তু আমি ইচ্ছা করে নিইনি। কপালগুণে পেয়েছি। দাদি ও চাচা আমেরিকায় থাকতেন। তাঁদের কারণে পারিবারিকভাবে আমি পাই। তখন কয়েক মাস করে সেখানে থাকতে হতো। এতে অনেকেরই সুযোগ–সুবিধা হয়ে গেছিল। পরে তো আরও অনেক সুযোগ–সুবিধা হয়, যখন শুনে যে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি। আমি বিয়ের পর কাজ কমিয়ে দিই। তবে স্বামীর বরাবরই উৎসাহ ছিল। অভিনয় না করলেও নাচটা করতাম।’


বছর দুয়েক আগে এক দশকের সংসারজীবনের ইতি টানেন চাঁদনী। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। আবার নতুনভাবে বিয়ে করে সংসারী হতে চান কি না এমন প্রশ্নে জানালেন, ‘আমার নিজের কোনো আগ্রহ নেই। তবে মা চাইছেন, আমি যেন আবার সংসারী হই। এটা সৃষ্টিকর্তার ওপরই ছেড়ে দিয়েছি।’


সংসার ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় নিয়ে খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ না করলেও চলচ্চিত্র আর নাচ নিয়ে বেশ আগ্রহী চাঁদনী। জানালেন, ভালো গল্পের ছবি আর ভিন্নধর্মী কিছু নাচের কম্পোজিশন নিয়ে ভাবছেন।