Thank you for trying Sticky AMP!!

আলী যাকের

বনানী কবরস্থানে সমাহিত আলী যাকের

প্রায় ৫০ বছরের মঞ্চজীবন আলী যাকেরের। অভিনয় করেছেন ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, ‘গ্যালিলিও গ্যালিলি’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্‌সা’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লিতে’, ‘বাকি ইতিহাস’-এর মতো নাটকগুলোতে। শুরুটা ১৯৭২ সালে। আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে মঞ্চস্থ নাটকটি টিভিতে সরাসরি প্রচারিত হয়েছিল। ‘কবর’ নাটকটিই তাঁর টেলিভিশন এবং মঞ্চে প্রথম নাটক। মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রে এক বর্ণাঢ্য জীবন কাটিয়ে আজ অগ্রহায়ণের শেষ বিকেলে বনানী কবরস্থানেই তাঁর শেষ ঠিকানা হয়।

বনানী কবরস্থানে সমাহিত আলী যাকের

বিকেলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বনানী কবরস্থানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকেরের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং জানাজায় অংশ নেন। এ সময় সেখানে সাংসদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, অনুস্বর নাট্যদলের প্রধান মোহাম্মদ বারী, নির্দেশক পান্থ শাহরিয়ার, সুবচন নাট্য সংসদের দলনেতা আহম্মেদ গিয়াসসহ নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, আলী যাকেরের কর্মস্থল বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ক্যানসার ও করোনাযুদ্ধে হেরে গেলেন বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের। প্রায় চার বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। সম্প্রতি শরীরের অবনতি হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিছুটা সুস্থ হলে বাসায় নেওয়া হয়। তবে আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দুদিন আগে করোনা টেস্ট করা হলে পজিটিভ ফল আসে।

আলী যাকের

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে রাখা হয়। সেখানে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। স্বজন ও সংগঠনগুলো সেখানে ফুলেল শ্রদ্ধা ও শেষ বিদায় জানান তাঁকে। প্রিয়জন, সহশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, মফিদুল হক, নাসির উদ্দীন ইউসুফ প্রমুখ।

কফিনের পাশে সারা যাকের, মামুনুর রশীদ, ইরেশ যাকের এবং আসাদুজ্জামান নূর।

পরিবারের পক্ষে তাঁর মরদেহের পাশে উপস্থিত রয়েছেন তাঁর স্ত্রী সারা যাকের, ছেলে নাট্যাভিনেতা ইরেশ যাকের, মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়া।

সারাক্ষণ কফিনের পাশে ছিলেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

দেওয়ান গাজীর কিস্‌সা

বেলা একটার দিকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আলী যাকেরের কর্মস্থল বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিকের অফিসে। সেখানে কিছুক্ষণ রেখে নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থান মসজিদে। বাদ আসর জানাজা শেষে দাফনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামে। আলী যাকের ছিলেন চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। তাঁর বাবা মোহাম্মদ তাহের ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। বাবার চাকরির বদলি সূত্রে অল্প বয়সে কুষ্টিয়া ও মাদারীপুরে কাটান আলী যাকের।

আলী যাকের

আলী যাকের ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ওই বছরের জুন মাসে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। তখন থেকে নাগরিকই তাঁর ঠিকানা। ‘বাকি ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্‌সা’, ‘কোপেনিকের ক্যাপটেন’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ম্যাকবেথ’সহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকের অভিনেতা ও নির্দেশক তিনি।

মঞ্চে নাটকে,স্ত্রী সারা যাকেরসহ

পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও তিনি পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর’, ‘দেয়াল’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আলী যাকের। বেতারে ৫০টির বেশি নাটক করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। শখ করে ফটোগ্রাফিও করেন তিনি। আলী যাকের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি তিনি। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পূর্ণ সদস্য। পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৯-তে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেতা আলী যাকের।

নাটকের দৃশ্যে

বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি গ্রুপের চেয়ারম্যান তিনি। স্ত্রী স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পী সারা যাকের, ছেলে অভিনেতা ইরেশ যাকের, ছেলের বউ মিম রশিদ, নাতনি নেহা ও মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়াকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। সব ছেড়ে এখন এখন তাঁর ঠিকানা হয়েছে বনানী কবরস্থানের মাটির বিছানা।