এসব নাটকে উঠে আসছে বর্তমান সময়ের পারিবারিক নানা গল্প
এসব নাটকে উঠে আসছে বর্তমান সময়ের পারিবারিক নানা গল্প

ফিরতে শুরু করেছে পরিবারের সদস্যরা

কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক নাটকে উপেক্ষিত ছিল পারিবারিক গল্প। কিছুকাল আগেও টিভি নাটকে দেখা যেত না দাদা-দাদি, মা-বাবা, ভাই-বোন, চাচা-চাচি, ফুফু, মামা, খালা, দুলাভাই, ভাতিজি–ভাতিজাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের। এ নিয়ে দর্শকদের মতো আক্ষেপ ছিল অভিনয়শিল্পীদেরও। তাঁরা মনে করেন, বাঙালি পরিবার অন্তঃপ্রাণ জাতি। অথচ নাটক থেকে পরিবার হারিয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই দর্শক হারাচ্ছিল নাটক। আশার কথা হচ্ছে, নাটকে আবার ফিরতে শুরু করেছে পরিবারের হারিয়ে যাওয়া সদস্যরা। এসব নাটকে উঠে আসছে বর্তমান সময়ের পারিবারিক নানা গল্প। তাতে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন নাটকের মানুষেরা।

কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক নাটকে উপেক্ষিত ছিল পারিবারিক গল্প

‘ফ্যামিলি’ নিয়ে নাটকের যেন জোয়ার শুরু হয়ে গেছে। শুধু পারিবারিক গল্পই নয়, একই সঙ্গে বেশ কিছু নাটকের নামের সঙ্গে ‘ফ্যামিলি’ বা ‘পরিবার’ শব্দ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’, ‘জয়েন্ট ফ্যামিলি’, ‘ফ্যামিলি ফ্যান্টাসি’, ‘ফ্যামিলি প্রবলেম’, ‘ফ্রেন্ডস ফ্যামিলি’, ‘পরিবার দ্য ফ্যামিলি’, ‘হইচই পরিবার’সহ বেশ কিছু নাটক। এ ছাড়া আমাদের বাড়ী, মা-বাবা-ভাইবোনসহ আরও কিছু নাটকে দেখা যাবে বাঙালি পরিবারের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার গল্প।

‘ফ্যামিলি’ নিয়ে নাটকের যেন জোয়ার শুরু হয়ে গেছে

পরিবারকেন্দ্রিক নাটক কমে যাওয়া প্রসঙ্গে অভিনেতা আবুল হায়াত বলেছিলেন, ‘রাস্তাঘাটে বের হলেই শুনতে হয়, “ভাই, আমাদের ছেলেমেয়েদের কি মা-বাপ নেই? আমাদের ছেলেমেয়েরা কি এতিম?” পরিবারে বৃদ্ধদের চরিত্র না থাকায় তখন অভিনয়েও ব্যস্ততা কমে যাচ্ছিল।’ পরিবারকেন্দ্রিক নাটকের গুরুত্ব নিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ পারিবারিক নাটক পছন্দ করেন। করোনার শুরুর দিকে দেখা গেছে, দু–তিন যুগ আগের নাটকগুলো পুনঃপ্রচার হচ্ছে। তখনো দর্শক নাটকগুলো দেখেছেন। বর্তমানে আমরা পরিবার থেকে সরে যাচ্ছি। পারিবারিক জীবনের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ ছিল, সেটা আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল।’

‘বহুব্রীহি’সহ বহু নাটক ছিল পারিবারিক গল্প নিয়ে।

‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘এইসব দিন রাত্রি’, ‘একান্নবর্তী’, ‘সিক্সটি নাইন’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আমাদের বাড়ি’, ‘আনন্দবাড়ি’, ‘ফিফটি ফিফটি’সহ বহু নাটক ছিল পারিবারিক গল্প নিয়ে। নাটকগুলো লুফে নিয়েছিলেন দর্শক। এক যুগের বেশি সময় ধরে পরিবারকেন্দ্রিক নাটক কমতে থাকে। কিছু নাটক বানানো হলেও সেসব দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে পারেনি। ২০১৪ সাল থেকে ইউটিউব ভিউর কথা মাথায় রেখে পরিবারকেন্দ্রিক নাটক নির্মাণে উৎসাহ আরও কমে যায় বলে মনে করেন পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ। পরে তিনি নিজেই উপলব্ধি করেন, শৈশব-কৈশোরে পরিবারের সঙ্গে দেখা পারিবারিক গল্পের নাটক নির্মাণ জরুরি। এটাই আসলে আমাদের গল্প। তখন তিনি শুরু করেন ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে যখন পারিবারিক গল্প নিয়ে ধারাবাহিকটি শুরু করি, তখন পরিবার নিয়ে বলার মতো সেভাবে কোনো নাটকই ছিল না। এখন আবার দর্শক পরিবারকেন্দ্রিক নাটক দেখতে চাইছেন। দিন শেষে পরিবারই আমাদের মূল। সেই জায়গায় বিশাল একটা ঘাটতি ছিল। বাজেট কমার কারণেই পারিবারিক নাটক কমে গিয়েছিল। নগরে জীবনযাপনের কারণে আমরা পরিবারের সম্পর্কগুলোই ভুলতে বসেছিলাম।’ দর্শকপ্রিয় হওয়ায় ফ্যামিলি ক্রাইসিস-এর দ্বিতীয় কিস্তি নির্মাণ শুরু করেছেন।

‘পুতুপুতু’ প্রেমের গল্প থেকে নাটক বেরিয়ে আসছে। একে সুখবর বলে অভিহিত করেছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম

‘পুতুপুতু’ প্রেমের গল্প থেকে নাটক বেরিয়ে আসছে। একে সুখবর বলে অভিহিত করেছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেন, ‘নাটক দেশের সংস্কৃতির অংশ। দর্শক নাটকে পরিবার দেখতে চায়। নাটকের সামাজিক চরিত্রগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল। সেখানে ২০২১ সালকে আমি বলব নাটকের টার্নিং পয়েন্ট। ওয়েব সিরিজ, ফিল্ম, ওটিটির বাইরে ধারাবাহিক নাটক নিয়ে টেলিভিশনের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।’

রাফাত মজুমদার পরিচালিত ‘জয়েন্ট ফ্যামিলি’ নাটকের শুটিংয়ের বিরতির ফাঁকে মনিরা মিঠু, তৌসিফ, কেয়া পায়েলসহ একাধিক অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে নাচতে দেখা গেল প্রবীণ অভিনেত্রী দিলারা জামানকে। তিনি বলেন, ‘শেষ কবে একসঙ্গে ১৫–২০ জন অভিনয় করেছি, মনে পড়ে না। আমাদের এই নাটকে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের চরিত্র আছে। গল্পে পরিবারের প্রতি ভালোবাসা, মায়া, ত্যাগ, অন্যের পাশে দাঁড়ানো, কেউ একাই সবকিছু নয়; সেই বিষয়গুলো দেখানো হয়েছে। যান্ত্রিক জীবন থেকে যে আবেগগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল, সেগুলোই এ গল্পে দেখা যাবে।’

‘শেষ কবে একসঙ্গে ১৫–২০ জন অভিনয় করেছি, মনে পড়ে না’–দিলারা জামান