Thank you for trying Sticky AMP!!

বিত্তবান শিল্পী-কুশলীরা অবশ্যই এগিয়ে আসবেন

অভিনেতা, নির্দেশক, নাট্যকার মামুনুর রশীদ

দেশের অগণিত নাগরিকের মতোই আমরা ঘরের মধ্যে এক অভূতপূর্ব পরিবেশে বসবাস করছি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকার জন্য অপেক্ষা, তারপর টেলিভিশনে সর্বশেষ সংবাদটি দেখছি। প্রতিবারই আকাঙ্ক্ষা একটাই—যেন করোনাভাইরাস আর না ছড়ায়। মানুষ যেন আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থা থেকে ফিরে আসে। কিন্তু দুঃসংবাদ বাড়ছেই। পশ্চিমা পৃথিবী বেশি আক্রান্ত, আমরা সে তুলনায় অনেক কম আক্রান্ত। কিন্তু আজকেই (রোববার) খবর পেলাম, ১৮ জন আক্রান্ত হয়ে গেছে। এই সংখ্যা অবশ্যই অতীতের চেয়ে বেশি।

গতকাল (শনিবার) থেকে আবার হাজার হাজার পোশাককর্মী ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। করোনার বিধিনিষেধ মানবারও তাঁদের উপায় নেই। কারণ, একদিকে ছুটি, অন্যদিকে যানবাহন বন্ধ, তার মধ্যেই কাজে যোগ দিতে হবে। আবার এত কষ্ট করে কাজে ফিরে আসার পর জানা যাচ্ছে, ১৪ তারিখ পর্যন্ত ছুটি। এ এক মহাবিড়ম্বনা ও গার্মেন্টস মালিকদের দায়িত্বহীনতা। গত মাসের বেতনও মিলছে না। এই ঠাসাঠাসি করে ফেরার পথে যদি কোথাও সংক্রমণ ঘটে, তাহলে তা এক মহাসংকটের ব্যাপার।

ঈদের সময় প্রায়শই বেতন-বোনাস নিয়ে বিভ্রাট ঘটে, কিন্তু এ ধরনের সংকটে তো একেবারেই কাম্য নয় এবং অমানবিকও বটে। এই অবস্থা দ্রুতই সামাল দেওয়া জরুরি। শুধু আমাদের জীবদ্দশায় নয়, আমাদের আগের, তারও আগের এমনকি তারও আগের প্রজন্মও এ ধরনের বাস্তবতার সম্মুখীন হননি কখনো। তাঁরা যুদ্ধ দেখেছেন, মহামারি দেখেছেন, কিন্তু শুধু আত্মরক্ষার জন্য এমন পরিস্থিতি দেখেননি কখনো। চিকিৎসক, বিজ্ঞানীরাও দেখেননি। এই অবস্থায় আত্মরক্ষার জন্য যেসব পথ তাঁরা দেখাচ্ছেন, তাই অনুসরণ করা ছাড়া আমাদের কোনো দ্বিতীয় পথ খোলা নেই। ঘন ঘন হাত ধোয়া, বিশেষ কারণ ছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা না করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার যেসব নির্দেশ এবং নিয়মের কথা বলছেন, তা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেই আমাদের আত্মরক্ষার কাজটি হবে। কিন্তু যাঁরা আমাদের জন্য অন্ন জোগান, কায়িক শ্রম করে আমাদের জীবনকে নির্বিঘ্ন করেন, তাঁদের কথাও ভাবা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের শুটিংয়ে যে প্রোডাকশন বয়টি অথবা আলোক প্রক্ষেপণের জন্য যে কঠিন পরিশ্রমটি করে থাকেন, তাঁর কী হবে? তিনি তো দিনমজুরের মতো পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। যাঁদের বিত্ত রয়েছে, এঁদের সঙ্গে কাজ করে, তাঁদেরও একটা বড় দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ব পালনে আশা করি বিত্তবান শিল্পী-কুশলীরা অবশ্যই এগিয়ে আসবেন।

আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সরকারও বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে এবং সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। করোনাভাইরাস কোনো শ্রেণিই মানছে না। ধনী-দরিদ্র—সবাই তার কাছে সমান। তাই শ্রমজীবী মানুষদেরও আত্মরক্ষার অনুশাসন মানতেই হবে। এই অনুশাসনগুলো মানলে ভবিষ্যতের জন্যও অনেক সুবিধা আছে। এসব যদি অভ্যাসের মধ্যে চলে আসে, তাহলে একটি আদর্শ ও পরিচ্ছন্ন জাতি হিসেবে আমরা দাঁড়াতে পারব। পরিচ্ছন্নতার কারণেই পরিবেশবাদী দেশ ভুটান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে আছে।

আমরাও সেদিক দিয়ে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এখনো ভালো আছি। কিন্তু এই ভালো ভালো নয়, শেষ পর্যন্ত ভালো থাকতে হবে। আমি দেখেছি, অনেক গাড়িচালক এবং শ্রমজীবী মানুষও এসব অনুশাসন মেনে চলছেন। পোশাকশ্রমিকেরা সবাই সচেতন; কারণ, কারখানার অনুশাসন তাঁরা সব সময়ই মেনে চলেন। সেভাবেই যদি তাঁরাও এসব অনুশাসন মেনে চলেন, তাহলে এই বিশ্ব মহামারির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। করোনাভাইরাস একেবারেই আমাদের কাছে অচেনা। কখন যে কে সংক্রমিত হবেন, তার কোনো ঠিক নেই। যেকোনো সময় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই নিজেদের এবং জাতিকে রক্ষা করা সম্ভব।
লেখক: অভিনেতা, নির্দেশক, নাট্যকার।